বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

আল কোরআন সর্বশ্রেষ্ঠ মুযিজা

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুনশী | প্রকাশের সময় : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

মহান রাব্বুল আলামীন সমগ্র মানবজাতির পথ প্রদর্শন ও হেদায়েতের জন্য ছোট বড় অনেক গ্রন্থ নবী ও রাসূলগণের ওপর নাযিল করেছেন। যাতে মানুষের আকীদা-বিশ্বাস ও আমল সঠিক হতে পারে এবং আল্লাহতায়ালার পছন্দনীয় পদ্ধতির ওপর জীবন ও জগতের যাবতীয় কর্ম সম্পাদন করতে পারে। অকাট্য দলিল ও প্রমাণদ্বারা প্রমাণিত সকল কিতাব ও সহীফার ওপর ঈমান আনয়ন অত্যাবশ্যক। এর অস্বীকৃতির দ্বারা ইসলামের সীমারেখা হতে বহিষ্কৃত হয়ে পড়ে। এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : তাঁরাই মুমিন যারা আপনার ওপর নাযিলকৃত ও আপনার পূর্বে নাযিলকৃত আসমানী কিতাবসমূহে বিশ্বাস করে এবং তাঁরা আখেরাতের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখে। (সূরা বাকারাহ : আয়াত-৪)।

আল্লাহতায়ালা আসমান থেকে যে সকল কিতাব ও সহীফা নাযিল করেছেন, তার সংখ্যা কোনো কোনো বর্ণনা অনুযায়ী একশত চারখানা। তন্মধ্যে চারখানা হলো বড় কিতাব। তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জিল, ও কোরআন। হযরত মূসা (আ:) ওপর তাওরাত অবতীর্ণ হয়। হযরত দাউদ (আ.) এর ওপর যাবুর নাযিল হয়। হযরত ঈসা (আ.)-এর ওপর ইঞ্জিল নাযিল হয়। আর হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর ওপর কোরআন নাযিল হয়। এই চারখানা কিতাবের মূল বৈশিষ্ট্যের স্বরূপ আল কোরআনে এভাবে বিবৃত হয়েছে। (ক) ইরশাদ হয়েছে : নিশ্চয় আমি তাওরাত অবতীর্ণ করেছি। তাতে রয়েছে হেদায়েত আর নূর। (সূরা মায়িদাহ : আয়াত-৪৪)

(খ) ইরশাদ হয়েছে : আর আমি দাউদ (আ.)-কে যাবুর কিতাব দিয়েছি। (সূরা নিসা : আয়াত-১৬৩)। (গ) ইরশাদ হয়েছে : তারপরেই আমি ঈসা বিন মারয়ামকে পাঠিয়েছি এবং তাকে দিয়েছি ইঞ্জিল কিতাব। (সূরা হাদীদ : আয়াত-২৭)। (ঘ) ইরশাদ হয়েছে : আমি আপনার মোহাম্মাদ (সা.)-এর নিকট সত্যসহকারে কিতাব (কোরআন) নাযিল করেছি, যা তার পূর্বের কিতাবের সত্যায়ন ও সংরক্ষণকারী। (সূরা মায়িদাহ : আয়াত-৪৮)।

বাকি ১০০ খানা সহীফা বা ছোট কিতাব কোন্ কোন্ নবী ও রাসূলগণের ওপর নাযিল হয়েছিল তৎসম্পর্কে ইমাম আবু মুঈন নাসাফী (রহ.) লিখেছেন যে, হযরত শীষ (আ.)-এর ওপর পঞ্চাশখানা সহীফা নাযিল হয়েছিল। হযরত ইদ্রিস (আ.)-এর ওপর ত্রিশখানা। হযরত ইব্রাহীম (আ.)-এর ওপর দশখানা। ফেরাউনের জলমগ্ন হওয়ার পূর্বে মূসা (আ.)-এর ওপর দশখানা সহীফা নাযিল হয়। অতঃপর হযরত মূসা (আ.)-এর ওপর তাওরাত নাযিল হয়। অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, দশখানা সহীফা হযরত আদম (আ.)-এর ওপর নাযিল হয়। দশখানা হযরত শীষ (আ.)-এর ওপর। ত্রিশখানা হযরত ইদরীস (আ.)-এর ওপর এবং দশখানা হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর ওপর নাযিল হয়।

মোদ্দাকথা হচ্ছে এই যে, ঊর্ধ্বজগত হতে অবতীর্ণ সকল কিতাব ও সহীফা সত্য। কিন্তু পরবর্তীতে লোকেরা এই কিতাবগুলোকে পরিবর্তন করেছে। সুতরাং বর্তমানে একমাত্র কোরআন মাজীদ ছাড়া অন্যান্য আসমানী কিতাব নিজের মৌলিক সঠিক ও অবিকৃত অবস্থায় পাওয়া যায় না, বা বিদ্যমান নেই। আল কোরআনে এর সুস্পষ্ট্য ঘোষণা পাওয়া যায়।

(ক) ইরশাদ হয়েছে : কিতাবধারীদের একটি শ্রেণি আল্লাহর কালাম শোনে। অতঃপর জেনে, বুঝে-শোনে, সজ্ঞানে তাতে বিকৃতি সাধন করে। (সূরা বাকারাহ : আয়াত-৮৫)। (খ) ইরশাদ হয়েছে : আহলে কিতাবগণ নিজ হাতে কিতাব লিখে ঘোষণা দেয় যে, এই কিতাব আল্লাহর নিকট হতে অবতীর্ণ। (সূরা বাকারাহ : আয়াত-৭৯)। এই নিরিখে স্পষ্টতই বলা যায় যে, বর্তমানকালের তাওরাত, ইঞ্জিল, যাবুর মূল আসমানী কিতাব নয়।

সুতরাং এ সকল কিতাবের বর্তমান বিদ্যমান সকল বাণীকে আল্লাহর বাণী বলে বিশ্বাস করা এবং এ কিতাবগুলোর সম্পূর্ণই আসল আসমানী কিতাব বলে আকীদাহ পোষণ করা কুফরী। এতদ প্রসঙ্গে পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : কিতাবধারীগণ আল্লাহর কিতাবকে পরিবর্তন করেছে, নিজ হাতে কিতাব রচনা করেছে আর বলেছে, এটা আল্লাহর নিকট থেকে অবতীর্ণ। (সহীহ বুখারী : ২/১০৯৪)।

তবে, কোরআন মজীদ বিকৃতি হতে পরিপূর্ণ সংরক্ষিত আছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকবে, কোরআন মজীদ বিকৃত হওয়ার বিশ্বাস করা কুফরী। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : নিশ্চয়ই কোরআন আমিই অবতীর্ণ করেছি। আর আমিই এর সংরক্ষণকারী। (সূরা হিজর : আয়াত-৯)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Md Anwar Ahmed ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ২:১৩ এএম says : 0
ইসলামের প্রাথমিক সপ্ত বিশ্বাসের অন্যতম প্রধান বিশ্বাস হলো আসমানি কিতাবে বিশ্বাস। আল্লাহ তাআলা মানুষের হিদায়াত বা পথনির্দেশনার জন্য কিতাব নাজিল করেছেন। মানবসভ্যতার উন্নতিতে আসমানি কিতাবের ভূমিকা অনন্য।
Total Reply(0)
Bazlur Rashid ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ২:১৫ এএম says : 0
মানব সভ্যতার ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ হলো আল-কোরআন। তার ভাষা, বর্ণ, বর্ণনা, সাহিত্য, উপমা, কাব্য ও গদ্যরীতি, রসবোধ পৃথিবীর সব গ্রন্থকে ছাড়িয়ে ছাপিয়ে। জগতের এ বইয়ের নির্মাতা স্বয়ং আল্লাহ। এবং তা অবতীর্ণও হয়েছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর।
Total Reply(0)
Jahidul Islam ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ২:১৫ এএম says : 0
পৃথিবীতে কোরআন একমাত্র গ্রন্থ; যার ব্যাপারে আল্লাহ চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন মানুষের প্রতি। কোরআন ছাড়া অদ্বিতীয় কোনো গ্রন্থের ব্যাপারে নির্ভুল বলে চ্যালেঞ্জ দেওয়া হয়নি। আল্লাহ বলেন, ‘এটা সেই গ্রন্থ যাতে কোনো সন্দেহ নেই। মুত্তাকিনদের জন্য এটা পথ নির্দেশ।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ০২)
Total Reply(0)
Delwar Khan ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ২:১৫ এএম says : 0
কোরআনের বর্ণ, শব্দ, ভাষা, রচনা শৈলী, উপমাতে আজ অবধি কোনো পরিবর্তন-পরিবর্ধন হয়নি। কিয়ামত পর্যন্ত এটি টিকে থাকবে এবং মানুষকে কল্যাণের পথ দেখাবে। রাসুল (সা.) বলেন ‘আমি তোমাদের মধ্যে এমন দুটি বিষয় রেখে যাচ্ছি যা আঁকড়ে থাকলে তোমরা কোনোদিন পথহারা হবে না। আর তাহলো আল্লাহর কোরআন এবং তার নবীর সুন্নত।’ (মুয়াত্তায়ে মালেক, হাদিস : ১৫৯৪)
Total Reply(0)
Umme Salma ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ২:১৬ এএম says : 0
মানব জীবনের সব বিষয়ের সুস্পষ্ট বর্ণনা দিয়েছে পবিত্র মহাগ্রন্থ আল-কোরআন। আল্লাহ বলেন ‘পরম করুণাময় তিনি, যিনি তার বান্দার প্রতি ফায়সালা গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছেন, যাতে সে বিশ্বজগতের জন্য সতর্ককারী হয়।’ (সুরা ফুরকান, আয়াত : ০১)
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন