শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

সামান্য কাজও সামান্য নয়-২

মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আব্দুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ২ মার্চ, ২০২১, ১২:০০ এএম

কোনো কাজকে সামান্য মনে করার বিভিন্ন কারণ হতে পারে- কাজটি ছোট বলে সামান্য মনে করা, নিজের অবস্থার নিরিখে কাজটিকে সামান্য মনে করা ইত্যাদি। অনেক মানুষের এমন ধারণা আছে যে, আমি তো অনেক গুনাহ করেছি, অনেক পাপ করেছি, আমার সামান্য নেক আমলে আর কী হবে? না, ইসলামী শরীয়ত বলে, তুমি সামান্য নেক আমলকেও সামান্য মনে করো না। হতে পারে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই ভালো কাজের বিনিময়ে তোমাকে আরো ভালো কাজ করার তাওফীক দান করবেন এবং হতে পারে এই ভালো কাজের কারণে আল্লাহ তোমাকে মাফ করে দিবেন। সুতরাং কোনো ভালো কাজকে সামান্য মনে করো না।

ভালো কাজ কাকে বলে? ইবাদত-বন্দেগিও ভালো কাজ। এই মূলনীতি ইবাদত-বন্দেগির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আমি মসজিদে এসেছি। জামাত আরম্ভ হতে এক মিনিট সময় বাকি আছে। এক মিনিটে দুই রাকাত নামাজ পড়তে পারব না, কিন্তু আধা পৃষ্ঠা কোরআন মাজীদ তিলাওয়াত করতে পারব। দশবার ‘সুবহানাল্লাহ ওয়ালহামদুলিল্লাহ ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার’ বলতে পারব।

এটা তো হলো ইবাদত-বন্দেগি। এরকম মুআমালা-লেনদেন। লেনদেনের ক্ষেত্রেও ইচ্ছা করলে ছোট ছোট ভালো কাজ করা যায়। আল্লাহর রাসূল (সা.) হাদীস শরীফে ইরশাদ করেছেন, আল্লাহপাক ঐ ব্যক্তিকে রহম করুন, যিনি নরম ও কোমল- বিক্রি করার সময়, কেনার সময় এবং হক ও প্রাপ্যের তাগাদা করার সময়। (সহীহ বুখারী : ২০৭৬)।

বেচা-কেনার সময় এমন হতে পারে যে, একটি জিনিসের বাজার দর দশ টাকা। বিক্রেতা কিছু বেশি চাচ্ছেন। আমি জানি তিনি বেশি চাচ্ছেন। এখন আমার দিয়ে দিলেও কোনো অসুবিধা হবে না। অন্য কারো হকও নষ্ট হবে না। তাহলে ঠিক আছে তাকে কিছু বেশিই দিলাম। যিনি বিক্রি করছেন, তিনি ক্রেতার অবস্থা দেখে বুঝছেন, বেচারা এক টাকা কম দিতে চাচ্ছে। এক টাকা কম নিলে আমারও কোনো সমস্যা হয় না, আমার পাশের যেসব ব্যবসায়ী তাদেরও সমস্যা হবে না। এটা একটা সামান্য বিষয়। তো ঠিক আছে আমি এক টাকা কমেই তাকে দিয়ে দিলাম।

আচ্ছা, এতে তো কিছু হলেও স্বার্থ-ত্যাগের ব্যাপার রয়েছে। স্বার্থত্যাগ ছাড়াও হাসিমুখে কথা বলে, ক্রেতার উদ্দিষ্ট দোকানটি দেখিয়ে দিয়ে, ভালো মানের জিনিস সম্পর্কে ধারণা দিয়ে বা অন্য দোকান থেকে এনে দিয়ে, ভেজাল সম্পর্কে সতর্ক করে এবং আরো নানাভাবে একজন মানুষের উপকার করতে পারি। আমার প্রাপ্য আমি কারো কাছে পাই। আমি বুঝছি যে, এই মুহূর্তে তার দেয়ার সামর্থ্য নেই, সে আসলেই অভাবী, তাকে ঋণ পরিশোধের সময় বাড়িয়েও দিতে পারি। তার সাথে নম্র-কোমল ব্যবহার করতে পারি। এতে আমার ক্ষতি নেই। তার অনেক উপকার। তো লেনদেনের ক্ষেত্রে ইচ্ছা করলেই মানুষের ছোট বড় উপকার করা যেতে পারে।

আমরা রিকশায় চড়ি, বাসে চড়ি, রিকশাওয়ালা পাঁচ টাকা বেশি চাইল। রিকশার আরোহী যিনি তিনি হয়তো একটা হোটেলে বসে পাঁচ হাজার টাকা খরচ করতেও কুণ্ঠা বোধ করেন না। আবার পাঁচ হাজারের সাথে পঞ্চাশ টাকা বখশিশও দিয়ে দেন। কিন্তু রিকশাওয়ালা যখন পাঁচ টাকা বেশি চায় তখন তিনি অগ্নিমূর্তি ধারণ করেন।

রিকশাওয়ালাকে যদি পাঁচ টাকা বেশি দিয়ে দেই তাহলে কী অসুবিধা? ঐ মানুষটার একটু উপকার হলো, আমার কোনো ক্ষতি হল না। এ শুধু মানসিকতার ব্যাপার। ইচ্ছা করলেই আমরা তা করতে পারি। মাঝে মাঝে এমনও তো করতে পারি যে, তোমার ভাড়া বিশ টাকা। নাও, তোমাকে আরো বিশ টাকা বখশিশ দিলাম। আপনি ঐ সময় ঐ রিকশাওয়ালা গরিব মানুষটির ঘর্মাক্ত মুখে আনন্দ ও কৃতজ্ঞতার যে অভিব্যক্তি দেখতে পাবেন অন্য অনেক স্থানে বিশ হাজার টাকা খরচ করেও তা পাবেন না। একজন গরিব মানুষের হাসিমুখের অনেক মূল্য।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
রাজি হোসেন ২ মার্চ, ২০২১, ১:৪৩ এএম says : 0
আমাদের একটি স্বাভাবিকতা- আমরা ছোট কোনোকিছুকে অবহেলার দৃষ্টিতে দেখি। অর্থবিত্তে ছোট, প্রভাবপ্রতিপত্তিতে ছোট, বংশমর্যাদায় ছোট, সামাজিক সম্মানের বিবেচনায় ছোট, শিক্ষাদীক্ষায় ছোট, বয়সে ছোট- এমন যত ‘ছোট’ রয়েছে সাধারণত সবই আমাদের দৃষ্টিতে অবহেলার পাত্র। অনেক সময় বয়সে বড় যারা তারা বয়সে ছোটদের অবহেলা করে, সম্পদশালীরা দরিদ্রদের তাচ্ছিল্য করে, বিদ্যাবুদ্ধিতে অগ্রসর যারা, তারা এক্ষেত্রে অনগ্রসরদের ছোট করে দেখে। সন্দেহ নেই, এ তাচ্ছিল্য ও অবহেলার দৃষ্টি অবশ্যই নিন্দনীয় এবং এতেও সন্দেহ নেই, নিন্দনীয় এ বিষয়টি সমাজের সকল স্তরে ‘যত্নসহ লালন’ করা হচ্ছে।
Total Reply(0)
মরিয়ম বিবি ২ মার্চ, ২০২১, ১:৪৩ এএম says : 0
আমাদের জীবনচলার পথে পথে, ঘরে-বাইরে নানা জায়গায় ছোট ছোট পুণ্যময় এমন অনেক কিছু ছড়িয়ে আছে, যেগুলো নিজ নিজ ক্ষুদ্রতাসহই আমাদেরকে সফলতার পথে পৌঁছে দিতে পারে অনেক দূর। আবার এমন অনেক ছোট ছোট পাপের কাজও রয়েছে, যেগুলো ক্ষুদ্র হলেও আগুনের ফুলকির মতো জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছাই করে দিতে পারে আমাদের ঈমান-আমল সবকিছু।
Total Reply(0)
কাজী হাফিজ ২ মার্চ, ২০২১, ১:৪৪ এএম says : 0
কোনো গুনাহকে ছোট কিংবা তুচ্ছ ভাবাও কবিরা গুনাহ। অর্থাৎ ছোটখাটো গুনাহকে তুচ্ছ ভেবে সে সব গুনাহে যদি কেউ অভ্যস্ত হয়ে যায়, তাহলে ধীরে ধীরে তার জন্য বড় ধরনের পাপের পথ খুলে যায় এবং এরপর সে বড় পাপ করতে দ্বিধা করে না।
Total Reply(0)
কামাল রাহী ২ মার্চ, ২০২১, ১:৪৫ এএম says : 0
মানুষের দৈনন্দিন জীবনে প্রায়ই ঘটে এমন কিছু পাপের কথা আমরা বলতে পারি। যেন এসব পাপ থেকে আল্লাহ আমাদের দূরে রাখেন। যেমন সমাজের অনেকেই আশা করেন, অন্যরা আগে তাকে সালাম করুক। অথচ হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব সময়ই সালাম দেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রণী থাকতেন। এমনকি তিনি শিশুদেরও আগে সালাম দিতেন। সালাম না দেওয়ার মাধ্যমে অহংকার প্রকাশ পায়।
Total Reply(0)
বিবেক ২ মার্চ, ২০২১, ১:৪৫ এএম says : 0
আমরা অনেক সময়ই নিজের জন্য যা পছন্দ করি, অন্যের জন্য তা পছন্দ করি না। কখনো ভুল করলে তা স্বীকার করি না, বরং ওই ভুলের ব্যাপারে নানা অপব্যাখ্যা দিয়ে থাকি।
Total Reply(0)
জোহেব শাহরিয়ার ২ মার্চ, ২০২১, ১:৪৫ এএম says : 0
কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে সে তা দেখবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে সে তা-ও দেখবে। -সূরা যিলযাল (৯৯) : ৭-৮
Total Reply(0)
কে এম শাকীর ২ মার্চ, ২০২১, ১:৪৬ এএম says : 0
দুনিয়াতে ছোট-বড় যে কাজই মানুষ করুক, তা পাপের হোক আর পুণ্যের হোক, গোপনে হোক কিংবা প্রকাশ্যে, নিজ নিজ আমলনামায় মানুষ সেদিন সবকিছুই দেখতে পাবে। বড় বড় পাপ কিংবা পুণ্যের একটা সাধারণ হিসাব তো মানুষের থাকে। কিন্তু ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর এমন অনেক কিছুই সেদিন আমলনামায় মানুষ দেখতে পাবে- যার প্রকাশ সে কল্পনাও করতে পারেনি। আমলনামার এ ব্যাপকতা দেখে মানুষের চোখমুখ থেকে তখন ঝরতে থাকবে বিস্ময়। বিশেষত যারা অপরাধী, পাপ ও অন্যায় যাদের বেশি, নিজেদের কৃতকর্মের এমন ধারণাতীত সংরক্ষণ দেখে তাদের মুখে উচ্চারিত হবে হতাশার সুর
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন