দক্ষিণাঞ্চলে ১৫ কর্ম দিবসে করোনা ভেক্সিন গ্রহনকারীর সংখ্যা দেড় লাখ অতিক্রম করলেও জনগনের মাঝে আগ্রহ ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। তবে ভেক্সিন সম্পর্কে আমজনতার ভীতি কিছুটা হ্রাস পেলেও তা পুরোপুরি দুর হয়নি। এমনকি পুরষের চেয়ে মহিলাদের মধ্যে ভেক্সিন গ্রহনে আগ্রহ এখনো যথেষ্ঠ কম বলে জানা গেছে। পনের দিনে দক্ষিণাঞ্চলে ভেক্সিন গ্রহনকারীর মধ্যে মাত্র এক তৃতীয়াংশ মহিলা। এসব বিষয়ে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মাঝে উদ্বেগ রয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্রচারনা চালান হলেও এখনো আমজনতার মাঝে সঠিক বার্তা পৌছছে না বলে মনে করছেন ওয়াকিবাহাল মহল। এলক্ষে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে প্রচারনা যোরদারেরও পরামর্শ দেয়া হয়েছে । এ লক্ষে সিভিল সার্জনদের দিক নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে বলে জানিয়ছেন স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার সাহা।
সারাদেশের সাথে গত ৭ ফেব্রুয়ারী বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলা সদরে ৯টি ছাড়াও ৩৪টি উপজেলা সদর সহ মোট ৪৩ টি কেন্দ্রে ভেক্সিন প্রদান শুরু হয়। প্রথম দিনে শুধুমাত্র ১ হাজার ৪১০ জন চিকিৎসক ও চিকিৎসা কর্মী ভেক্সিন গ্রহন করলেও পরদিন থেকেই সাধারন মানুষও টিকা গ্রহন শুরু করেন। ক্রমন্বয়ে ভেক্সিন গ্রহনকারীর সংখা বেড়ে একদিনে ১৬ হাজারে উন্নীত হলেও গত সপ্তাহখানেক ধরে তা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে।
ভেক্সিন প্রদানের ১৫তম দিনে ২৮ ফেব্রুয়ারী গ্রহনকারীর সংখ্যা ৫ হাজার ৩২১ জনে হ্রাস পেলেও ১মার্চ তা ৪ হাজার ৪৫৯ জনে হ্রাস পেয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী দক্ষিণাঞ্চলে ভেক্সিন গ্রহনকারীর সংখ্যা ইতোমধ্যে এক-তৃকীয়াংশেরও নিচে নেমে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য প্রশাসনও। স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীল মহল থেকে গনমাধ্যম সহ সর্ব মহলের কাছে ভেক্সিন গ্রহনকারীর সংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষে সহযোগীতার আহবান জানান হয়েছে।
গত জানুয়ারীর শেষভাগে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার জন্য প্রায় সাড়ে ৩ লাখ ডোজ করোনা ভিক্সিন পৌছলেও গ্রহনকারীর সংখ্যা বৃদ্ধির পরিবর্তে হ্রাস পাওয়ায় নতুন কোন বরাদ্ব হয়নি এখনো। দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলার মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক ভেক্সিন বরাদ্ব হয়েছে ‘করোনা’র হটস্পট’ বরিশাল জেলার জন্য, ১লাখ ৬৮ হাজার ডোজ। আর সর্বনি¤œ ঝালকাঠী জেলার জন্য মাত্র ১২ হাজার ডোজ ভেক্সিন প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু ভেক্সিন প্রদানের ক্ষেত্রে ঝালকাঠী জেলার পরিস্থিতি সবচেয়ে ভাল। ফলে সেখানে বরিশাল থেকে অতিরিক্ত ৭ হাজার ডোজ ভেক্সিন ইতোমধ্যে সরবারহ করা হয়েছে। উপরন্তু বরিশাল মহানগরীর জন্য বরাদ্বকৃত ভেক্সিনের অতিরিক্ত অরো ১০ হাজার ডোজ সরবারহ করা হয়েছে বলে দায়িত্বশীল সূত্রে বলা হয়েছে।
এদিকে গত বছর ১৮ মার্চ দক্ষিণাঞ্চলে প্রথম কোভিড-১৯ রোগী সনাক্ত হবার প্রায় একবছর পরে গত ২৬ ফেব্রুয়ারী এ অঞ্চল ছিল করোনা সংক্রমন মূক্ত। তবে ২৭ ফেব্রুয়ারী ১জন, ২৮ ফেব্রুয়ারী ৪জন, ১ মার্চ দুজন এবং সর্বশেষ মঙ্গলবার-২ মার্চ সকালের পূর্ববর্তি ২৪ ঘন্টায় আরো ৩জন করোনা রোগী সনাক্ত হয়েছে দক্ষিণাঞ্চলে।
স্বাস্থ্য বিভাগের মতে, মঙ্গলবার পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় মোট কোভিডÑ১৯ রোগী সনাক্তের সংখ্যা ১০ হাজার ৭১৭ জনের মধ্যে বরিশালের সংখ্যাটাই ৪,৮৯৬। যার মধ্যে এ মহানগরীতেই ৩ হাজার ৭৭০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ হিসেবে বিভাগের মোট সনাক্ত রোগীর প্রায় ৩৫% বরিশাল মহানগরীতে। অথচ গোটা বিভাগের মাত্র ৬% মানুষ এ নগরীতে বাস করে। আর এ পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলে করেনা সংক্রমনে মৃত ২০২ জনের মধ্যে বরিশাল জেলায় ৮৮ জনের মৃত্যু হলেও মহানগরীতেই মারা গেছেন ৪৭ জন। দক্ষিণাঞ্চলে সর্বশেষ গড় মৃত্যু হার ১.৮৮% হলেও বরিশাল মহানগরীতে তা অনেক বেশী।
মঙ্গলবার পর্যন্ত পটুয়াখালীতে মোট অক্রান্ত ১,৭৪৬ জনের মধ্যে মারা গেছেন ৪১ জন। এসময়কালে পিরোজপুরে আক্রান্ত ১,১৯৫ জনের মধ্যে মারা গেছেন ২৫ জন। বরগুনাতে ১ হাজার ৩৪ জন আক্রান্তের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের। ভোলাতে অক্রান্ত ১ হাজার এক জনের মধ্যে ১০ জন মারা গেছেন। আর ঝালকাঠীতে ৮৪৫ জন আক্রান্তের মধ্যে ১৬ জনের মতে্যু হয়েছে। মঙ্গলবার সকালের পূর্ববর্তি ২৪ ঘন্টায় বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজের আরটি-পিসিআর ল্যাবে ৮০ জনের নমুনা পরিক্ষায় ৩জনের ও ভোলাতে ২৫ জনের নমুনা পরিক্ষায় কারো দেহেই করেনা পজিটিভ সনাক্ত হয়নি।
স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে দক্ষিণাঞ্চলে এখন করোনা পজিটিভ সনাক্তের হার ১৪.০৫%। আর স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমিত হিসেব অনুযায়ী দক্ষিনাঞ্চলে করোনা আক্রান্ত ১০,৭১৭ জনের মধ্যে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১০,৪৩৫ জন। সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী এ অঞ্চলে সুস্থতার হার ৯৭.৫৭%।
তবে সাম্প্রতিককালে করোনা রোগী সনাক্তের ক্ষেত্রে নমুনা পরিক্ষার সংখ্যা যথেষ্ঠ হ্রাস পেয়েছে বলে মনে করছেন ওয়াকিবাহাল মহল। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞগন করোনা মহামারি থেকে পরিত্রানে আরো বেশী করে নমুনা পরিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন