শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

তদন্তের আগে গ্রেফতার না করার বিধান হচ্ছে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে

বিবিসিকে আইনমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ মার্চ, ২০২১, ১২:০১ এএম

বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার থাকা একজন লেখকের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে অব্যাহত বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে সরকার এখন আইনটির অপপ্রয়োগ বন্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলছে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসিকে বলেছেন, এই আইনে কোনো অপরাধের অভিযোগ এলে পুলিশের তদন্তের আগে কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না বা তার বিরুদ্ধে মামলা নেয়া যাবে না-এমন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আইনে মিসইউজ যেগুলো ধরা পড়ছে বা অ্যাবিউজ যেগুলো হচ্ছে, সেগুলোর জন্য একটা চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স সিস্টেম কীভাবে ডেভেলপ করা যায়, সেই ব্যবস্থা করছি। ডিজিটিাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার থাকা লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর পর এই আইনটি নিয়ে নতুন করে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। এর বিরুদ্ধে অব্যাহত প্রতিবাদের অংশ হিসেবে সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে পুলিশের বাধার মুখে সচিবালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছিল বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। দেশের গণমাধ্যম কর্মী, মানবাধিকারকর্মী, ৫১ বুদ্ধিজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ আইনটি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।

২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নানা বিতর্কের মধ্যেই আওয়ামী লীগ সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করে। শুরুতেই গণমাধ্যম এবং মানবাধিকার কর্মীরা যেমন আপত্তি করেছিলেন, পরে এই আইনের অপপ্রয়োগ নিয়েও তাদের উদ্বেগ প্রকাশ পেয়েছে। তাদের উদ্বেগের মূল বিষয় হচ্ছে ভাবমূর্তিক্ষুন্ন করা, গুজব রটনা বা সরকারের সমালোচনা করা- এমন সব অভিযোগে মামলা হলেই আটক করে রাখা হয় এবং আইনের অপপ্রয়োগ করা হয়। এই আইনে ৯ মাস ধরে আটক থাকা লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর পর অভিযোগ ওঠেছে। ৬ বার আবেদন করেও তার জামিন মেলেনি। গতকাল জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল বাশেলেট বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন ‘আইনটির পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ জরুরি।’

এমন প্রেক্ষাপটে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, তদন্তের আগে মামলা নেয়া বা কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না, এমন ব্যবস্থা তারা নিচ্ছেন। তিনি বলেন, আমরা বলেছি, সরাসরি মামলা নেয়া হবে না। কোনো অভিযোগ এলে পুলিশ প্রথমে তদন্ত করে দেখবে এবং তদন্ত সাপেক্ষে তারপরে মামলা নেয়া হবে।

কিন্তু আইনটি প্রণয়নের পর থেকে কোনো অভিযোগ এলেই পুলিশ মামলা নিয়ে সাথে সাথেই অভিযুক্তকে আটক করছে- এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আইনমন্ত্রী বলেছেন, আগে যাতে আটক না করে এবং তদন্তের জন্য যেন অপেক্ষা করে- সেই জায়গায় আসার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। জামিন হওয়া না হওয়ার প্রশ্নে মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, সাজা যতটা হলে জামিন হবে এবং যতটা হলে জামিন হবে না- ঠিক সেই প্রিন্সিপালটা ফলো করে আমরা বিধান করেছি। সারা পৃথিবীতেই এটা করা হয়। এমনকি এই উপমহাদেশেও। বিষয়টা নিয়ে আমরা আলাপ আলোচনা করছি।

আইনের অব্যাহত অপপ্রয়োগ অভিযোগের ব্যাপারে আইনমন্ত্রী বলেছেন, তারা ব্যবস্থা নিচ্ছেন। সব আইনই যখন করা হয়, তখন কিন্তু একটা ট্রায়াল অ্যান্ড এরর বা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যায়। কথা হচ্ছে, এখানে যদি কিছু অ্যাবিউজ এবং মিসইউজ হয়, সেটা কি করে বন্ধ করা হবে- সে ব্যাপারে ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি।

মন্ত্রী আনিসুল হক বিষয়টি নিয়ে জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের সাথেও আলোচনা করার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের অফিসের সাথে আমি আলাপ চালাচ্ছি। সারা বিশ্বের সাথে আমরা এটার তুলনা করছি। মিসইউজ যেগুলো ধরা পড়ছে বা অ্যাবিউজ যেগুলো হচ্ছে, সেগুলোর জন্য একটা চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স সিস্টেম কীভাবে ডেভেলপ করা যায়, এই আইনের মধ্যেই কীভাবে সেটা থাকতে পারে-সেই ব্যবস্থা আমরা করছি। তিনি মনে করেন, এসব ব্যবস্থা নিতে আইনের সংশোধনের প্রয়োজন নাও হতে পারে এবং বিধির মাধ্যমে সেটা করা যেতে পারে।

বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, এই আইনের কারণে গণমাধ্যমের পাশাপাশি সাধারণ নাগরিকদের মধ্যেও একটা ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মত প্রকাশ বা বাকস্বাধীনতা খর্ব করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শাহনাজ হুদা বলেছেন, ভিন্নমত যাতে না আসে, সেজন্য সরকার আইনটি করেছিল বলে তিনি মনে করেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটা ভয় ভীতি প্রদর্শন করে একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সত্যি কথা বলতে, আমাদেরই কিন্তু ভয় লাগে কোনোকিছু সম্পর্কে একটা কমেন্ট করতে। একটা সেলফ সেন্সরশীপ কিন্তু এসে গেছে সবার মনে। তিনি আরো বলেন, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের সমালোচনা যাতে না হয়, এবং একটা ভয় কিন্তু সবার ভেতরে ঢুকে গেছে। তারা চাচ্ছিল যে ভিন্নমতটা একেবারে যাতে না আসে।

মত প্রকাশের স্বাধীনতা বা বাকস্বাধীনতা খর্ব করার অভিযোগ মানতে রাজি নন আইনমন্ত্রী এবং সরকারের অন্য মন্ত্রীরাও। কিন্তু বিতর্কিত এই আইনকে সরকার বা আওয়ামী লীগ কেন প্রয়োজন মনে করছে- এই প্রশ্নও অনেকে তুলেছেন।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সিনিয়র মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে তাদের সরকার এবং দলের উচ্চ পর্যায়ে তারা আলোচনা করছেন। তবে ডিজিটাল দুনিয়ায় নানা অপরাধের প্রেক্ষাপটে আইনটির প্রয়োজন আছে বলেই তাদের দল এবং সরকার মনে করছে। আইনের সমস্যা হলো যে, আইনের অপব্যবহার হচ্ছে কীনা-সেটা আমরা অবশ্যই পর্যালোচনা করছি। এটা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনাও হচ্ছে। তারপরও সাথে সাথে এটাও আমাদের চিন্তা করতে হচ্ছে যে, প্রযুক্তিগত এই সুযোগ বা সুবিধাটাকে আমরা অপব্যবহার করছি কিনা- এবং দেশের উন্নয়ন ও শান্তি আমরা বিঘ্নিত করছি কিনা- এটাও আমাদের দেখতে হচ্ছে।

বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী ও বিশ্লেষকরা মনে করেন, সরকার যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে আইনটির অপপ্রয়োগ নিয়ে বিতর্ক বা সমালোচনা যে অব্যাহত রয়েছে, সেটা আওয়ামী লীগ সরকারের ভাবমূর্তির ক্ষেত্রে দেশে এবং বিদেশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ##

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Ak Rahman ৩ মার্চ, ২০২১, ১:৫৫ এএম says : 0
এটা সরকার ও তার সমর্থকদের জন্যে নিরাপত্তা আইন, বিরোধী মতদের জন্যে নির্যাতনের হাতিয়ার।
Total Reply(0)
Md Abu Hanif ৩ মার্চ, ২০২১, ১:৫৭ এএম says : 0
এই দেশে কোনো আইনই সমস্যা সমাধানে যথেষ্ট না। সুস্থ মানসিকতার প্রয়োজন, অপব্যবহার রোধ হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করা জরুরী। একজন নির্যাতিত বিচার পাচ্ছেনা, আর অন্যজন নির্যাতন না করে সাজা খাটছে।
Total Reply(0)
Mamun Mridha ৩ মার্চ, ২০২১, ২:০৪ এএম says : 0
Stop this Act permanently.
Total Reply(0)
মোঃ আসাদুজ্জামান ৩ মার্চ, ২০২১, ২:০৬ এএম says : 0
মত প্রকাশের স্বাধীনতা যাতে বিনষ্ট নাহ হয় সেটা বিবেচনায় নিয়ে কাজ করা জরুরী?
Total Reply(0)
আব্দুল মমিন ৩ মার্চ, ২০২১, ২:০৬ এএম says : 0
ভিন্নমত দমন করার জন্য ইতিহাস সৃষ্টি করা একটি আইন এটা যা পৃথিবীর অন্য কোন দেশে নেই
Total Reply(0)
সারোয়ার হোসেন ৩ মার্চ, ২০২১, ২:০৭ এএম says : 0
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল কর, করতে হবে এটা সময়ের দাবী
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন