ঈমানের পরই নামাজের স্থান। মহান আল্লাহ রাসুল (সা.)-কে মেরাজে ডেকে নিয়ে উম্মতের ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করে দিয়েছেন। গোটা উম্মতের জন্য মেরাজের সবচেয়ে বড় নেয়ামত হচ্ছে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। যারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবেন তারা পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজের সওয়াব লাভ করবেন। বিভিন্ন মসজিদে গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম ও খতিবরা এসব কথা বলেন। রাজধানীর মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজম কমপ্লেক্সে যথাযথ স্বার্থবিধি অনুসরণ করে জুমার নামাজে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মিজানুর রহমান জুমার বয়ানে বলেন, বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মেরাজের ঘটনা একটি মু’জেযা বা অলৌকিক ঘটনা। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা কোরআনে কারীমে বলেন, ‘তিনি পবিত্র (আল্লাহ), যিনি তাঁর বান্দাকে ‘ইসরা’ বা রাত্রিভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত। যার আশপাশ আমি বরকতময় করেছি। যাতে আমি তাকে আমার নিদর্শনসমূহ দেখাতে পারি। নিশ্চয়ই তিনিই সর্বশ্রোতা সর্বদ্রষ্টা।’ (সূরা বনি ইসরা, আয়াত: ১)।
মেরাজে দু’টি অংশ রয়েছে একটি হলো মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত যাকে পরিভাষায় বলা হয় ইসরা। আরেকটি হলো মসজিদুল আকসা হতে ঊর্ধ্ব জগতে গমন যাকে বলা হয় মেরাজ। এ মেরাজের ঘটনা স্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয় । বরং এটা আল্লাহর পক্ষ হতে তার হাবীবের জন্য এক বিশেষ উপহার। সুতরাং এর মধ্যে যুক্তিতর্ক খোঁজার কোনো অবকাশ নেই, যা নিয়ে অনভিজ্ঞ লোকেরা প্রশ্ন তোলে। এ কথা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মেরাজ জাগ্রত অবস্থায় ও সশরীরেই হয়েছে, যদি তা স্বপ্নে বা ঘুমন্ত অবস্থায় হতো তাহলে কাফেরররা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মিথ্যা অপবাদ দিত না, কিছু লোকেরা মুরতাদ হয়ে যেত না।
এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে মেরাজ সশরীরে ও জাগ্রত অবস্থায় হয়েছে। মেরাজের ঘটনা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনীত সকল বিষয়কে বিশ্বাস করতে আরো বেশি অনুপ্রাণিত করে। যেমনটি বিশ্বাস করেছিল আবু বকর সিদ্দীক (রাযি.)। আমরা যদি মজবুত ঈমানদার হতে পারি এবং আল্লাহর আদেশ ও নিষেধগুলোকে বাস্তবায়িত করতে পারি তাহলে আমরাও দুনিয়া এবং আখিরাতে সফলতা লাভ করতে পারব ইনশাআল্লাহ।
সিলেট বন্দর বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মুফতি মাওলানা মুশতাক আহমদ খান জুমার বয়ানে বলেন, কোনো নবীকে আল্লাহ বেহেশত দোযখ দেখাননি। মেরাজের মাধ্যমে স্বচক্ষে বেহেশত-দোযখ দেখিয়ে আল্লাহপাক মহানবী (সা.)-কে খাঁটি বন্ধুত্বের স্বীকৃতি প্রদান করেছেন। পরকালের সুখ-দুঃখের সব ঘটনা নবী (সা.)-এর সামনে তুলে ধরেছেন। সুতরাং কবরের আযাব, দোযখের শাস্তি এবং বেহেশতের শান্তির বিষয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই। খতিব বলেন, ঈমানের পরই নামাজের স্থান। নামাজ গুরুত্বপূর্ণ বিধায় রাসুল (সা.)-কে মেরাজে ডেকে নিয়ে উম্মতের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করে দিয়েছেন। উম্মতের জন্য মেরাজের সবচেয়ে বড় নেয়ামত হচ্ছে নামাজ। আল্লাহপাক সকলকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার তৌফিক দান করুন। আমীন!
রাজশাহী সদর সাহেব বাজার বড় মসজিদের খতিব প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা আব্দুল গনি জুমার বয়ানে বলেন, রজব মাস রাসুল (সা.)-এর মেরাজের মাস। মহান আল্লাহ তায়ালা আদম (আ.) থেকে নিয়ে ঈসা (আ.) পর্যন্ত বহুসংখ্যক আম্বিয়া (আ.) প্রেরণ করেছেন। তাদের কাউকে মহান আল্লাহপাকের আরশে আজিমে দাওয়াত করে নেননি এবং সরাসরি সাক্ষাৎও দেননি। একমাত্র আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)কেই দাওয়াত করে জিবরাইল (আ.)-এর মাধ্যমে স্বীয় দরবারে (আরশে আজিমে) আল্লাহপাক সাক্ষাৎ দিয়েছিলেন।
খতিব বলেন, আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, মহা পবিত্র সেই সত্তা যিনি স্বীয় বান্দাকে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত রাত্রির কিছু অংশে ভ্রমণ করিয়েছেন। যার চতুর্পাশে বরকতময় করেছেন। আল্লাহ তায়ালা তার কুদরতি নিদর্শনসমূহ প্রত্যক্ষ করান। নিশ্চিয়ই তিনি সর্বশ্রোতা এবং সর্বদ্রষ্টা। খতিব বলেন, মেরাজে আল্লাহপাক প্রথমে মানব জাতির জন্য দৈনিক ৫০ ওয়াক্ত নামাজ দান করেন। পরে কমিয়ে ৫ ওয়াক্ত নামাজ নির্ধারণ করেন। যেসব ঈমানদার ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবেন তারা ৫০ ওয়াক্ত নামাজেরই সওয়াব পাবেন। আল্লাহ সবাইকে ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার তৌফিক দান করুন। আমীন!
রাজধানীর উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টর মসজিদ আল মাগফিরাহ এর খতিব প্রখ্যাত মুফতি ওয়াহিদুল আলম আজ জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, জুমার দিনটি শুধুমাত্র উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য বিশেষ নিয়ামত। নবী (সা.) বলেছেন, জুমার দিন সকল দিনের নেতা। আল্লাহ তায়ালার নিকট বেশি দামি। ঈদুল আযহা এবং ঈদুল ফিতরের চেয়েও অধিক মর্যাদাশীল। এই দিনের পাঁচটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, এই দিনেই আল্লাহ তায়ালা আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করেছেন। এই দিনেই তাঁকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। এই দিনেই তাঁকে মৃত্যু দান করেছেন। এই দিনেই এমন একটি সময় আছে যে সময়ে বান্দা আল্লাহ তায়ালার কাছে হারাম বস্তু ছাড়া যা কামনা করে তা দেন। এই দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে। সকল নৈকট্য প্রাপ্ত ফিরিশতা, আকাশ, জমিন, বাতাস, পাহাড় ও সমুদ্র প্রত্যেকেই শুক্রবারে ভীত হয়ে পড়ে। (সুনানু ইবনে মাযাহ)।
নবী করীম (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিনে গোসল করে, আতর বা সুগন্ধি থাকলে ব্যবহার করে, উত্তম পোশাক পরিধান করে, অতঃপর মসজিদে গমন করে, মসজিদে গিয়ে সাধ্যমতো সুন্নাত-নফল নামাজ আদায় করে, কাউকে কষ্ট দেয় না, কারো ঘাড়ের ওপর দিয়ে যায় না, দুই মুসল্লির মাঝে সরিয়ে জায়গা করে না, এরপর নীরবে খুৎবা শোনে, তার এই জুমা থেকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত গুনাহসমূহ ক্ষমা হয়ে যায়। (সুনানু আবূ দাঊদ, সুনানু ইবনু মাযাহ)। খতিব জুমার দিনের বেশি বেশি দরুদ শরীফ পাঠ করা, মেসওয়াক করা, গোসল করা, আতর ব্যবহার করা, সবচেয়ে ভালো পোশাক পরিধান করা এবং হেঁটে মসজিদে যাওয়াসহ নেক আমলে মশগুল হবার অনুরোধ জানান। আল্লাহ তায়ালা আমাদের বেশি বেশি নেক আমল করার তৌফিক দান করুন। আমীন! ভোলা সদর নিজাম হাসিনা ফাউন্ডেশন জামে মসজিদের খতিব শাইখুল হাদিস আল্লামা এ কে এম মুশাররফ হুসাইন জুমার বয়ানে বলেন, ১০টি সহজ আমলের মাধ্যমে রাত জেগে তাহাজ্জুদ পড়ার সমপরিমাণ ছওয়াব আল্লাহ তায়ালা দান করবেন। এশা এবং ফজরের সালাত জামায়াতের সাথে আদায় করলে তাহাজ্জুদের সমপরিমাণ সওয়াব তার আমলনামায় লেখা হবে। হজরত ওসমান (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলে কারীম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি এশার সালাত জামায়াতের সাথে আদায় করল সে যেন অর্ধেক রাত পর্যন্ত দাঁড়িয়ে নফল সালাত আদায় করল, আর যে ব্যক্তি ফজরের সালাত জামায়াতের সাথে আদায় করল সে যেন সারারাত জেগে নফল সালাত আদায় করল।’ (মুসলিম)।
খতিব বলেন, যে ব্যক্তি জোহরের ফরজ সালাতের পূর্বের চার রাকাত সুন্নত নামাজ খুব যতœ সহকারে আদায় করবে তার আমলনামায় তাহাজ্জুদ সালাত আদায়ের সমপরিমাণ সওয়াব লেখা হবে। কেননা পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ সালাতের আগে ও পরে যে সুন্নত নামাজ রয়েছে তার মধ্যে জোহরের ফরজের আগে চার রাকাআত সুন্নত নামাজের গুরুত্ব অনেক বেশি। কোনো ব্যক্তি যদি রাতের যে কোনো সময় কোরআনুল কারীমের যে কোনো জায়গা থেকে ১০০ খানা আয়াত তেলাওয়াত করবে, তার আমলনামায় আল্লাহ তয়ালা তাহাজ্জুদের সওয়াব দান করবেন। খতিব জুমার দিনের ফজিলতসমূহের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, হযরত সাকাফী (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুলে পাক (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে এবং পায়ে হেঁটে মসজিদে যাবে এবং ইমামের নিকটবর্তী কোনো এক জয়গায় বসে ইমামের খুৎবাহ শুনবে কোনো বাজে কথা বলবে না, তার আমলনামায় আল্লাহতায়ালা প্রতি কদমে এক বছরের তাহাজ্জুদের সালাত এবং এক বছরের নফল রোজার সাওয়াব দান করবেন। (তিরমিজি, মাসনদে আহমদ)। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে উল্লেখিত ফজিলতপূর্ণ আমলগুলো পালন করার তৌফিক দান করুন। আমীন!
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন