বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ২০ কি.মি. যানজট ঈদে স্বস্তির যাত্রা নিয়ে শঙ্কা

প্রকাশের সময় : ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪৮ পিএম, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

নূরুল ইসলাম : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটের ভোগান্তি যাত্রীদের পিছু ছাড়ছে না। গতকাল শুক্রবার ভোর থেকে বিকাল পর্যন্ত মহাসড়কের মেঘনা ও গোমতি সেতুর দুই পাড়ে প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ ভয়াবহ যানজটে আটকা পড়েছিল শত শত যানবাহন। যাত্রীদের পোহাতে হয়েছে সীমাহীন ভোগান্তি। চার লেনে উন্নীত হওয়ার পরও ঈদের আগেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ভয়াবহ যানজট ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের ভাবিয়ে তুলেছে। গত কয়েকদিন ধরেই এই মহাসড়কে একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের চাপ যখন বাড়বে তখন কী অবস্থা হবে তা ভেবে যাত্রীদের সাথে পরিবহন মালিক শ্রমিকরাও চিন্তিত। অথচ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী অনেক আগে থেকেই ঘোষণা দিয়ে যাচ্ছেন, এবারের ঈদে মহাসড়কে কোনো যানজট থাকবে না। স্বস্তিতে মানুষ ঘরে ফিরতে পারবে। মন্ত্রীর এই আশাবাদ আর দু-এক দিন পর থেকেই গুড়েবালি হতে শুরু করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করলেন ভুক্তভোগী এক যাত্রী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল ভোর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া থেকে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও পর্যন্ত যানজটে আটকা পড়ে শত শত যানবাহন। মেঘনা ও গোমতি সেতুর দুই পাড়েই সৃষ্ট এ যানজট ক্রমে ভয়াবহ আকার ধারণ করে। একপর্যায়ে এই যানজট ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়ে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ভ্রমণ করা হাজার হাজার যাত্রী। মহাসড়কের দুই সেতুর দুই পাড় ছাড়াও কাঁচপুর সেতুর দুদিকেও ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়। কাঁচপুর সেতুর কাছে ৮ লেন মহাসড়কের মাঝখানের ডিভাইডার ভাঙার পর ইট-পাথর না সরানোর কারণে যানবাহন চলাচলে বিঘœ ঘটায় এ যানজটের সৃষ্টি হয় বলে পুলিশ দাবি করেছে। অবশ্য সড়ক ও জনপদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গতকাল বিকালের মধ্যেই মহাসড়কের খানিক অংশ পরিষ্কার করার পর যানবাহনের গতি বেড়েছে। অন্যদিকে মেঘনা সেতু এলাকার হাইওয়ে পুলিশের ওসি শেখ শরিফুল আলম গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, ভোর থেকে সকাল ১০টার মধ্যে সেতুর উপরে তিনটি গাড়ি বিকল হয়ে পরায় এই যানজটের সৃষ্টি হয়। গাড়িগুলো সরাতে গিয়ে গড়ে ৪০ মিনিট করে সময় লাগায় সেতুর দুই পাড়েই শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। হাইওয়ে পুলিশের ওসি বলেন, মেঘনা ও গোমতি সেতুতে উঠতে গিয়ে গাড়িগুলোর গতি কম থাকায় স্বাভাবিকভাবেই যানবাহন আটকা পড়ে। তার ওপর গতকাল সকালে একপশলা বৃষ্টির কারণেও যানজটের ভয়াবহতা বেড়ে যায়। হাইওয়ে পুলিশের এক ট্রাফিক সার্জেন্ট জানান, মেঘনা সেতুর ওপর যানবাহন বিকল হওয়া ছাড়াও ভোররাতে আনারপুরা ও বাউশিয়া এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনার কারণে মহাসড়কের গজারিয়া ও সোনারগাঁও অংশে যানজটের সৃষ্টি হয়।
ভুক্তভোগী যাত্রীদের অভিযোগ, যানবাহনগুলো দুই সেতুতে ওঠার সময় পুলিশ সেগুলোকে একটু শৃঙ্খলাবদ্ধ করে দিলেই যানজটের সৃষ্টি হয় না। পুলিশের দায়িত্বহীনতার কারণে যানবাহনগুলো কার আগে কে যাবে সে প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠে। এক পর্যায়ে সেতুর মুখে গিয়ে সবগুলোই আটকা পড়ে। তখন কোনোটাই আর সামনের দিকে চলতে পারে না। সৃষ্টি হয় ভয়াবহ যানজটের। এদিকে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যানজটের ভোগান্তি নিয়ে ঘরমুখো যাত্রীরা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। একজন যাত্রী আক্ষেপ করে বলেন, ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা এখনও শুরু হয়নি। কোরবানির গরুর ট্রাকও সেভাবে আসা শুরু করেনি। এখনই যদি এই অবস্থা হয়, তবে আর দুদিন পর থেকে কী হবে? সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের নোয়াখালী রুটের বাসের এক মালিক বলেন, সামান্য কিছু ভুলের জন্য মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। সেতুতে ওঠার সময় গাড়িগুলোকে সারিবদ্ধ করে ওঠানোর দায়িত্ব পুলিশের। কিন্তু পুলিশ তা সঠিকভাবে পালন করে না। এই সুযোগে গাড়িগুলো এলোমেলোভাবে সেতুতে উঠতে গিয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। আর সেতুর ওপর গাড়ি বিকল হওয়ার প্রসঙ্গে ওই বাস মালিকের বক্তব্য হচ্ছে, হঠাৎ দুই একটা গাড়ি বিকল হতেই পারে। সেটাকে তাৎক্ষণিকভাবে সরানোর ব্যবস্থা করার দায়িত্বও পুলিশের। রেকার ডাকতে হবে কেন, দুই সেতুতে দুটো করে রেকার রাখার ব্যবস্থা থাকলে এত সময় লাগার কথা নয়।
সোনারগাঁয়ে তীব্র যানজট, যাত্রীদের দুর্ভোগ
সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) সংবাদদাতা : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁয়ের মেঘনা সেতুর ওপর একই দিনে তিনটি ট্রাক বিকল ও নাঙ্গলবন্দ এলাকার সড়ক দুর্ঘটনায় এক শিশুর নিহত হওয়ার জেরে মেঘনা সেতুর উভয় পাশে ও নাঙ্গলবন্দ থেকে মদনপুর পর্যন্ত তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার ভোর ৫টা থেকে দুপুর পর্যন্ত এসব এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। দীর্ঘ এ যানজটের কারণে মহাসড়কের উভয় পাশে শত শত যানবাহন আটকে ভোগান্তিতে পড়েছে হাজার হাজার যাত্রী। এ দিকে যানজটের কারণে সারাদিনই ধীরে ধীরে গাড়ী চলাচল করে।
কুমিল্লা তিশা পরিবহনের যাত্রী জয়নুল আবেদীন জানান, সকাল আটটায় গাড়ীতে উঠে মদনপুর থেকে যানজট ঠেলে মোগরাপাড়া বাসষ্ট্যান্ডে পৌঁছাতে সময় লাগলো প্রায় ৪ঘন্টায়। জানিনা কখন মেঘনা সেতু পার হয়ে কুমিল্লা পৌঁছাতে পারবো।
কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ওসি শরিফুর ইসলাম জানান, গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে মহাসড়কের অতিরিক্ত গরু বোঝাই ট্রাক ও পরদিন শুক্রবার বন্ধের কারণে অতিরিক্ত প্রাইভেটকার চলাচলের কারণে মেঘনা সেতু দিয়ে ধীর গতিতে গাড়ী চলাচল করছিল। শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে মেঘনা সেতুর উপর একটি লৌহা বোঝাই ট্রাক বিকল হয়ে যায়। এতে আধাঘন্টা সেতুর একপাশ গাড়ী চলাচল বন্ধ হয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ গিয়ে বিকল ট্রাকটিকে সচল করে যানজট কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে আসে। এর এক ঘন্টা পর আরেকটি কভারভ্যান সেতুর উপর বিকল হয়ে পড়ে। এতে আরেক দফা যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে সকাল ৯টার দিকে আবার সেতুর উপর আরেকটি ট্রাক বিকল হয়ে ঝাটজটের সৃষ্টি হয়। একই দিনে কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে সেতুর উপর তিনটি গাড়ী বিকল হওয়ায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এদিকে সকাল ১০টা থেকে বৃষ্টির কারণে ধীরগতিতে যানবাহন চলাচল করে। এতে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এদিকে সকাল আটটার দিকে নাঙ্গলবন্দ বাসষ্ট্যান্ডে রাস্তা পারপারের সময় একটি শিশু নিহত হওয়ায় ঘটনায় নাঙ্গলবন্দ ব্রিজ থেকে মদনপুর পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ওসি মনে করেন, ঈদকে সামনে রেখে অতিরিক্ত গরু বোঝাই ট্রাক, ট্রাকে অতিরিক্ত মালবহন ও মাসের প্রথম ছুটির দিনটি ঘিরে অতিরিক্ত প্রাইভেটকার ও যাত্রীবাহী গাড়ী চলাচল এবং ধীর গতির কারণে সেতুর ওপর তিনটি গাড়ী বিকল হওয়াই মূল কারণ যানজট সৃষ্টির।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
ইলিয়াস ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ২:০৬ পিএম says : 0
এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ আশা করছি
Total Reply(0)
Nijum ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ২:১৮ পিএম says : 0
durvoger kono sima nai !
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন