শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

প্রফেসর সাদেকা হালিমের বিরুদ্ধে এবার অভিযোগ

ঢাবিতে ফের গবেষণা চৌর্যবৃত্তি : ৩ নিবন্ধে যথাক্রমে ৮৮, ৪৪, ২৬ ভাগ মিল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৫ মার্চ, ২০২১, ১২:০৪ এএম | আপডেট : ১২:১৩ এএম, ৫ মার্চ, ২০২১

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. সাদেকা হালিমের বিরুদ্ধে গবেষণা চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ উঠেছে। গত বুধবার দেশের কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ঢাবি ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামানের নিকট বিষয়টি নিয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করার দাবি জানিয়েছেন তারা। অভিযোগের সাথে প্রবন্ধে চৌর্যবৃত্তির কয়েকটি কপিও সংযুক্ত করা হয়।

এতে বলা হয়, ‘পার্টিসিপেশন অব উইমেন ইন অ্যাকুয়াকালচার ইন থ্রি কোস্টাল ডিসট্রিক অব বাংলাদেশ: অ্যাপ্রোচেস টুওয়ার্ডস সাসটেইনেবল লাইভলিহুড’ শিরোনামে ১৫ পৃষ্ঠার ওই সম্মিলিত গবেষণা নিবন্ধটি চৌর্যবৃত্তি শনাক্ত করার সফটওয়্যার টার্নইটইনে যাচাই করে দেখা যায়, ৮৮ শতাংশ অন্য প্রকাশনার সঙ্গে মিল। যা ২০১২ সালে ‘ওয়ার্ল্ড জার্নাল অব অ্যাগ্রিকালচার সার্ভিসেসে’ প্রকাশিত হয়। এই প্রবন্ধে তার সহগবেষক হিসেবে ছিলেন ঢাবি আর্থ এন্ড এনভায়রোনমেন্ট সায়েন্সেস অনুষদের ডিন কাউছার আহমেদ ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষক শামীমা সুলতানা। নিবন্ধটি টার্নইটইন সফটওয়্যারের মাধ্যমে যাচাই করা হয়। অভিযোগের সাথে সংযুক্ত করা অনুলিপি প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। অভিযোগ মতে, নিবন্ধটির প্রায় ৮৮ শতাংশ বিভিন্ন জার্নাল ও আর্টিকেলে প্রকাশিত লেখার সঙ্গে মিল রয়েছে। যা অভিযুক্তদের গবেষণা নিবন্ধটি প্রকাশ হওয়ার আগেই প্রকাশিত হয়েছে বলে বলা হয়।

টার্নইটইনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রবন্ধটির ৮৮ শতাংশ নকলের মধ্যে Idosi.org নামে একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নিবন্ধ থেকে ৬১ শতাংশ নকল করা হয়েছে। এই নিবন্ধটি ২০১০ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। এছাড়া bfrf.org Ges bangladesh.nlembassz.org এ প্রকাশিত দুটি প্রবন্ধ থেকে ৮ শতাংশ করে, shrimpfoundation.org ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রবন্ধ থেকে তিন শতাংশ, csd.ulan.edu. bd থেকে দুই শতাংশ এবংpubs.iclarm.net, journals.sagepub.com, documents.mx, mafiadoc.com, rfldc-noakhali.org, www.difd.stir.ac.uk I www.bracresearch.org থেকে যথাক্রমে এক শতাংশ করে নকল পাওয়া গেছে।

অভিযোগপত্রে যুক্ত করা দ্বিতীয় সংযুক্তি সাদেকা হালিমের আরেকটি প্রবন্ধ। যার নাম ‘মাইনরিটিস এন্ড দ্যা স্টেট: চেঞ্জিং সোস্যাল এন্ড পলিটিকাল ল্যান্ডস্কাপ অব বেঙ্গল’। যেটি ২০১১ সালে প্রকাশ করা হয়। এই প্রবন্ধের ‘স্টাটাস অব হিন্দু ইউমেন: স্পেয়ারস অব হিউম্যান রাইটস এন্ড ভ্যায়োলেশনস’ অধ্যায়ের ১২ পৃষ্ঠার মধ্যে ৪৪ শতাংশ অন্য প্রবন্ধ থেকে, ইন্টারনেট থেকে ৩৯ শতাংশ, পাবলিকেশসন থেকে ১২ শতাংশ এবং স্টুডেন্টস পেপার থেকে ২১ শতাংশ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

অভিযোগপত্রের তৃতীয় সংযুক্তিতে রয়েছে সাদেকা হালিমের আরেকটি প্রবন্ধ ‘নেইদার সাস্টেনেন্স নর সিকিউরিটি: ইউমেন এন্ড ফরেস্ট্রি ইন বাংলাদেশ’ নামক প্রবন্ধটি। যা ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর উপস্থাপন করা হয়েছে। এই প্রবন্ধে ২৬ শতাংশ পুরোপুরি অন্য প্রবন্ধের সঙ্গে মিল পাওয়া গেছে। এর বাইরে ইন্টারনেট থেকে ২২ শতাংশ, বিভিন্ন পাবলিকেশন্স থেকে ৫ শতাংশ ও স্টুডেন্টস পেপার থেকে ৯ শতাংশ মিল পাওয়া গেছে।

অভিযোগগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে ঢাবি ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামানের নিকট একটি আবেদন দিয়েছেন কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের  শিক্ষক। এদের মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোস্তাক আহমেদ বলেন, সাদেকা হালিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষদের অধিকর্তা। তার বিরুদ্ধে কিছু গবেষণা প্রবন্ধে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ পেয়েছি। যা বিভিন্ন পরিসরে সমালোচনা হচ্ছে। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। এই অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত নিরপেক্ষ বিবেক দিয়ে বিষয়টির সুরাহা করা এবং এর মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম অক্ষুন্ন রাখার প্রত্যাশা করছি।

অভিযোগের বিষয়ে প্রফেসর ড. সাদেকা হালিম বলেন, এরকম একটি অভিযোগ দেয়া হয়েছে জানতে পেরেছি। তবে ভিসি এখনও আমাকে জানাননি। এর আগে যেসব গণমাধ্যম আমার বিরুদ্ধে এসব লিখেছে আমি সেসব অফিসে রিজয়েন্ডার দিয়েছি। সেগুলোই আমার উত্তর। বিষয়গুলো অসত্য, বিভ্রান্তিকর। এগুলো মোটেই সত্য না। আমি কোনদিনও কোন পিএইচডি সুভারভাইজিন করিনি। যে পাবলিকেশন থেকে আমার লেখা প্রকাশিত হয়েছে তারা একটি আন্তর্জাতিক মানের পাবলিকেশন। তারা যথাযতভাবেই প্রেজারিজম চেক করে প্রকাশ করে। যারা অভিযোগ করেছেন তাদের বিরুদ্ধে লিগ্যাল ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান তিনি। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, আমি অভিযোগটি পেয়েছি। বিষয়টি দেখব।

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (14)
সবুজ ৫ মার্চ, ২০২১, ৩:০৩ এএম says : 0
কিছু বলার নেই
Total Reply(0)
তানবীর ৫ মার্চ, ২০২১, ৩:০৪ এএম says : 0
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষকদের যদি এই অবস্থা হয় তাহলে দেশের কপালে যে কি আছে তার আল্লাহেই ভালো জানেন
Total Reply(0)
Md. Ataur Rahman ৫ মার্চ, ২০২১, ৮:২৪ এএম says : 0
অভিযোগগুলো পড়লে বুঝা যায় বর্তমান বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক অবস্থার সাথে দারুণ মিল আছে। কাজেই চিন্তার কিছু নেই।
Total Reply(0)
Md. Ataur Rahman ৫ মার্চ, ২০২১, ৮:৩৭ এএম says : 0
তাইতো বলি ঢাবির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের ভর্তি পরীক্ষার অনিয়ম / প্রশ্ন আউটের অভিযোগ কেন প্রতি বছরই পত্র পত্রিকায় দেখা যায়।
Total Reply(0)
Md Masud Kabir ৫ মার্চ, ২০২১, ৮:৩৮ এএম says : 0
এই ক্ষমতাবান নারী আওয়ামী লীগের .... । দলীয় লেবাসে এরা জাতির সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে । এরা কভিড ভাইরাসের চেয়েও ভয়াবহ দেশের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে । জাতি এদের কারণে পথভ্রষ্ট হচ্ছে ।
Total Reply(0)
Jabbar Ahmed ৫ মার্চ, ২০২১, ৮:৩৮ এএম says : 0
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক হওয়ার আসল যোগ্যতা হলো "রাজনৈতিক চামচামি"। আর সার্টিফিকেট বিক্রির নাম "জাতীয় শিক্ষা নীতি"।
Total Reply(0)
Hr Harun ৫ মার্চ, ২০২১, ৮:৩৮ এএম says : 1
প্রফেসর সাদেকা হালিম একজন মার্জিত ব‍্যক্তিত্ব‍্য এবং যথেষ্টই জ্ঞানী মানুষ। এই সব অভিযোগ সঠিক না।
Total Reply(0)
Jomadder Mizan ৫ মার্চ, ২০২১, ৮:৩৮ এএম says : 0
উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের ব্যাপারে একের পর এক এ অনৈতিকতার অভিযোগ মোটেও ভালো লক্ষণ নয়।
Total Reply(0)
মুস্তাইন বিল্লাহ সিরাজী ৫ মার্চ, ২০২১, ৮:৩৯ এএম says : 1
২৬ টি বর্ণের মাধ্যমে নিজের ভাব তথা গবেষণার কাজ সম্পাদিত হয়। সে ক্ষেত্রে কারো না কারোর সাথে হুবহু মিলে যেতে পারে। এতে দোষের কি আছে? ঘটনা কাকতালীয়। হৈচৈ করে লাভ নেই। সাবাই সামিয়া
Total Reply(0)
জা চৌধুরী ৫ মার্চ, ২০২১, ৮:৩৯ এএম says : 0
এসমস্ত চোর শিক্ষকদের হতে ছাত্ররা ভালো কিছু শিখতে পারবে না। এরা জাতির মেরুদন্ড ভেঙে দিচ্ছে ।
Total Reply(0)
মুফতী আবিদুর রহমান ৫ মার্চ, ২০২১, ৭:৩৫ পিএম says : 0
কে তোমায় বলে ডাকাত বন্ধু কে তোমায় চোর বলে চারি দিকে বাজে ডাকাতি ডঙ্কা চোরেরই রাজ্য চলে চোর ডাকাতের করেছে বিচার কোন সে মহারাজ জিজ্ঞাসা কর বিশ্ব জুড়ে কে নহে দস্য আজ। বিচারক তবু ধন্ডবিধি ধর ছোটদের সব চুরি করে আজ বড়রা হয়েছে বড় _______কাজি নজরুলের 'চোর ডাকাত' কবিতাটি হামেশা সমসাময়িক। ধন্যবাদ কাজেবা (কারন সাদেকা মানে তো সত্যবাদী/বান্ধবী তাই কাজেবা বল্লাম যার তরজমা হলো চুন্নি চুরি করনে ওয়ালী নারী) কবি নজরুল কবিতাকে আপন কর্মগুণে সমসাময়িক করে দেখানোর জন্য।
Total Reply(0)
Alamgir Zafri ৬ মার্চ, ২০২১, ৮:০০ এএম says : 0
মনে হয় সবাই জিন্জিরার কাজে ঝুকে পড়েছেন । এটা জাতির মোটেই কাম্য নয়।
Total Reply(0)
Mukter Hossain ৬ মার্চ, ২০২১, ১:৪২ পিএম says : 2
যে পাবলিকেশনগুলোতে সাদেকা হালিমের লেখা গুলো প্রকাশিত হয়েছে তারা কোন লেজচাটা পাবলিকেশন নয়। আপনার লেখা ইউনিক না হলে লাখ টাকা দিয়েও সেখানে প্রকাশ করতে পারবেন না। তারা আপনার আমার বাবার গোলামী করে না। আমার কথা হচ্ছে, যদি চোর্যবৃত্তিও হয় সেই পাবলিকেশন কেন অভিযোগ করছে না। নাকি আমার দেশের মানুষ এতই উচ্চ মানের গবেষক যাদের দক্ষতা আন্তর্জাতিক জার্নালিস্টদের থেকেও অনেক অনেক বেশি। এক দশক পর তাদের এমন অভিযোগ করার কারণ কি, নাকি তাদের চের্যবৃত্তির শতকরা ভাগ বের করতেই এক দশক লাগল।।।
Total Reply(0)
Abusaleh Muhammadmusa ৭ মার্চ, ২০২১, ৫:৫০ পিএম says : 0
ভার্সিটিগুলোতে তো সবাই রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত, গবেষণা করার সময় কই!!!
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন