মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

এ লজ্জা রাখি কোথায়?

প্রকাশের সময় : ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্পোর্টস রিপোর্টার : আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে বৃহস্পতিবার রাতে মালদ্বীপে স্বাগতিকদের বিপক্ষে ৫-০ গোলে হেরেছে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। লাল-সবুজদের লজ্জাজনক এ হারে ক্ষুব্ধ জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলাররা। তারা রায়হান-তপুদের পারফরমেন্সে হতাশ। বাংলাদেশের খেলা দেখে হতাশ হয়েছেন দেশের ফুটবলপ্রেমীরা। ম্যাচে মালদ্বীপের ফরোয়ার্ডদের সামনে বাংলাদেশের চার ডিফেন্ডার রায়হান, নাসির, তপু ও ওয়ালী ফয়সাল ছিলেন পুরোপুরি অসহায়। স্বাগতিকদের একের পর এক আক্রমণে লাল-সবুজদের রক্ষণদূর্গ তছনছ হতে বেশী সময় লাগেনি। প্রথমার্ধে মালদ্বীপের কিছু আক্রমণ প্রতিহত করলেও দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই বাংলাদেশের ডিফেন্ডাররা খেই হারিয়ে ফেলেন। এসময় রীতিমত তাদের নিয়ে ছেলে-খেলায় মেতে ওঠেন মালদ্বীপ ফরোয়ার্ডরা। বলা যায় জাতীয় দলের খেলোয়াড় হলেও রায়হান, তপু, ওয়ালী ফয়সাল ও নাসিরদের খেলা দেখে মনে হয়েছে, তারা যেন পাড়া-মহল্লার কোন দলের হয়ে খেলছেন। বাংলাদেশ পাঁচটি গোলই হজম করেছে রক্ষণভাগের ভুলে। ম্যাচে হ্যাটট্রিক করার জন্য মালদ্বীপ ফরোয়ার্ড আসাদুল্লাকে যতটা সাধুবাদ দেয়া যায় তার চেয়ে বেশী তিরষ্কার করতে হয় বাংলাদেশের চার ডিফেন্ডারকে। রায়হান ও তপুকে কাটিয়ে প্রথম গোলটি করেন আসাদুল্লা। আর ওয়ালী ফয়সালকে বোকা বানিয়ে দ্বিতীয় গোলটি আসে তার পা থেকেই। হামজাতের করা তৃতীয় গোলটির জন্য পুরো দায়ি করা যায় রায়হান ও সোহেল রানাকে। তারা ট্যাকেলই দিতে পারেননি হামজাতকে। আসাদুল্লা হ্যাট্রিক গোলটিও পান রায়হানের ভুলে। আর ঈসা দলের পক্ষে পঞ্চম গোলটি করেন সেই রায়হান-তপুর ব্যর্থতাতেই। তিনি যখন বল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন রায়হান অসহায়ের মতো ডজ খেয়ে মাটিতে পড়ে যান এবং তপু ছুটে এসে ঈসাকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করেও তার নাগাল পাননি। বাংলাদেশের অসাহায় রক্ষণভাগ যখন তছনছ, তখন আক্রমণভাগ ম্যাচে ফিরতে চেষ্টা করলেও কাজের কাজ কিছুই করতে পারেনি। তাদের খেলা দেখে মনে হয়েছে সামনে এগুনের বদলে যোজন যোজন পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশের ফুটবল।
দক্ষিণ এশিয়ার এক সময়কার চ্যাম্পিয়ন দলটি এখন ভরাডুবির বৃত্তেই ঘুরপাক খাচ্ছে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) একের পর এক বিদেশী কোচ বদল করেও কোন পর্যায়েই আনতে পারছে না জাতীয় দলকে। এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ মহিলা ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাই পর্বে বাংলাদেশের মেয়েরা যখন টানা জয় পেয়ে আকাশে উড়ছে, ঠিক তখনি মালদ্বীপের মতো দলের কাছে ইতিহাসের লজ্জাজনক হারে দিশেহারা বেলজিয়ান কোচ সেইন্টফিট বাহিনী।
স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ফুটবল ইতিহাসের দীর্ঘ চার দশক পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এই সময়ের পর এসে দেখা গেলো লাল সবুজের ফুটবল সময়ে এগিয়ে না যেতে না পারলেও পিছিয়েছে অনেক। ১৯৭৩ সালের ২৬ জুলাই মালয়েশিয়ায় প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ। থাইল্যান্ডের সঙ্গে ওই ম্যাচটি ২-২ গোলে ড্র হয়। তবে আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়টি এসেছিল ১৯৮৫ সালের ২১ ডিসেম্বর মালদ্বীপের বিপক্ষে। তৎকালীন ঢাকা স্টেডিয়ামে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম) অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সাফ গেমসের ফুটবলে মালদ্বীপকে ০-৮ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। অথচ ৩১ বছর পর সেই মালদ্বীপের কাছেই এবার হেরেছে লাল সবুজরা। তাও ০-৫ গোলে। গত এক বছরে বাংলাদেশের ফুটবলে চারবার কোচ পরিবর্তন করেও কোন উন্নতি হয়নি। নেদারল্যান্ডসের ডি ক্রুইফ, ইতালির ফ্যাবিও লোপেজ, বাংলাদেশের মারুফুল হক, ফের ক্রুইফ এবং বর্তমানে বেলজিয়ামের টম সেন্টফিট।  বাংলাদেশের কোচ হয়ে এই বেলজিয়ান প্রথম অ্যাসাইনমেন্টেই চরম ব্যার্থ হয়েছেন। সেন্টফিেেটর পাশাপাশি বর্তমানে টিম বাংলাদেশের কোচিং স্টাফে আরও তিনজন বিদেশী রয়েছেন। টেকনিক্যাল ডাইরেক্টর অস্ট্রেলিয়ান পল স্মলি, গোলরক্ষক কোচ নিউজিল্যান্ডের রায়ান স্যান্ডফোর্ড এবং ফিটনেস কোচ হিসেবে রয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকান রিদোহ বার্ডিন। ইতিহাস বলে, কোচিং স্টাফে এত বিদেশী আর কখনোই বাংলাদেশে ছিলেন না। অথচ তাদের অভিষেক এতটাই হতাশার। ফলে মালদ্বীপের কাছে এই হারে শুধু হতাশই নন, দারুন ক্ষুব্ধ জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলাররা। তারা প্রচন্ড ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ প্রসঙ্গে সাবেক তারকা ফুটবলার হাসানুজ্জামান খান বাবলু বলেন, ‘যে মালদ্বীপকে আমরা বলে কয়ে হারাতাম, তাদের কাছেই এখন আমাদের হারতে হয়। তাও বড় ব্যবধানে। এরচেয়ে বড় লজ্জার কথা আর কি হতে পারে।’
জাতীয় দলের সাবেক গোলরক্ষক আমিনুল হক বলেন, ‘মালদ্বীপের কাছে বড় হার অবিশ্বাস্য একটি বিষয়। আর এটাই  বাংলাদেশ ফুটবলের বর্তমান চিত্র। অবাক লাগে, ২০১১ সাল পর্যন্ত কখনোই যে মালদ্বীপের কাছে হারিনি, এখন তাদের কাছেই আমাদের হারতে হচ্ছে। সাফে হারলাম ৩-০ গোলে। আর প্রীতি ম্যাচে ৫-০ গোলে। এটা নিয়ে ভাবতে হবে বাফুফের কর্মকর্তাদের। আরও বেশি মনোযোগ দিতে হবে। নতুন কোচকে আরও সময় দিতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
আশিক ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১:১৭ পিএম says : 0
এটা নিয়ে ভাবতে হবে বাফুফের কর্মকর্তাদের।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন