শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

প্রেসক্লাবে পুলিশ ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে পুলিশ স্টাফ কলেজে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

পুলিশ মেমোরিয়াল ডে-২০২১ অনুষ্ঠিত পুলিশের সমালোচনাকারীদের মুখে ছাই পড়ুক : আইজিপি

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২ মার্চ, ২০২১, ১২:০০ এএম

রোববার আমরা দেখলাম প্রেসক্লাবের সামনে একা একজন পুলিশকে পেয়ে কীভাবে পেটানো শুরু হয়েছিল। তা সবাই দেখেছেন। সেখানে পুলিশ ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে। পুলিশ মেমোরিয়াল ডে-২০২১ উপলক্ষে পুলিশ স্মৃতিস্তম্বে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং স্বীকৃতি স্মারক তুলে দিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ সব কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন। মিরপুর-১৪ পুলিশ স্টাফ কলেজ বাংলাদেশ ক্যাম্পাসে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রেসক্লাবে দুএকজন পুলিশ হয়তো ঢুকেছে। পরিস্থিতি অতিমাত্রায় চলে যাওয়ায় নিয়ন্ত্রণের জন্য টিয়ারশেল ছুঁড়ে পুলিশ। প্রেসক্লাবের ভেতরে যেন বহিরাগতরা ঢুকতে না পারে, সেজন্য প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব নিতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

প্রেসক্লাবের সামনে ও প্রেসক্লাবের ভেতরে বহিরাগতদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় পুলিশ প্রেসক্লাবের দিকে তাক করে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে। বহিরাগতরা ও পুলিশ প্রেসক্লাবে ঢুকে পড়ল। তাহলে কী প্রেসক্লাব অনিরাপদ? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, প্রেসক্লাব অনিরাপদ হয়নি। আপনারা নিশ্চয়ই দেখেছেন, আমিও আধাঘণ্টা ধরে দেখেছি, আপনারাই ছবি তুলে প্রচার করেছেন। সেটার মধ্যে এই দৃশ্যও দেখেছেন- একজন পুলিশ এক জায়গায় একা দাঁড়িয়েছিল। তাকে বড় বড় লাঠি দিয়ে পেটানোর দৃশ্যও আপনারা দেখেছেন। চরম ধৈর্যের সঙ্গে পুলিশ পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে। প্রেসক্লাবের ভেতরে কোনোদিন আমাদের পুলিশ ঢোকে না। এদিন যেভাবে ইটপাটকেল ছুঁড়ছিল সে সময় দুএকজন হয়ত ঢুকেছে। প্রেসক্লাবের রীতি অনুযায়ী সেখানে পুলিশ ঢোকে না। কিন্তু যেভাবে ইটপাটকেল ও মারামারির সৃষ্টি হয়েছিল, সেখানে উচিত ছিল মারামারি না করা।

টিয়ার গ্যাসের বিষয়ে তিনি বলেন, ঘটনা যখন অতিমাত্রায় চলে যায় তখন পুলিশ টিয়ার গ্যাস মেরেছে। এটা সরানোর কৌশল মাত্র।
তিনি বলেন, সরকারের রূপকল্প বাস্তবায়নে ও উন্নয়নে নিরাপত্তা স্থিতিশীল রাখার নিয়ামক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ। এই বাহিনী শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করে না, জঙ্গি নির্মূলেও পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। জঙ্গি উত্থানের সময় পুলিশকে আহত করা হয়েছিল, সে চিত্র আমরা রাজশাহীতে এক জঙ্গিবিরোধী অভিযানে দেখেছি। রোববার আমরা একই ঘটনা দেখলাম প্রেসক্লাবে। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পুলিশ সদস্য মারা যাচ্ছেন। ২০২০ সালে বিভিন্ন অবস্থায় বিভিন্ন পদের ৪৫৭ জন পুলিশ সদস্য মৃত্যুবরণ করেছেন। এদের মধ্যে ২০৮ জন কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গ করেছেন। আমি নিহত ও মৃত্যুবরণকারী শোক সন্তপ্ত পুলিশ সদস্যদের পরিবারের প্রতি শোক-সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।

তিনি আরো বলেন, পুলিশ সদস্যরা আন্তরিকতা, কর্মনিষ্ঠা এবং নিজেদের জীবন উৎসর্গ করার মতো চরম ত্যাগে দায়িত্ব পালনের যে অনন্য নজীর স্থাপন করেছেন, সেজন্য পুলিশ বাহিনীসহ দেশবাসী গর্বিত। করোনায় যখন আমরা কিংকর্তব্যবিমূঢ হয়ে গিয়েছিলাম, যখন আমাদের কাছে করোনার কোনো প্রতিষেধক ছিল না, করোনায় মৃত্যুবরণকারী মায়ের ডেড বডি হাসপাতাল থেকে সন্তান যখন নিতে আসছিল না, তখন পুলিশ সেই মায়ের ডেড বডি বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে জানাজা ও দাফনের ব্যবস্থা করেছে। করোনায় দুস্থ অসহায়দের পাশে দাঁড়িয়েছে পুলিশ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার সর্বদা পুলিশ বাহিনীর উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। চাকরিরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা পুলিশ সদস্যদের পরিবারের দিকে লক্ষ্য রেখে প্রত্যেক পরিবারকে এককালীন আট লাখ টাকা করে দিতে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এছাড়া চাকরিরত অবস্থায় স্থায়ী অক্ষম ও অবসরে গেলে চার লাখ টাকা অনুদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এর আগে একই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন বলেন, জীবন মৃত্যুতে কারও হাত নেই। তবে চেষ্টা থাকবে কারও যেন অকালে বা অকারণে মৃত্যু না হয়। দেশের জন্য দেশের মানুষের জন্য জীবন দেয়া গৌরবময় বিষয়।

জাতীয় প্রেস ক্লাবে পুলিশ ও ছাত্রদলের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, পুলিশ তো কারও প্রতিপক্ষ নয়। ওই ছোট একটা গ্রুপ যারা দেশের কোনো ভালো কিছু দেখেন না এবং সমালোচনা করেন, এমনকি তারা পুলিশের সমালোচনা করেন তাদের মুখে ছাই পড়ুক। এ দেশের প্রকৃতিতে যারা বড় হয়ে ছুরি মারতে চায় তাদের মুখে আমরা দেশবাসী সবাই মিলে ছাই ছুড়ে দিতে চাই। এই করোনাকালেও পুলিশের বিভিন্ন পদমর্যাদার ৮৫ জন সদস্যকে আমরা হারিয়েছি। সেই সঙ্গে করোনাকালে প্রায় ২১ হাজার সদস্য দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, সুস্থ হয়েছেন এবং আবার সুস্থ হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে আইজিপি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই মেমোরিয়াল ডে’র সঙ্গে আরেকটি উৎসব উদযাপন করে সেটি হচ্ছে ‘ব্ল- রিবন ডে’। মূলত ওই দিন দেশবাসী পুলিশের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বু-রিবন পুলিশকে পরিয়ে দেয়, নিজেরা গাড়িতে, বাড়িতে ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নীল রঙে সাজায়। আগামী বছর থেকে এই অনুষ্ঠানটি আগামী বছর থেকে চালু করতে চাই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Md Rejaul Karim ২ মার্চ, ২০২১, ৬:৪৩ এএম says : 0
ভিডিও টি দেখে পুলিশের ধর্য্যের প্রমাণ মিলছে না পুলিশ প্রশাসন জনগনের প্রতিপক্ষ্যই মনে হলো এটি কারো জন্যই সমীচিন নয়।।।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন