শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বাড়ছে সেশনজট উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থীরা

ক্লাস-পরীক্ষার দাবিতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০২ এএম

প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘ প্রায় এক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সংক্রমণ এড়াতে ক্লাসের পাশাপাশি নেয়া হয়নি কোন পাবলিক পরীক্ষাও। এইচএসসি ও অন্যান্য শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ছাড়াই উত্তীর্ণ ঘোষণা করলেও এই একবছরে আগের অবস্থানেই আটকে আছেন উচ্চ শিক্ষার্থীরা। ক্লাস-পরীক্ষা না হওয়ায় দীর্ঘ সেশনজটে পড়েছেন তারা। যদিও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বছরের শুরুতে পরীক্ষার সূচি প্রকাশ করেছিল কিন্তু সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে এসব পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণার পর উদ্বেগ, হতাশায় বাধ্য হয়ে পরীক্ষার দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। রাস্তা অবরোধ ও অবস্থান করে পরীক্ষার দাবি আদায় করে নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীভুক্ত সাত কলেজ। বাকীরাও প্রস্তুতি নিচ্ছেন বড় জমায়েতের।

জানা যায়, গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণার পর এপ্রিল থেকেই অনলাইনে ক্লাস শুরু করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। আর মে মাস থেকে অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণেরও অনুমতি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এমনকি আরো কিছুদিন পর থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরাসরি ব্যাবহারিক পরীক্ষা গ্রহণেরও অনুমতি দেওয়া হয়। জুন মাস থেকে অনলাইনে ক্লাস শুরু করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। চলতি বছরের শুরু থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজে পরীক্ষা গ্রহণ শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে সেশনজট কমিয়ে আনার একটা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল।

তবে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়ে দেন ১৭ মে’র হল খোলা যাবে না এবং ২৪ মে’র আগে কোন ক্লাস-পরীক্ষা গ্রহণ করা যাবে না। ইতোপূর্বে যেসব পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছিল সেগুলোও স্থগিত ঘোষণা করা হয় ওই সংবাদ সম্মেলনে। ফলে তিন মাসের জন্য আটকে যায় সরকারি-বেসরকারি সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা। গত একবছরের সেশনজটের সাথে নতুন সিদ্ধান্তের কারণে শিক্ষার্থীরা আরও ৬ মাসের সেশনজটে পড়তে যাচ্ছেন বলে মনে করেন তারা। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, তিন মাস পরীক্ষা স্থগিত থাকায় হাজার হাজার পরীক্ষা আটকে যাবে। শিক্ষার্থীতে আটকে থাকতে হবে আগের ক্লাসেই। ¯œাতক চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা পারবেন না চাকরির আবেদন করতে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে একাধিক পরীক্ষা চলমান ছিল। আগামী মার্চ থেকেও আরো একাধিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল, যা ফের আটকে গেল। এর মধ্যে মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষা, ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষ, অনার্স চতুর্থ বর্ষ, বিভিন্ন প্রফেশনাল পরীক্ষা, ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষ, মাস্টার্স প্রিলিমিনারি অন্যতম। এই বিশ্ববিদ্যালয়েই বছরে প্রায় ৪০০ ধরনের পরীক্ষা নেওয়া হয়। এর সবটাই প্রায় আটকা পড়ে গেল।
শিক্ষা মন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের পর পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে সোমবার সন্ধ্যা থেকেই আন্দোলন শুরু করেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের মুখে বুধবার তাদের পরীক্ষা পুনরায় গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত জানান শিক্ষামন্ত্রী। তবে অন্যদের পরীক্ষা আগের মতোই স্থগিত রাখা হয়।

এদিকে সাত কলেজের পরীক্ষা গ্রহণ ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা স্থগিত রাখায় বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন হোম ইকোনমিক্স কলেজের শিক্ষার্থীরা, আর শাহবাগে অবস্থান নেয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রাজশাহী, কুমিল্লা, নেত্রকোণা, কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। তারা পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত বাতিল করে পুনরায় পরীক্ষা গ্রহণ করার দাবি জানান। অন্যত্থায় আগামীকাল রোববার থেকে কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় চলমান পরীক্ষাগুলোর যে নতুন রুটিন প্রকাশ করেছে, তা আমরা মানি না। আমরা মার্চের মধ্যে পরীক্ষা চাই। আমাদের দাবি না মানা হলে আগামী রোববার সারা দেশে আমরা কঠোর কর্মসূচি পালন করব। আমাদের পরীক্ষাগুলো ফেব্রæয়ারির শেষ বা মার্চের প্রথম থেকে শুরু করতে হবে। সাত কলেজের চলমান পরীক্ষা নেওয়া গেলে আমাদেরগুলো কেন নেওয়া যাবে না?

আল আমিন নামে আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থী বলেন, চলমান পরীক্ষাগুলোর নতুন রুটিন প্রকাশ করা না হলে রোববার সারা দেশব্যাপী আমরা কঠোর আন্দোলনের ডাক দেব।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাকিব হাসান বলেন, আমাদের পরীক্ষা কয়েকটা শেষ হয়েছে। আরও চারটা পরীক্ষা বাকি আছে। পরীক্ষার জন্য আমরা অনেকে এই মহামারীর মধ্যে প্রত্যন্ত এলাকা থেকে ঢাকায় এসে মেসে উঠেছি। অনেকেই আর্থিক সঙ্কটে আছে। এর মধ্যে এ ধরনের হঠকারী সিদ্ধান্ত আমরা মেনে নেব না।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষার্থীরা বলছেন, রাজধানীর সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা যদি হোস্টেলে না থেকে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেন, তাহলে আমাদের পরীক্ষা নিতে সমস্যা কোথায়? আর পরীক্ষা যদি বন্ধই করবে, তাহলে ১০ মাস পর পরীক্ষা শুরুই বা করা হলো কেন? সাত কলেজকে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দিলে অন্যদেরও দিতে হবে।
হোম ইকোনমিক্স কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবি, ২০১৯ সালে শেষ বর্ষের পরীক্ষা আজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণায় এসব পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়।
শারমীন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের ফোর্থ ইয়ারের পরীক্ষা প্রায় শেষ পর্যায়ে। এই পর্যায়ে এসে পরীক্ষা স্থগিত করে দেওয়ার কোনো মানে হয় না। ২০১৯ সালে যে পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল, তা এখনও আটকে আছে। আমরা আমাদের ক্যারিয়ার নিয়ে চরম হতাশা ও অনিশ্চয়তায় আছি। একটা পরীক্ষার জন্য কি আরও এক বছর নষ্ট করতে হবে।

এদিকে ১ মার্চ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খুলে দেয়ার দাবি জানিয়ে আল্টিমেটাম দিয়ে রেখেছে রাজশাহী, চট্টগ্রাম, ইসলামী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। জাহাঙ্গীরনগরে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের তালা ভেঙে ক্যাম্পাসেই অবস্থান নিয়েছে শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও শহীদুল্লাহ হলের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে তারা। পরবর্তীতে আবার হল ছেড়ে দেয় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর দ্রæততার সঙ্গে তাদের ক্লাস-পরীক্ষা শেষ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, আমরা এসএসসি ও এইচএসসির জন্য সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রকাশ করেছি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলারও সমস্ত প্রস্তুতি নিয়েছি। আমাদের জাতীয় পরামর্শক কমিটি রয়েছে, তাদের পরামর্শ আমরা নিচ্ছি। শনিবার আমাদের আন্ত:মন্ত্রণালয় সভা রয়েছে। সেদিন আমরা সিদ্ধান্ত নেব, নাকি আমাদের আরো কয়েক দিন সময় নিতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের এখানে করোনা পরিস্থিতি বর্তমানে ভালো অবস্থায় রয়েছে। সেটা যেন আমাদের কারণে খারাপ পরিস্থিতিতে না যায়, সেটাও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (10)
Md. Deluar Hossan ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:০৬ এএম says : 0
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া উচিত
Total Reply(0)
Md Rony ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:০৬ এএম says : 0
করোনা কালে সবকিছু স্বাভাবিক ভাবে চললে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও চলতে পারবে। অবিলম্বে স্থগিত পরিক্ষা নেওয়া হোক।
Total Reply(0)
Mohammad Safiul Rahman ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:১২ এএম says : 0
পরিবেশ সব টিক আছে, শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য অভাব।
Total Reply(0)
Jonayet Akon ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:১৪ এএম says : 0
যেহেতু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরিবেশ হয়নি, সেহেতু এসএসসি'21 ব্যাচের অটোপাসের যৌক্তিক দাবি মেনে নেয়া হোক
Total Reply(0)
Shaheen Hossain ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:১৫ এএম says : 0
অন্তত শিক্ষার্থী এবং তাদের পরিবারের মানসিক শান্তির কথা বিবেচনা করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করা উচিৎ বলে মনেকরি।
Total Reply(0)
Arafat Rahman ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:১৫ এএম says : 0
এখন খুলা ঠিক হবে না
Total Reply(0)
Parvej Seik ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:১৬ এএম says : 0
সভা, সমাবেশ, নির্বাচন, মিছিল, হরতাল সবই ঠিক আছে শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতে এ্যালার্জি....কত শত মেধা ঝরে গেছে তার খবর কে রাখে!
Total Reply(0)
মোঃ দুলাল মিয়া ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ২:০৮ এএম says : 0
দেশে শিক্ষিত হবার দরকার নেই শুধু রাজনৈতিক করলে সরকার খুশি। শিক্ষতে হলে সরকারের জন্য বিপদ।
Total Reply(0)
মোঃ দুলাল মিয়া ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ২:১৪ এএম says : 0
ক্ষমতা দখল করা সম্ভব হবে না যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়। সরকার শিক্ষা দীক্ষায় মনোযোগ দিবেনা ।
Total Reply(0)
Jack+Ali ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০৪ পিএম says : 0
They don't know how to rule a country, they only know how to destroy country.. O'Muslim wake up and install a Muslim leader who will rule by Qur'an as such all the problem will flee away from our Beloved Country, we will be able to live in peace, security with human dignity and there will be no more poor people and we never dependent on any country for any production and development.
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন