বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

ইসলামী আন্দোলন তুরস্ক মডেল

প্রকাশের সময় : ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মু. সগির আহমদ চৌধুরী

॥ শেষ কিস্তি ॥
আর এই গণতান্ত্রিক হাতিয়ারের বলেই এরদুগানের একে পার্টি বারবার ক্ষমতায় আসছে। গুলেন (যদি অভিযোগ সত্যি হয়) গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করতে চেয়ে নিজেরই নীতিগত স্ববিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। পক্ষান্তরে গুলেনের নীতি তাঁরই বিরুদ্ধে ব্যবহার করে সফল হয়েছেন এরদুগান। অর্থাৎ সুষ্ঠু গণতন্ত্র বিকাশিত হয়েছে বলেই জনগণকে নিয়ে সেনা অভ্যুত্থান ব্যর্থ করে দেওয়া গেছে।
গুলেন মনে করেন, ‘একজন অবিশ্বাসীকে যেমন কোনো দুশ্চিন্তা ছাড়াই বাস করতে দেওয়া উচিত তেমনি একজন বিশ্বাসীকেও পরিপূর্ণভাবে তার ধর্মীয় বিধিবিধান পালনের সুযোগ দেওয়া উচিত।’ গুলেনের এই নীতি-কৌশলও একে পার্টি গ্রহণ করেছিল। এর ফলে নাস্তিক্যবাদের অতল তলে হারিয়ে যাওয়া তুর্কি সমাজের দুটো ফায়দা হয়েছে। প্রথমত মুসলমানদের ধর্ম-কর্ম পালনের অধিকারের ব্যাপারটি জোরালো দাবিতে পরিণত হয়েছে। দ্বিতীয়ত আস্তিক্য-নাস্তিক্যবাদী, শিয়া-সুন্নি ইত্যাদি নামে তুর্কি সমাজে যে বিশাল দ্বন্দ্ব-সংঘাতের সৃষ্টি হয়েছিল, নৈরাজ্যকর অবস্থার তৈরি হয়েছিল, খুনোখুনি-হানাহানি আর রক্তপাতের শুরু হয়েছিল ইসলামপন্থিরাই একমাত্র সেটা থামাতে পেরেছিলেন এবং এর ফলশ্রুতিতে ইসলামপন্থিরা তুর্কি সমাজের ও রাজনীতির প্রধানকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হতে পেরেছিলেন। আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে, ইসলামী হুকুমত গঠন কিংবা ক্ষমতায় ইসলামপন্থিদের টিকে থাকতে হলেও সমাজে একটা স্থিতিশীলতা বজায় থাকা জরুরি ছিল। দেশ অস্থিতিশীল থাকলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি সম্ভব হতো না। যদি তা সম্ভব না হতো তাহলে সেই তুরস্কে একে পার্টিরও এখনো ক্ষমতায় বহাল তবিয়তে স্থায়িত্ব পাওয়া কতটা সম্ভব হতো? যদিও এ নীতি-কৌশল দ্বারা নাস্তিক্যবাদী-ধর্মনিরপেক্ষ, গোড়া ইসলামবিদ্বেষীদেরকে সাময়িকভাবে মেনে নিতে হয়েছে বা হচ্ছে এরদুগানকে এবং তাদেরকে নাস্তিক্য-ধর্মহীনতাকে স্বীকৃতি বা মেনে নিয়েই চলতে হচ্ছে।
এই দীর্ঘ বক্তব্য দ্বারা কাউকে হক বা না-হক বলা আমার উদ্দেশ্য নয়। আমার উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এসব থেকে আমরা ইসলামপন্থিদের জন্য কিছু শেখার আছে কিনা তা অনুসন্ধান করা এবং তা প্রিয় ইসলামপন্থি ভাইদের সচেতন নজরে হাজির করা। আমি মনে করি, ইসলামপন্থি হিসেবে আস্তিক-নাস্তিক, শিয়া-সুন্নি, দেওবন্দি-বেরলবি, মাযহাবী-লা মাযহাবী ইত্যাদি দ্বন্দ্ব-প্রতিদ্বন্দ্বিতা আমাদের জন্য শোভা দেয় না। এর চেয়ে ইসলামকে স্বমহিমায় পালন এবং স্বাধীনভাবে চর্চার অধিকারকে জোরালো দাবিতে পরিণত করতে পারাই সময়ের দাবি। আমরা গণতন্ত্রের বিরোধিতা করি, আর এর সুযোগেই স্বৈরচাররা আমাদের ঘাটে চেপে বসে আছে এবং ছলে-বলে-কৌশলে ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুনকে নির্বাসিত করছে জনসমাজ থেকে। এর থেকে উত্তরণের জন্যে সুষ্ঠু গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার অবস্থান তৈরি করে গণতন্ত্রের ধ্বজাধারী স্বৈরচার শাসক গোষ্ঠী এবং দুর্নীতিপরায়ন রাজনীতিকদের কবল থেকে দেশ-জাতিকে রক্ষা করতে কোনো পদক্ষেপ আমাদের নেই। আমরা ইসলামী ইস্যুতে যতটা শোরগোল করি জাতীয় ইস্যুতে ততটাই নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করি। ভারতে আন্নে হাজেরিরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে সংবাদের সে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছিলেন। বাংলাদেশে ইসলামপন্থিদেরও সেই সুযোগ ছিল, সুযোগ ছিল দেশের রাজনীতির মূলস্রোতে নিজেদের অবস্থান শক্ত করার। আজকে ইসলামপন্থি দলের অভাব নেই, অসংখ্য। তাদের একেক হুংকারেই পরের দিন ইসলামী হুকুমত কায়েম কায়েম অবস্থা, অথচ ইসলামী হুকুমত টিকিয়ে রাখা ও টেকসই করার জন্য যোগ্য জনবল এবং ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে আমাদের অবদান কতটুকু?
প্রসঙ্গত একটা কথা বলা উচিত যে, গুলেন এবং এরদুগানের মাঝে দ্বন্দ্বের ব্যাপারটাকে আমি বাংলাদেশের দুটো ইসলামী রাজনীতিক দলের আত্মকলহের চেয়ে বেশি কিছু মনে করি না। নেজাম-জমিয়ত-আন্দোলন-মজলিস ইত্যাদি দলগুলোর মধ্যকার আত্মকলহের মতোই গুলেন ও এরদুগানের মধ্যকার দ্বন্দ্বের ব্যাপারটা, এর চেয়ে বেশি কিছু নয়। নিজের নাক কেটে পরের যাত্রাভঙ্গের মতোই হয়েছে গুলেনের পদক্ষেপ। এই ক্ষেত্রে ক্ষমতায় থাকলে বা এতোটা শক্তিশালী হলে বাংলাদেশের ইসলামী দলগুলোও একই পদক্ষেপ যে নেবে না তাতে কোনো গ্যারান্টি নেই আমার মতে।
লেখক : প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
চট্টগ্রাম মহানগর।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন