বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কার্টুনিস্ট কিশোরকে নির্যাতনের খবর ভাইরাল, ক্ষোভে উত্তাল সামাজিক মাধ্যম

সোশাল মিডিয়া ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৫ মার্চ, ২০২১, ৮:০২ পিএম

অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের হাতে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হওয়ার যে বর্ণনা দিয়েছেন তা ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। নৃশংস এই নির্যাতনের ঘটনায় ক্ষোভে উত্তাল নেট দুনিয়া। ফেসবুকে অনেকেই গা শিওরে ওঠা এই নির্যাতনের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা, ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

জামিনে মুক্তির পর বৃহস্পতিবার একটি গণমাধ্যমকে বিভীষিকাময় সেই নির্যাতনের বর্ণনা দেন কিশোর। জানান, ২০২০ সালের ২ মে কাকরাইলের বাসা থেকে অজ্ঞাতনামা ১৬–১৭ জন তাকে তুলে নিয়ে যায়। তারা তাকে অজ্ঞাত স্থানে ৬৯ ঘণ্টা রেখে কার্টুন নিয়ে প্রশ্ন করে এবং মারধর করে। একপর্যায়ে প্রচণ্ড জোরে কানে থাপ্পড় দেয়। কিছুক্ষণের জন্য তিনি বোধশক্তি হারিয়ে ফেলেন। বুঝতে পারেন, কান দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। এরপর স্টিলের পাত বসানো লাঠি দিয়ে পায়ে পেটাতে থাকে তারা।

কাকরাইলের বাসা থেকে ওই দিন কারা কিশোরকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন, তা এখনো জানেন না তিনি। জামিনে মুক্তির পর রাজধানীর কাকরাইলে নির্যাতনের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। কিশোরকে নির্যাতনের এই খবর এখন হট টপিক্স সামাজিক মাধ্যমে।

এদিকে, মামলার এজাহার অনুযায়ী, কাকরাইলের বাসা থেকে ৫ মে বেলা আড়াইটায় র‌্যাব–৩ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। মাঝের ৬৯ ঘণ্টা কোথায় ছিলেন, সেটা জানেন না কিশোর। তাঁর অভিযোগ, ওই সময়ে কয়েক দফায় তাঁর ওপর চলে নির্যাতন।

গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার তার ভেরিভাইড আইডিতে কিশোরকে নির্যাতনের খবর শেয়ার দিয়েছেন। যেখানে লেখা আছে, ‘‘মুশতাকের শরীর থেকে প্রস্রাবের কড়া গন্ধ আসছিল। কিছুদিন আগে তাকেও তুলে নেয়া হয়েছিল এবং প্রচুর পেটানো হয়েছিল। তার যৌনাঙ্গে ইলেক্ট্রিক শক দেয়া হয়েছিল। মেঝেতে খবরের কাগজ ছিল। আমি মুশতাককে বললাম এই কাগজ দিয়েই নিজেকে পরিষ্কার করে নিন। এরপর মুশতাক তার আন্ডারওয়্যার খুলে ছুড়ে ফেললেন - আমি দেখলাম তাতে মলমূত্র লেগে আছে। মুশতাক বললেন, নির্যাতন চালানোর সময় তিনি নিজের প্যান্টে মলত্যাগ করে ফেলেছিলেন।- ডেইলি স্টার থেকে ভাষান্তরিত কিশোর কবিরের সাক্ষাৎকারের অংশবিশেষ। মূল লিংক কমেন্টে।’’

মোহাম্মাদ রহমান মিজান লিখেছেন, ‘‘এক ভয়াবহ অন্ধকারাচ্ছন্ন, আইনবিহীন রাষ্ট্র ব্যবস্থায় আমাদের দেশ আজ নিমজ্জিত। কার্টুনিস্ট কিশোরের কথাগুলি পড়লে মনে হয় না সে কোন স্বাধীন সুস্থ দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে বন্দী হয়েছিল, এ যেন পাকিস্তানি বর্বর বাহিনী বা রাজাকার আলবদরের হাতে বন্দী হওয়া '৭১ এর কোন মুক্তিযুদ্ধার কাহিনী! কার্টুন আঁকা - তা ও একজন দুর্নীতিবাজ ব্যাংকখোর নিয়ে বিদ্রুপ করায় কি ভয়াবহ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেছিল রাষ্ট্রীয় বাহিনী! একটি স্বৈরাচারী দুর্নীতিবাজ সরকারকে বাচাতে জনগনের টাকায় পালিত হওয়া রাষ্ট্রীয় বাহিনীর এমন কুখ্যাত বর্বর নির্যাতন অগ্রহণযোগ্য, অসহনীয়। প্রতীকী হলেও কি এই ... বাহিনীর বিরুদ্ধে কি দেশের আদালতে মামলা করার নেই কোন সুশীল ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান?’’

পঙ্কজ দত্ত লিখেছেন, ‘‘এখন আমার মনে হচ্ছে এই সরকারের শাসন আমলে মানুষের উপর যেই অন্যায় অত্যাচার করা হচ্ছে তা পাকিস্তান শাসন কালকেও হার মানাবে। তাদের শাসন ব্যবস্থা পৃথীবির সব অত্যাচারি শাসকদের শাসনকালকে হার মানাবে বলে মনে হচ্ছে। সবারই মনে রাখা উচিত রাত যত গভীর হবে প্রভাত ততই সন্নিকটে। আর তাদের এই অত্যাচারের ফল ভোগ করতে হবে আমাদের মত সাধারণ মানুষকে যারা কোন পদ পদবী ভোগের জন্য দল করে না শুধু একজন মানুষকে ভালোবেসে আওয়ামীলীগ করে।’’

সাদিয়া আক্তার প্রিয়া ক্ষোভ জানিয়ে লিখেছেন, ‘‘আমাদের শরীরের চামড়া গন্ডারের চামড়া চেয়ে শক্ত হয়ে গেছে যে যতই আঘাত করো কিছুক্ষণ আমাদের মুখে মুখে থাকে এখন আর অন্তরে লাগেনা। সত্যি বলতে যার কষ্ট শুধু তারই কষ্ট অন্য কারোর কোন ব্যথায় প্রভাব পড়ে না। বাঙালি জাতি আমরা কিছুটা এমনই হয়ে গেছে চোখের সামনে মরে পড়ে থাকলেও শুধু মুখে মুখেই আমরা কষ্ট অনুভব করি। আসল কথা বলতে তো আমাদের অন্তর নেই।’’

কিশোরের অসহায় আর্তনাদের একটি ছবি শেয়ার করে মানিক সরকার লিখেছেন, ‘‘আমি এই ছবিটি দেখে বারবার ভাবছি, ছাত্রদলের নিহত মিলনের কেমন লাগছিলো, যখন রিমান্ডে নিয়ে ওর হাত-পায়ের বিশটি নখ উপড়ে ফেলা হচ্ছিলো! ছাত্রদলের জনির কেমন লেগেছিল যখন ছেলেটা রাজনীতি করবে না বলে জীবন ভিক্ষা চাওয়ার পরও ছেলেটার বুকে বিশটি গুলি করে ঝাঝড়া করে দেয়া হয়েছিল।’’

সাংবাদিক কাজী মুহাম্মাদ লিখেছেন, ‘‘প্রতিবাদ করছি, সঙ্গে সঙ্গে স্মরণ করে দিচ্ছি..। আজকে কারাগারে আটকে রেখে লেখক মুশতাক কে 'হত্যার' অভিযোগ ওঠেছে। কার্টুনিস্ট কিশোরকে নির্যাতনের খবর ভাইরাল। এসব অন্যায়ের প্রতিবাদ করছি। একই সঙ্গে সবার কাছে প্রশ্ন করছি এ নির্যাতন ও নির্যাতনে হত্যার ঘটনা বাংলাদেশে নতুন? এগুলো যুগ যুগ ধরে হয়ে আসছে না? আমরা কী করছি? ভিকটিম বিরুদ্ধ পক্ষের হলে চুপ থাকি। আর এতে নির্যাতন ও নির্যাতনে হত্যার সমর্থন পায় অপরাধী চক্র। আর নিজের পরিচিত ও পছন্দের লোক হলে প্রতিবাদ করি। অন্যেরা চুপ থেকে তামাশা দেখে। অপরাধী চক্র শয়তানের মতো দাঁত কেলিয়ে হাসতে হাসতে আরেকটি অপরাধের ছক আঁকে।’’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন