বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কুরআন তিলাওয়াত মু’মিনের বড় ইবাদত- জুমার বয়ানে পেশ ইমাম

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৩:৫৯ পিএম

নবী করীম (সা.) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ঐ ব্যক্তি যে কুরআন শরীফ শিক্ষা করে এবং অন্যকে শিক্ষা দেয়। (সহীহ বুখারী হাদিস নং- ৫০২৭)। কুরআন তিলাওয়াত একজন মু’মিনের জন্য বড় ইবাদত। আসন্ন কুরআন নাযিলের মাস মাহে রমযানে বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করতে হবে। আজ বিভিন্ন মসজিদে জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে পেশ ইমামরা এসব কথা বলেন। কোভিড-১৯ মহামারি দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নেয়ার জন্য পেশ ইমামরা মহান আল্লাহর কাছে দু’আ করেন। নগরীর মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজম কমপ্লেক্সে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে।

ঢাকার উত্তরা সেক্টর-৩ মসজিদ আল মাগফিরাহ’র খতিব মুফতি ওয়াহিদুল আলম আজ খুৎবাপূর্ব বয়ানে বলেন, নবী করীম (সা.) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ঐ ব্যক্তি যে কুরআন শরীফ শিক্ষা করে এবং অন্যকে শিক্ষা দেয়। (সহীহ বুখারী হাদিস নং- ৫০২৭)।

পেশ ইমাম বলেন, আর দেড় মাস পরেই আসছে মহা-গ্রন্থ কুরআনুল কারীম অবতীর্ণ হওয়ার মুবারক রমযান মাস। কুরআন নাযিলের মাসের যথাযোগ্য মর্যাদা প্রদান ও বরকত হাসীলের জন্য দু’মাস পূর্ব থেকে নবী করীম (সা.) দু’আ করতেন। হে আল্লাহ! রজব ও সাবান মাসে আমাদের জন্য বরকত দিন এবং রমযান শরীফ পর্যন্ত আমাদেরকে পৌঁছে দিন। (কানযুল উম্মাল- হাদিস নং ৩৮২৮৮)।
তিনি বলেন, কুরআন তিলাওয়াত একজন মু’মিনের জন্য বড় ইবাদত। কুরআন তিলাওয়াত দুনিয়ার জীবনে রহমত, বরকত, সমৃৃদ্ধি, প্রবৃদ্ধি, আতœশুদ্ধি, আতœার প্রশান্তি, অন্তরের ময়লা পরিস্কার ও সর্বোপরি মহান আল্লাহর গভীর ভালোবাসা স্থাপনের চূড়ান্ত মাধ্যম। কুরআন তার তিলাওয়াতকারীকে কবরে ফেরেশতাদের প্রশ্নের জবাব দিতে সাহায্য করবে। হাশরে সুপারিশ করে জান্নাতে পৌঁছে দিবে। কুরআন শরীফ শুদ্ধভাবে তিলাওয়াত করা প্রতিটি মু’মিনের জন্য ফরয। অশুদ্ধ তিলাওয়াত কারীকে কুরআন অভিশাপ দেয়। অশুদ্ধ তিলাওয়াত দ্বারা নামায সহীহ হয় না। একটি আয়াত শুদ্ধভাবে শিখলে ১০০ রাকাআত কবুল নামাযের চেয়ে বেশি ছওয়াব হয় এবং প্রতিটি হরফ তিলাওয়াতে দশটি নেকী হয়।

তিনি বলেন, আল্লাহ তা’য়ালা কুরআনকে আমাদের জন্য সহজ করে দিয়েছেন। অথচ এই কুরআন শিখতে সময় ব্যয় না করে আমরা ফেইসবুক, ইউটিউব, টেলিভিশন, বাজে গল্প, গীবত ও মানুষের দোষ চর্চার পেছনে অনেক সময় দিয়ে থাকি, এই উদাসীনতাই ক্বিয়ামতের দিন আমাদের বড়ই আফসোসের কারণ হবে।

তাই অভিজ্ঞ ক্বারীদের নিকট বিশুদ্ধ কুরআন তিলাওয়াত শিখতে হবে। আর কুরআনের আলোকেই জীবন গড়তে হবে। আল্লাহ সবাইকে কবুল করুন। আমীন!

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেম আজ জুমার বয়ানে বলেন, রাগ দমন করা তাকওয়ার আলামত। যারা মুত্তাক্বি, তাদের অন্যতম একটি আলামত হলো রাগকে সংবরণ করা। মহান রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘(মুত্তাক্বি) যারা নিজেদের রাগকে সংবরণ করে আর ক্ষমা প্রদর্শন করে, বস্তুত আল্লাহ তায়ালা সৎকর্মশীলদেরকেই ভালোবাসেন। (সূরা আল ইমরান-১৩৪)। অন্যত্র মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ভালো ও মন্দ সমান নয়। (মন্দের) মোকাবেল সেই পন্থায় করুন, যা উত্তম। তাহলে শত্রæ ও আপনার মাঝ থেকে শত্রæতা দূর হয়ে, পরস্পর অন্তরঙ্গ বন্ধুতে পরিণত হবেন। (সূরা হা-মীম আসসাজদা-৩৪)। রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রাগ ঈমানকে বিনষ্ট করে দেয়, সাবির গাছের তিক্ত রস যেমন মধুকে বিনষ্ট করে দেয়। (মেশকাত)।
পেশ ইমাম বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি রাগের চাহিদা মিটানোর সুযোগ থাকা সত্বেও (একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য) রাগকে হজম করবে, হাশরের ময়দানে আল্লাহ তায়ালা তাকে সমস্ত মাখলুকের সামনে ডাকবেন এবং ঘোষনা দিবেন যাও! জান্নাতের হুরদের মাঝে যাকে চাও নিয়ে নাও। (তিরমিযী ও আবু দাউদ)।

রাসুলে কারীম(সা.) ইরশাদ করেছেন, "সদকা করলে সম্পদের ঘাটতি হয় না। যে ব্যক্তি ক্ষমা করে, আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। আর কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিনয়ী হলে, তিনি তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। (মুসলিম, হাদিস: ২৫৮৮)। পেশ ইমাম বলেন, উদারতা ও সহিষ্ণুতা মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এসব গুনাবলী অর্জনে সজাগ থাকতে হবে। সুতরাং আসুন আমরা মানুষকে ক্ষমা করি। যাতে করে কেয়ামতের ভয়াবহ দিনে রব্বে কারীম আমাদের ক্ষমা করে দেন।

ভোলা জেলার সদর উকিলপাড়াস্থ নিজাম হাসিনা ফাউন্ডেশন মসজিদের খতিব মাওলানা এ কে এম মোশাররফ হুসাইন আজ জুমার বয়ানে বলেন, আমরা সবাই একমাত্র আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করি এবং তারই বিধান মেনে চলি, আল্লাহ তায়ালার নেজাম অনুযায়ী সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে একের উপরে আর একের মর্যাদা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, যেমন দুনিয়ার উপরে আখেরাতের মর্যাদা, সমস্ত নবীদের উপর সাইয়্যেদেনা মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.) এর মর্যাদা, সমস্ত মানুষের মধ্যে পাপিষ্টদের উপর মুমিনের মর্যাদা, সাধারণ মুমিনদের উপর সাহাবায়ে কেরামের মর্যাদা, এমনিভাবে স্থান,কাল, পাত্র ভেদে একের উপর আর একের মর্যাদা, যেমন সমস্ত রাতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ রাত লাইলাতুল কদর, দিনের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন আরাফার দিন, জুমার দিন, দুই ঈদের দিন, সপ্তাহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ইয়াওমুল জুময়া, মাসের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মাস মাহে রমযান। এছাড়া আরো চারটি মাসকে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা সম্মানিত করেছেন, যেমন আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে আল্লাহর বিধান ও গননায় মাস বারটি। তন্মধ্যে চারটি সম্মানিত। (জিলকদ, জিলহজ্জ, মুহররম, রজব) (সূরা তওবা:৩৬)। স্থান হিসেবে সমস্ত পৃথিবীর মধ্যে মক্কার মর্যাদা এরপর মদিনা মুনাওয়ারার মর্যাদা এরপরে বায়তুল মুকাদ্দাসের মর্যাদা। তাই আল্লাহ তায়ালার দেয়া সম্মান ও মর্যাদার প্রতি সম্মান দেখিয়ে আমরাও মর্যাদাপূর্ণ সময় রাত, দিন, মাস, স্থান ও মহান ব্যক্তিদের সম্মান দেব এবং আল্লাহ তায়ালার দেয়া রহমত ও বরকতের ভাগীদার হবো। ইনশা আল্লাহ।

ঢাকার ইসলামবাগ বড় মসজিদের খতিব শাইখুল হাদীস মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী জুমার খুৎবাপূর্ব বক্তব্যে পবিত্র কুরআনের সুরা কাসাসের ৭নং আয়াতের মর্মার্থ প্রসঙ্গে বলেন, এই আয়াতে মহান আল্লাহর বিস্ময়কর ক্ষমতা ও তাঁর রুবূবিয়্যাতের প্রকৃষ্ট প্রমাণ উপস্থাপিত হয়েছে। আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি মূসা জননীকে প্রত্যাদেশ করলাম যে, তুমি তাকে দুগ্ধ পান করাতে থাক। অতঃপর তার সম্পর্কে যখন তুমি বিপদের আশঙ্কা করবে তখন তাকে সাগরে ভাসিয়ে দাও এবং ভয় করোনা,দঃখও করোনা। আমি অবশ্যই তাকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দেব এবং তাকে রাসুলগণের অন্তর্ভূক্ত করবো। এতে মূলতঃ হযরত মূসা (আঃ) এর জন্ম পরবর্তী প্রতিকূল পরিস্থিততে শিশু মূসা (আঃ) এর সুরক্ষার এক অসাধারণ ও বিস্ময়কর আদেশ প্রদান করা হয়েছে এবং খোদায়ী এ আদেশ পালন করে শতভাগ সুফলও এসেছে। এখানে প্রমাণিত হয় যে, একটি নবজাতককে সিন্দুকে ভরে নীল নদে ফেলে দিয়ে সময় মত ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যিনি ফেরত দিয়েছেন এবং রাসুলও বানিয়েছেন তিনিই রব। তিনিই সর্বশক্তিমান। তাঁর ইচ্ছা ও ফয়সালাকে প্রতিহত করার সাধ্য পৃথিবীর কারো নেই। যে শিশুটিকে হত্যা করার জন্য হাজার হাজার শিশু সন্তানকে হত্যা করেছে ফেরআউন ও তার সৈন্যবাহিনী, সে শিশুটিই আবার নীল নদ থেকে গিয়ে উঠে ফেরআউনের রাজপ্রাসাদে এবং পরম আদর ও স্নেহে প্রতিপালিত হতে থাকে ফেরআউনেরই তত্ত¡বাবধানে। মহান আল্লাহর কি অদ্ভূত কারিশমা! হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে বুঝার ও মানার তৌফিক দাও। আমীন!

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন