শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দক্ষ জনশক্তি গড়তে প্রযুক্তি শিক্ষায় অগ্রাধিকার দিচ্ছি : প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১ মার্চ, ২০২১, ১২:০০ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে শিক্ষাকে বহুমাত্রিক করতে কাজ করছে। ‘সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ‘বহুমাত্রিক’ করে দিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, টেক্সটাইল, ডিজিটাল, প্রতিটি বিভাগে একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছি, ফ্যাশন ডিজাইন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে আধুনিক যুগে কী কী ধরনের বিষয় লাগে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে যাচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, আমরা মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়, এভিয়েশন এন্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় করেছি অর্থাৎ বিষয় নির্বাচন করে বাংলাদেশের যেসব এলাকায় যে ধরনের শিক্ষার গুরুত্ব বেশি আমরা সেভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো করে দিচ্ছি। যাতে সকলেই শিক্ষাটা যথাযথভাবে গ্রহণ করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজ্ঞান বা প্রযুক্তি শিক্ষা বা কারিগরি শিক্ষাটাই হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, কেননা, এটা দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে।

গতকাল দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপবৃত্তি, টিউশন ফি, ভর্তি সহায়তা ও চিকিৎসা অনুদান বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ সচিবালয়ের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা সহায়তা ট্রাষ্ট থেকে এদিন এক লাখ ৬৩ হাজার ৫৮২ জন শিক্ষার্থীকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে উপবৃত্তি, টিউশন ফি, ভর্তি সহায়তা ও চিকিৎসা অনুদান বিতরণ করা হয়। সরকার যে একশ’ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে সেখানেও অনেক ‘টেকনিক্যাল হ্যান্ডস’ প্রয়োজন পড়বে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করে বলেন, দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি করতে পারলে তারা আমাদের উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখতে পারবে।

সরকার প্রধান বলেন, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ থেকে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ৪৫ কোটি ৮৭ লাখ ৮৮ হাজার টাকা উপবৃত্তি ও টিউশন ফি বাবদ বিতরণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, কারিগরি শিক্ষার প্রসারে প্রতিটি উপজেলায় ১টি করে টেকনিক্যাল স্কুল স্থাপন করা হচ্ছে এবং প্রতিটি বিভাগীয় সদরে ১টি করে মহিলা টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ স্থাপন করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতি জেলায় একটি করে সরকারি বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় করা হচ্ছে। সরকার সকল জেলা পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছে যেন ছেলে-মেয়েরা ঘরের খেয়ে বাবা-মা’য়ের চোখের সামনে থেকে পড়ালেখা করতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রাথমিকসহ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষায় সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ বাড়াতে ছাত্র-ছাত্রী উভয়ের জন্য বর্ধিত হারে উপবৃত্তি প্রদান করে যাচ্ছে, ফলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লিঙ্গ সমতা অর্জন করায় বাংলাদেশ বিশ্বে প্রশংসা অর্জন করেছে।

এর ব্যাখায় তিনি বলেন, লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে আমি একটু বলতে চাই দেখা যাচ্ছে যে, মেয়েদের সংখ্যাই বেশি এবং ছেলেদের সংখ্যাটা কমে যাচ্ছে। সেটা যেন না হয় সেদিকে একটু নজর দেবেন। কারণ আমাদের লিঙ্গ সমতাটা একটু অন্য ধরনের হয়ে যাচ্ছে। ছেলেরা কেন কমে যাচ্ছে সেই বিষয়টা একটু দেখা দরকার। আমি মনে করি অভিভাবক, শিক্ষক সকলকেই এটা দেখতে হবে।

অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। পিএমও সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। মহামারি করোনার মধ্যেও যথাসময়ে বই বিতরণ করায় তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, এ বছরের প্রথম দিন ৪ কোটি ১৬ লাখ ৫৫ হাজার ২২৬ জন শিক্ষার্থীদের মাঝে ৩৪ কোটি ৩৬ লাখ ৬২ হাজার ৩৯৪টি বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। ২০১০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩৬৬ কোটি বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে।
কোভিড-১৯ এর কারণে দেশের সকল স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘আমরা আশা করছি আগামী ৩০ মার্চ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে সক্ষম হবো।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কর্মচারি যারা রয়েছেন সকলকেই টিকা নিতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম মেনে কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকেও টিকা দেয়া হবে বলে তিনি জানান।
প্রধানমন্ত্রী দেশে শিক্ষার হার বৃদ্ধিতে তাঁর সরকারের সাফল্য প্রসঙ্গে বলেন, ’৯৬ সালে সরকারে আসার পর তার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার নিরক্ষরতামুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে ‘নিরক্ষরতামুক্ত বাংলাদেশ শীর্ষক’ একটি প্রকল্প হাতে নেয়।

তিনি বলেন, সেখানে আনুষ্ঠানিক, উপানুষ্ঠানিক, মসজিদ বা ধর্মীয় প্রতিষ্টান ভিত্তিক এবং বয়স্ক শিক্ষার ব্যাপক পদক্ষেপ নিয়েছিল। এক্ষেত্রে বিভিন্ন এনজিও সহ বিভিন্ন সংগঠনকে কাজে লাগানো হয় বয়স্ক শিক্ষার জন্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে আমাদের লক্ষ্য ছিল প্রতিটি জেলাকে নিরক্ষরতামুক্ত ঘোষণা করা এবং এর ফলও পেতে শুরু করে। সকলের উদ্যোগে সকলের সহযোগিতায় খুব অল্প সময়েই কয়েকটি জেলাকে নিরক্ষরতামুক্ত ঘোষণা করা সম্ভব হয়। সেজন্য সে সময় ইউনিসেফ থেকে আন্তর্জাতিক পুরস্কার বাবদ প্রায় ১০ হাজার ডলার প্রাপ্তি এবং সেটি দিয়ে একটি বৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়। ৪৫ শতাংশ থেকে শিক্ষার হার ৬৫ শতাংশে উন্নীত করি।
তবে, পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার সেটি বন্ধ করে দেয়। সে সময় পিএইচডি বা উচ্চশিক্ষার্থে যেসব শিক্ষার্থীরা বিদেশে গমন করে তাদেরকে কোর্স কারিকুলাম বাদ রেখেই দেশে ফিরিয়ে আনে। এ ধরনের সরকারী কর্মসূচিগুলো সরকার পরিবর্তন হলেই যেন বন্ধ হতে না পারে সেজন্যই আওয়ামী লীগ সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেজন্য যাই করি সবসময় এটা চিন্তা করি সরকার বদল হলেও যেন এগুলো বন্ধ না হয়।

তিনি বলেন, তার সরকার ’৯৬ পরবর্তী সরকারে থাকার সময় দেশের বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারে ১২টি নতুন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নিয়ে ৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ শুরু করেছিল, সে সময় কম্পিউটার যন্ত্র্রাংশের ওপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহার করে সরকার প্রযুক্তি শিক্ষায় গুরুত্বারোপ করে।
প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসেই বিএনপি পরবর্তী ৫ বছরে দেশে সাক্ষরতার হার ফের ৬৫ ভাগ থেকে ৪৪ ভাগে নামিয়ে এনেছিল।

তার সরকারের প্রচেষ্টায় জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ প্রণীত হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন এসএসসি, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাসহ শিক্ষক নিয়োগ ও নিবন্ধন পরীক্ষার ফলাফল ওয়েবসাইটে, মোবাইল ফোনের এসএমএস’র মাধ্যমে অতিদ্রুত প্রকাশ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন এবং বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়া অনলাইনে করা হচ্ছে। পরীক্ষা বা মূল্যায়ন পদ্ধতির আধুনিকায়ন করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ফলে শিক্ষার মান বেড়েছে এবং সব পাবলিক পরীক্ষায় ফলাফলও ভাল হচ্ছে। পাশাপাশি মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা কার্যক্রমে আই.সি.টি. বিষয় আবশ্যিক করে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, ডিজিটাল কনটেন্ট ও অন্যান্য বিষয়ে ৫ লক্ষাধিক শিক্ষক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান এবং শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।
শিক্ষা স¤প্রসারণে আওয়ামী লীগ সরকারের উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ সম্পর্কে সরকার প্রধান বলেন, বর্তমানে শিক্ষার হার ৭৪ দশমিক ৪ শতাংশ দাঁড়িয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাকালীন সময়েও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৫ হাজার ৩৫১ জন শিক্ষক-কর্মচারীকে ৫১৭ কোটি ৩৩ লক্ষ ১২ হাজার টাকা অবসর সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। সেইসঙ্গে ৫ হাজার ৪৪৬ জন শিক্ষক-কর্মচারীর কল্যাণ ভাতার আবেদন নিষ্পত্তি করে ২১৮ কোটি ৬৩ লক্ষ ৮ হাজার ১৩৫ টাকা প্রদান করা হয়।
তার নির্দেশনাতেই ২০১২ সালে ১ হাজার কোটি টাকা সীড মনি দিয়ে ‘প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট’ গঠন করা হয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ট্রাস্ট থেকে দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি নিশ্চিতকরণে মাধ্যমিক পর্যায়ে ৫ হাজার টাকা, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ৮ হাজার টাকা ও স্নাতক পর্যায়ে ১০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেয়া হচ্ছে। গত অর্থবছর পর্যন্ত ৮৫৩ জন শিক্ষার্থীকে ভর্তি সহায়তা বাবদ ৩১ লাখ ৪৬ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন