শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

মহাকাশ জয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিস্ময়কর সাফল্য

সরদার সিরাজ | প্রকাশের সময় : ৬ মার্চ, ২০২১, ১২:০১ এএম

একের এক দেশ ছুটে চলেছে ভিনগ্রহে তথা চাঁদ, মঙ্গল ইত্যাদিতে। আর মহাকাশ তো মানুষের প্রধান কেন্দ্র হতে চলেছে। কেউ ইচ্ছা করলেই সেখানে যেতে পারবে যখন-তখন। সে জন্য স্পেস-এক্স নবযান প্রস্তুত হচ্ছে। নির্ধারিত ভাড়া দিলেই নিয়ে যাবে ও নিয়ে আসবে। এমনকি মহাকাশে মুলা চাষে সফলও হয়েছে নাসা। মহাশূন্যে পৃথিবীকে ঘিরে ঘুরতে থাকা কৃত্রিম উপগ্রহ ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনের প্রতিকূল পরিবেশে তারা এই সাফল্য পেয়েছে। বলা হচ্ছে, চাঁদ ও মঙ্গলে মানুষের বসতি স্থাপনের লক্ষ্য বাস্তবায়নে পরীক্ষামূলকভাবে বিশেষ ব্যবস্থায় মহাশূন্যে সবজি চাষ করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন মহাকাশ মিশনে মাসের পর মাস কাটাতে হয় নভোচারীদের। সেখানে তারা যাতে প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ পান তার জন্যও এই প্রচেষ্টা। ফ্লোরিডার মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র থেকে নাসার স্পেস এক্স-এর ড্রাগন মহাকাশযান সফলভাবে মহাকাশে রওনা দেয় গত ১৫ নভেম্বর, যার ভেতরে আছেন চার মহাকাশচারী। এদের তিনজন আমেরিকার এবং একজন জাপানের। পরের দিনই তারা মহাকাশের স্পেস স্টেশনে পৌঁছেছেন। সেখানে তারা অন্য মহাকাশচারীদের সঙ্গে আগামী ছয় মাস কাজ করবেন। তারপর ড্রাগনে চড়েই তাঁরা ফিরে আসবেন পৃথিবীতে। এতদিন মহাকাশের স্পেস স্টেশনে মহাকাশচারীদের আনা নেওয়ার কাজ করতো রাশিয়ার সয়ুজ মহাকাশযান। স্পেস এক্স-এর ড্রাগন তাতে পরিবর্তন আনলো। উপরন্তু এটি রাশিয়ার মহাকাশযানের চেয়েও বেশি দ্রুত গতির। মহাকাশ থেকে ইন্টারনেট সেবা দিতে চলেছে মার্কিন কোম্পানি টেসলার। সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক গত ২৮ এপ্রিলে বলেন, শিগগিরই মহাকাশ থেকে ইন্টারনেট সেবা চালু করতে যাচ্ছে স্টার লিংক উপগ্রহগুলোর মাধ্যমে। মাস্কের কোম্পানি স্পেস এক্সের এক টুইটে বলা হয়েছে, স্টার লিংক উপগ্রহগুলো বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট সরবরাহ করতে প্রস্তুত। স্টার লিঙ্ক এমন স্থানে উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সরবরাহ করবে যেখানে অ্যাক্সেস অবিশ্বাস্য, ব্যয়বহুল বা দুর্লভ। যুক্তরাষ্ট্রে চলতি বছরের আগস্ট থেকেই ইন্টারনেট সেবা দিতে পারবেন তাঁরা। শুরুতে প্রাইভেট বিটা এরপর পাবলিট বিটা সংস্করণ চালু করা হবে’। স্টার-লিংক মূলত একগুচ্ছ ইন্টারনেট পরিষেবা-দাতা উপগ্রহ, যা পৃথিবীর কক্ষপথে ইন্টারনেট অ্যাক্সেস দেওয়ার জন্য পরিভ্রমণ করছে। এর আগে গত বছর আমাজনের উদ্যোক্তা জেফ বেজোস এ ধরনের ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করার ঘোষণা দেন। বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেট সুবিধা বঞ্চিত সম্প্রদায়কে ইন্টারনেট সরবরাহে আমাজন প্রায় ৩,২৩৬টি উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করার পরিকল্পনা করেছে’। ইতোপূর্বে চীন জানিয়েছে, তারা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে মহাকাশ থেকে সারাবিশ্বে ইন্টারনেট সুবিধা দেবে। মহাকাশে সৌরবিদ্যুৎ তৈরি করে পৃথিবীতে পাঠানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে পেন্টাগণ। মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘ভার্জিন গ্যালাক্টিকে’র পাঠানো মহাকাশযানের মাধ্যমে আমার, আপনার সেই ভালোবাসার বার্তা পৌঁছে দেওয়া হবে মহাকাশে। আমাদের প্রেমিক বা প্রেমিকা অথবা খুব কাছের আত্মীয়পরিজন, প্রতিবেশীকে পাঠানো সেই বার্তার জবাবও পাওয়া যাবে। মহাকাশের সেই ‘রানারে’র নাম ‘ইউনিটি’। ভার্জিন গ্যালাক্টিক এই অভিযানের নাম দিয়েছে ‘মেক স্পেস ফর লাভ’। সংস্থাটির এক পদস্থ কর্মকর্তা বলেছেন, বহু প্রাণী বা উদ্ভিদের মতোই পৃথিবী থেকে উত্তরোত্তর বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে ভালোবাসা, প্রেম। বাড়ছে যুদ্ধ, প্রতিযোগিতা, হিংসা ও বৈষম্য। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই এ অভিনব পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রথমবারের মতো সম্পূর্ণ বেসরকারি উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে যাবেন তিন ব্যক্তি। অ্যাক্সিওম স্পেস নামের মার্কিন মহাকাশ ভ্রমণ প্রতিষ্ঠানের আয়োজনে স্পেস এক্স রকেটে মহাকাশে যাবেন তাঁরা। গত ২৬ জানুয়ারি এটা ঘোষণা করা হয়েছে। তারা হলেন, মার্কিন রিয়েল এস্টেট ও প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ল্যারি কনর, কানাডীয় বিনিয়োগকারী মার্ক প্যাথি ও ইসরায়েলি ব্যবসায়ী আইতান স্টিবি। এই ভ্রমণের জন্য তাঁরা প্রত্যেকে সাড়ে পাঁচ কোটি ডলার খরচ করবেন। বেসরকারি মহাকাশ অভিযানে সম্ভাব্য নভোচারীদের তালিকায় গত বছর হলিউড তারকা টম ক্রুজের নাম জানিয়েছিলেন নাসার এক শীর্ষ কর্মকর্তা। মহাকাশ স্টেশনে চলচ্চিত্রের শুটিং করার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন টম। তবে উক্ত ঘোষণায় টম ক্রুজের নাম উল্লেখ করেননি অ্যাক্সিওমের কর্মকর্তারা। তাদের অভিযান পরিচালনার কথা ছিল চলতি বছরের অক্টোবরে। তবে পিছিয়ে আগামী বছরের জানুয়ারিতে হতে পারে।মহাকাশ স্টেশনে বছরে দুটি বেসরকারি অভিযান চালাতে চায় অ্যাক্সিওম। ২০২৪ সাল থেকে মহাকাশ স্টেশনে বসবাসের উপযোগী নিজস্ব খুদে কামরার ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা তাদের। নাসা এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সহযোগীদের জন্য ব্যবহৃত একটি অংশ তখন আলাদা করা হবে। কতিপয় দেশ মহাকাশে শ্রেষ্ঠত্ব সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের নভোযান মঙ্গলগ্রহে অবতরণ করেছে পৃথকভাবে। নবযানগুলোর রোবট মঙ্গলের বিভিন্ন ছবিও তুলে প্রেরণ করছে বিশ্বে।খবরে প্রকাশ, সংযুক্ত আরব আমিরাতের হোপ নামের যানটি মঙ্গলের কক্ষপথে প্রবেশ করেছে। এটি পৃথিবী ছেড়ে গেছে সাত মাস আগে। এই যানটি উৎক্ষেপণের পর ঘণ্টায় এক লাখ ২০ কি.মি গতিতে মঙ্গল গ্রহের দিকে অগ্রসর হয়েছে। মঙ্গল ও পৃথিবীর মধ্যে দূরত্ব ১৯ কোটি কিলোমিটার। হোপের রোবট মঙ্গলের পরিবেশ ও বায়ুমন্ডলের ছবি সংগ্রহ করে তা পাঠাবে পৃথিবীতে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, ইউরোপ ও ভারত মহাবিশ্বের ‘লাল গ্রহ’ নামে পরিচিত মঙ্গলে অনুসন্ধান চালিয়েছে। এর পর চীনের মঙ্গল অনুসন্ধান যান ‘থিয়েনওয়েন-১’ মঙ্গল গ্রহের প্রথম আলোকচিত্র পাঠিয়েছে। মঙ্গল যান আলোকচিত্রটি তুলেছে মঙ্গল থেকে ২২ লাখ কিলোমিটার দূর থেকে। ‘থিয়েনওয়েন-১’ উৎক্ষেপণ করা হয় গত বছরের ২৩ জুলাই। এটি মঙ্গল গ্রহকে প্রদক্ষিণ করবে, মঙ্গলের বুকে অবতরণ করবে এবং এর একটি রোভার মঙ্গলের বুকে চলাচল করবে। নাসার মহাকাশযান পারসিভেয়ারেন্স-এর রোবট গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সফলভাবে মঙ্গলে নামার পর সেখান থেকে ছবি এবং অডিও-ভিডিও পাঠাতে শুরু করেছে। তাতে ১০ সেকেন্ডের ঝাপটা বাতাসের শব্দ শোনা গেছে। গ্রহের বিষুব অঞ্চল, যার নাম জেযেরো, তার কাছে গভীর এক গহবরে এই রোবটকে নামানো হয়েছে। ছয় চাকার এই রোবট যান আগামী দু’বছর মঙ্গল গ্রহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করবে। প্রাচীন হ্রদ এলাকার মাটি পাথরের মধ্যে খনন চালিয়ে এটি অতীত অণুজীবের অস্তিত্ব সন্ধানের কাজ করবে। ধারণা করা হয় জেযেরোয় কয়েকশো’ কোটি বছর আগে বিশাল একটি হ্রদ ছিল। তাতে ছিল প্রচুর পানি। সম্ভবত সেখানে প্রাণের অস্তিত্বও ছিল। অ্যাটলাস ভি রকেটে করেই পারসিভারেন্সকে প্রেরণ করা হয় গত ৩০ জুলাই। নাসার দাবি মতে, পারসিভারেন্সই সব চেয়ে আধুনিক মহাকাশযান। নাসা ‘মার্স এক্সপ্লোরেশন রোভারস’ নামে একটি মহাকাশযান ২০০০এর প্রথম দিকে মঙ্গল গ্রহে পাঠিয়েছিল ‘পানির সূত্র’ ধরে অনুসন্ধানের কাজে। অপরচুনিটি ও স্পিরিট নামে দুটি মিশন তরল পানির উপস্থিতি সম্পর্কে ব্যাপক ভূতাত্তি¡ক প্রমাণ সংগ্রহ করেছিল। এর পর কিউরিওসিটি রোভার ২০১২ সালে মঙ্গলে অবতরণ করেছিল এবং গহবরের যে অংশে সেটি নেমেছিল, সেটি একসময় পানিতে ভরা ছিল এবং দেখেছিল যে সেখানে জীবনের অস্তিত্ব থাকার উপকরণ রয়েছে। ওই রোভার এমন জৈব অণুর সন্ধান পেয়েছিল, যাতে জীবনধারণের উপযোগী কার্বন রয়েছে।নাসার গবেষণাগার জেট প্রোপালসান ল্যাবের পরিচালক মাইক ওয়াটকিন্স বলেছেন, পারসিভেয়ারেন্সের এই মিশনের প্রথম কয়েকদিন খুবই তাৎপর্যপূর্ণ হবে। কারণ এই প্রথম মঙ্গল গ্রহের গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশে পৃথিবীর প্রথম প্রতিনিধি গিয়ে পৌঁছেছে, যেখানে আগে কেউ যায়নি।

২০৫০ সালের মধ্যে স্পেস এক্স ১ মিলিয়ন মানুষকে মঙ্গল গ্রহে পৌঁছানোর পরিকল্পনা করেছে স্টার শিপ রকেটের মাধ্যমে। সে মতে, মঙ্গলের উদ্দেশে প্রতিদিন তিনটি আকাশযান উড়াল দিবে। অর্থাৎ বছরে প্রায় ১ হাজার ফ্লাইট। প্রতিটিতে প্রায় ১০০ ব্যক্তি মঙ্গলে যেতে পারবেন। ইলন মাস্ক জানিয়েছেন, মঙ্গলে বসতি স্থাপনে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ১০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হবে। তিনি গত অক্টোবরে আরও বলেছেন, মঙ্গলে যাওয়ার রকেট প্রস্তুতির কাজ এগিয়ে চলেছে। অপরদিকে, মঙ্গল গ্রহে মানুষের বসতি স্থাপনে স্টার লিঙ্ক স্যাটেলাইট মুখ্য ভূমিকা নেবে। অর্থাৎ এ সংস্থা পৃথিবীর পাশাপাশি মঙ্গল গ্রহেও ইন্টারনেট সরবরাহ করতে চাইছে, যা দুই গ্রহের মানুষকে জুড়তে সহায়তা করবে। মানুষ মঙ্গল গ্রহে পৌঁছে গেলে তাদের সঙ্গে পৃথিবীর মানুষের কথা বলা দরকার হবে। স্টার লিঙ্ক স্যাটেলাইট এ কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।মঙ্গল গ্রহের কাছ থেকে ঘুরে এলো ইলন মাস্কের টেসলা ব্র্যান্ডের গাড়ি। ২০১৮ সালে মহাশূন্যের উদ্দেশে পৃথিবী ছেড়ে যাওয়া স্পেস এক্সের একটি ফ্যালকন হেভি রকেটে গাড়িটি পাঠানো হয়। গাড়িটির চালকের আসনে ‘স্টার ম্যান’ নামের একটি পুতুল বসানো আছে।গত ৮ অক্টোবর টুইটারে স্পেস এক্স জানায়, এই প্রথম মঙ্গলের কাছাকাছি তথা ৫০ লাখ মাইলের মধ্যে পৌঁছেছিল টেসলা। নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরি হরাইজনস সিস্টেম ব্যবহার করে স্পেস এক্স রকেটটির অবস্থান পর্যবেক্ষণ করছেন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড-স্মিথসোনিয়ান সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের জ্যোতির্বিদ জোনাথান ম্যাকডাওয়েল। টুইটারে তিনি লিখেছেন, গাড়ি সমেত রকেটটি এখন পর্যন্ত ডিম্বাকার কক্ষপথে সূর্যকে প্রায় ১.৭৫০৭ বার প্রদক্ষিণ করেছে। পৃথিবী থেকে সেটির দূরত্ব ৩.৭০ কোটি মাইল। ২.৮ বছর আগে পৃথিবী ছেড়ে যাওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত পাড়ি দিয়েছে ১৩০ কোটি মাইল। ২০৪৭ সালে এটা পৃথিবীর ৫০ লাখ মাইলের মধ্যে আসবে। মার্কিন কিশোরী এলিজা কারসন হবে ২০৩৩ সালে মঙ্গলে যাওয়া পৃথিবীর প্রথম মানুষ।সে তার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য ইতোমধ্যেই নাসার ১৪ টি দর্শনার্থী কেন্দ্র ঘুরে দেখার সুযোগ পেয়েছে। এলিজা বলে, Always Follow Your Dream and Do not let Anyone Take it From You ২০২৩ সাল নাগাদ মঙ্গল অভিযানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে নেদারল্যান্ডসের কোম্পানি ‘মার্স ওয়ান’। সেই লক্ষ্যে টিকেট বিক্রি শুরু করেছে তারা। এখন পর্যন্ত আবেদন করেছে দুই লাখের বেশি মানুষ। এর মধ্যে এক লাখ ৫৮ হাজার জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হয়েছে। পরিকল্পনা অনুসারে, আবেদনকারীদের মধ্যে থেকে প্রথম ৪০ জনকে নির্বাচন করা হবে। প্রশিক্ষণ শেষে চূড়ান্তভাবে চারজনকে বাছাই করা হবে। এরপর ২০২৩ সালে চার নভোচারীর প্রথম দলটি মঙ্গলে যাবে। এরপর প্রতি দুই বছর পরপর তাদের সঙ্গে যোগ দেবে নতুন দল। এখনকার রকেট চালিত যানে যেতে সময় লাগবে নয় মাস। মঙ্গলে নাসা যে মনুষ্যবিহীন মহাকাশযান পাঠিয়েছে সেগুলো পৌঁছতে ১২৮ দিন থেকে ৩৩৩ দিন সময় নিয়েছে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সকাল ৬টা ২৯ মিনিটে চীনের প্রথম মঙ্গল সন্ধ্যানযান ‘থিয়ান ওয়েন-১’-কে তৃতীয় বারের মতো ব্রেক কসে থামানো হয়েছে। এটি এখন মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথে ৩মাস ধরে অবস্থান করবে। ২০২০ সালের ২৩ জুলাই সাফল্যের সঙ্গে নিক্ষেপের পর থেকে এটি ২১৫ দিন ধরে উড়েছে, যা পৃথিবী থেকে ২৩ কোটি ২০ লাখ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।


গত ২৪ নভেম্বর চাঁদের পথে যাত্রা করে চীনের ছাং এ-৫ মহাকাশযান।তার পর গত ৩০ নভেম্বর চাঁদের মাটির নমুনা সংগ্রহ শেষে উচ্চ ক্ষমতার ক্যামেরা নিয়ে ফটোগ্রাফিতে নেমেছিল চীনের চেঞ্জ-৫ স্পেস প্রোব। তার পর চাঁদের বুকে স্থাপন করা হয় হলুদ তারকাখচিত চীনা লাল পতাকা। এর অর্ধশতকেরও আগে চাঁদের বুকে নেমেছিলেন মার্কিন মহাকাশচারীরা। সেখানে পুঁতেছিলেন তারা মার্কিন পতাকা। অ্যামেরিকা, রাশিয়ার পর চীনই হবে বিশ্বের তৃতীয় দেশ, যারা চাঁদ থেকে পাথর এনেছে। চীন ২০২২ সালে মহাকাশ কেন্দ্রও স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে। তারপর ২০২৯ সালে হবে তাদের বৃহস্পতি অভিযান। ভারতের রাজস্থানের ধর্মেন্দ্র আনিজা বিবাহ বার্ষিকীতে স্ত্রী স্বপ্না আনিজাকে ৩ একর জমি উপহার দেন গত ২৪ ডিসেম্বর। নিউ ইয়র্কের লুনা সোসাইটি ইন্টারন্যাশনালের কাছ থেকে তিনি এই জমি কিনেছিলেন।এর কয়েক মাস আগে নিরাজ কুমার চাঁদে জমি কিনেছেন। এর আগে শাহরুখ খান ও সুশান্ত সিং রাজপুতও চাঁদের জমি কিনেছেন। এছাড়া, বিশ্বের আরও বহু মানুষ চাঁদে জমি কিনেছেন। ১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই অ্যাপোলো-১১-তে চেপে নভোচারী নীল আর্মস্ট্রং, অ্যাডুইন অলড্রিন ও মাইকেল কলিন্স চাঁদে যান সর্বপ্রথম। ফিরে আসার সময় তাঁরা গবেষণার জন্য কয়েকটি পাথর ও কিছু ধূলিকণা নিয়ে আসেন, যা নিউইয়র্কের আমেরিকান মিউজিয়াম অব ন্যাশনাল হিস্ট্রিতে রাখা আছে।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দিয়েছেন,তাদের রকেট চাঁদে যাবে ২০২৩ সালে এবং আগামী ১০ বছরের মধ্যে মহাকাশে বন্দর তৈরি করবে তারা। তিনি আরও বলেছেন, ‘আমাদের পা থাকবে মাটিতে, চোখ আকাশে। আমাদের শিকড় থাকবে বিশ্বে, আমাদের ডালপালা থাকবে মহাকাশে। চাঁদ থেকে শিলা খন্ডের ছোট একটি নমুনা সংগ্রহ করার দায়িত্ব পাওয়া একটি কোম্পানিকে মাত্র ১ ডলার দেবে নাসা। অবশ্য চাঁদের মাটি সংগ্রহণের জন্য চারটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে নাসা। সব মিলিয়ে চারটি কোম্পানির সঙ্গে মোট ২৫ হাজার ১ ডলারে চুক্তি করেছে নাসা। আর্টে মিস প্রোগ্রামের এই মাটি ব্যবহার করবে নাসা। ২০২৪ সালের মধ্যে একজন পুরুষ ও একজন নারীকে চাঁদে পাঠানোর কর্মসূচি এই আর্টে মিস।নাসা এই কর্মসূচিকে একটি বাণিজ্যিক রূপ দেয়ার চেষ্টা করছে। পৃথিবী গ্রহের বাইরের সম্পদ সংগ্রহ, বিক্রয় এবং ব্যবহারের জন্য একটি ব্যবসায়িক মডেল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগের অংশ হিসেবেই এভাবে প্রতীকী চুক্তি করছে নাসা। এই কর্মসূচিতে যুক্ত হওয়া অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক মাস্টেন স্পেস সিস্টেম এবং টোকিওভিত্তিক আই-স্পেস ও তার ইউরোপীয় সহযোগী। ৫০ গ্রাম থেকে ৫০০ গ্রাম চাঁদের মাটি সংগ্রহের বিনিময়ে সংস্থাগুলোকে আলাদাভাবে অর্থ দেবে নাসা। ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি চাঁদে অক্সিজেন ও জ্বালানি তৈরির যন্ত্র উদ্ভাবন করেছে, যা চাঁদের ধূলিকণাকে অক্সিজেনে রূপান্তর করবে। এটিকে পরবর্তী সময়ে বায়ু ও জ্বালানির জন্য ব্যবহার করা যাবে। এতে চাঁদে বসবাসকারী ও নভোচারীদের সুবিধা হবে। অন্যদিকে, ক্যালিফোর্নিয়ার সিলিকন ভ্যালিতে নাসার এমস রিসার্চ সেন্টারে ‘মাইকো-আর্কিটেকচার প্রজেক্ট’-এর প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর লিন রথসচাইল্ড জানিয়েছেন, চাঁদ ও মঙ্গলে বসবাসের জন্য যে ঘরবাড়ি বানানো হবে, সেটা হবে ইট, সিমেন্ট, বালি, চুন-সুরকি দিয়ে নয়-ছত্রাক দিয়ে। মাটির নিচে থাকা ছত্রাকের যে অংশটিকে আমরা দেখতে পাই না সাধারণত, সেই ‘মাইসেলিয়া’ দিয়ে নির্মিত হবে ঘর। আর সেটিই হলো ছত্রাকের মূল অংশ। তিনি আরও বলেন, চাঁদ আর মঙ্গলে সেসব ঘরবাড়িতে শুধু আমরাই থাকব না; থাকবে অন্য জীবও। যেমন ফ্ল্যাটে ও বাড়িতে মাছের অ্যাকুরিয়াম থাকে, চাঁদ-মঙ্গলে আমাদের ঘরবাড়িতেও তেমনই রাখা থাকবে নানা ধরনের অণুজীব। চাঁদ ও মঙ্গলে বসবাসের জন্য ঘরবাড়ি বানানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে ইতোমধ্যেই।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Jack+Ali ৬ মার্চ, ২০২১, ১২:৪৩ পিএম says : 0
We muslim do not have any research institue where we can carry out research and we would have manufacture all our need like Plane, car, Rail, road, bridge all the arms and ammunitions, in America they carry out research on thousands thousands of things which we muslim even cannot imagine. Our government made us Dumb, Deft and Blind.
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন