বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

তামাক হটিয়ে ভুট্টা চাষ খাগড়াছড়িতে

মো. ইব্রাহিম শেখ, খাগড়াছড়ি থেকে | প্রকাশের সময় : ৬ মার্চ, ২০২১, ১২:০০ এএম

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার প্রায় সব উপজেলাতেই ভুট্টা চাষে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখতে শুর করেছেন কৃষকরা। এক সময় বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ জুড়ে দেখা যেতো তামাকের চাষ। সেই তামাক চাষকে হটিয়ে বর্তমানে সেখানে জায়গা করে নিয়েছে ভুট্টার আবাদ। কম খরচে অধিক লাভের বিষয়টি বোঝার পর থেকে ভুট্টা চাষে আগ্রহী হয়েছেন কৃষকরা।

এক পরিসংখ্যান বলছে, দেশে মোট তামাক ব্যবহারকারী মানুষের সংখ্যা প্রায় চার কোটি। এই সংখ্যা মোট জনগোষ্ঠীর ৩৫.৩ শতাংশ। আর তামাক ব্যবহারের ফলে দেশের অর্থনীতিতে বছরে নিট ক্ষতির পরিমাণ প্রায় পৌনে তিন হাজার কোটি টাকা।
খাগড়াছড়ির দীঘিনালা, পানছড়ি, মাটিরাঙ্গা ও মানিকছড়ি মানেই তামাকের চাষ। কিন্তু ধীরে ধীরে দীঘিনালায় তামাকের রাজ্যে বাড়ছে ভুট্টার চাষ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর পরিবেশ নষ্টকারী তামাকের বিকল্প হিসাবে ২০১৮ সাল থেকে ভুট্টাচাষে প্রণোদনা দিয়ে আসছে। একদিকে কৃষি বিভাগের প্রণোদনা অন্যদিকে তামাকের চেয়ে লাভ বেশি হওয়ায় প্রতি বছরই ভুট্টা চাষ বাড়ছে।
চলতি বছর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ১৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে ২০ হেক্টর বেশি। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার ১৪০ মেট্টিক টন। প্রক্রিয়াজাত এবং বাজারজাতের নিশ্চয়তা পেলে এই এলাকায় আগামী দুই এক বছরের মধ্যে ভুট্টাচাষে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তারা।
চলতি মৌসুমে দীঘিনালায় ভুট্টার চাষ করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। আগের মৌসুমগুলোতে তামাকের ভালো দাম না পাওয়ার পাশাপাশি সরকারি প্রণোদনায় ভুট্টার চাষ শুরু করেছেন অনেক কৃষক। আবহাওয়া অনুক‚লে থাকায় ভুট্টার ফলনও ভাল হয়েছে।
দীঘিনালা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অতীতে যেসব জমিতে ব্যাপকহারে তামাকের চাষ হতো এ বছর সেসব জমিতে উন্নতজাতের ভুট্টার চাষ করা হয়েছে। তামাকের চেয়ে খরচ কম এবং লাভ বেশি হওয়ায় ভুট্টা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন উপজেলার অসংখ্য কৃষক।
কৃষকদের কয়েকজন জানান, প্রতি একর জমিতে ভুট্টা চাষ করতে খরচ হয় সর্বোচ্চ ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। উৎপাদন ভাল হলে প্রতি একরে উৎপাদিত ভুট্টার মূল্য আসবে প্রায় ৯০ হাজার টাকা। এ বছর সবচেয়ে বেশি ভুট্টার চাষ হয়েছে দীঘিনালা উপজেলার মেরুং ইউনিয়নে। আর উৎপাদনও হয়েছে ভাল।
কৃষক নুরুল আলম জানান, ‘কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রণোদনা এবং স্থানীয়ভাবে বাজারজাতের নিশ্চয়তা পাওয়ায় স্থানীয় কৃষকরা ভুট্টা চাষের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। আমার খরচ হয়েছে এক লাখ ৭০ হাজার টাকা। উৎপাদন ভাল হওয়ায় ভুট্টা বিক্রি করে পাওয়া যাবে প্রায় ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। তাছাড়াও স্থানীয় কৃষকদের উৎপাদিত প্রতি মন ভুট্টা ৬০০ টাকায় কিনে নেয়ার প্রতিশ্রæতি দিয়ে তামাক চাষে জড়িত অনেককে ভুট্টা চাষে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।’
বড় মেরুং এলাকার কৃষক মো. সুলতান ও আনোয়ার হোসেন জানান, তামাকের বিকল্প হিসাবে চলতি বছর পরীক্ষামূলকভাবে উন্নতজাতের ভুট্টা চাষ শুরু করেছেন। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বীজ ও সার দিয়ে সহযোগিতা করেছে। বাজারজাতের নিশ্চয়তা দেয়া হলে প্রণোদনা ছাড়াই তামাকের বিকল্প হিসাবে ভুট্টা চাষের প্রতি মনোযোগী হবেন কৃষকরা। কেননা তামাক চাষ করে অনেক কৃষক পথে বসেছেন।
মেরুং ইউনিয়নের দায়িত্বে নিয়োজিত উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা পরেশ চাকমা জানান, প্রণোদনা দিয়ে তামাকের বিকল্প হিসাবে ভুট্টা চাষের প্রতি কৃষকদের আকৃষ্ট করতে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছি। এর ফলে ২০১৮ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে এলাকায় ভুট্টা চাষ বাড়ছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওঙ্কার বিশ্বাস জানান, প্রণোদনা ছাড়াও চলতি বছর অনেক কৃষক ভুট্টার চাষ করেছেন। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ২৭ হেক্টর জমিতে ২০০ কৃষককে ভুট্টা চাষের জন্য প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। প্রণোদনা ছাড়া আরও ১১৮ হেক্টর জমিতে উন্নতজাতের ভুট্টার চাষ করা হয়েছে।
কৃষি বিভাগ বলছে, তামাক চাষের জমিতে অন্য ফসল সময়মতো চাষ করা যায় না। তামাক চাষের জন্য প্রয়োজন অধিক উর্বর জমি। রবিশস্যের জন্য আর সেই উর্বর জমি থাকে না। শেষ পর্যন্ত ফসলি জমির হার ক্রমান্বয়ে কমতে কমতে প্রান্তিকে চলে যায়। যেসব জমিতে আগে চাষ হতো ধান, গম, পিঁয়াজ, রসুন, আলু, পটল, সরিষা, পাটসহ মৌসুমি ফল। কিন্তু তামাক চাষ হচ্ছে প্রকৃতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। কৃষি বিভাগ সে অবস্থা থেকে কৃষকদের বের করার উদ্যোগ নিয়েছে।
গেøাবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভের (গ্যাটস) পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, বর্তমান দেশে মোট তামাক ব্যবহারকারী মানুষের সংখ্যা তিন কোটি ৭৮ লাখ। এই সংখ্যা মোট জনগোষ্ঠীর (১৫ বছর ও তদূর্ধ্ব) ৩৫.৩ শতাংশ। ঝুঁঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই হার অনেক বেশি। তামাক ব্যবহারের ফলে দেশের অর্থনীতিতে বছরে নিট ক্ষতির পরিমাণ প্রায় পৌনে তিন হাজার কোটি টাকা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন