শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ

খুলনায় ইউপি নির্বাচনে আ.লীগের তৎপরতা ‘মসনদে বসতে চান ৩ শতাধিক নেতা দলীয় মনোনয়ন পেতে প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ অন্তকোন্দল মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন নীতি নির্ধারকরা

ডিএম রেজা সোহাগ, খুলনা থেকে : | প্রকাশের সময় : ৭ মার্চ, ২০২১, ১২:০০ এএম

প্রথম ধাপে খুলনার ৫ উপজেলার ৩৫টি ইউনিয়ন পরিষদে আগামী ১১ এপ্রিল ভোট গ্রহণের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে আগে থেকেই মাঠে সক্রিয় ছিলেন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। আনুষ্ঠনিকভাবে দিন তারিখ ঘোষণার পর তারা বেশ নড়েচড়ে বসেছেন। দলীয় মনোয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। জেলা ও মহানগরের সিনিয়র নেতাদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন, তদবির করছেন। প্রাথমিক তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ইউপিগুলোতে ৩ শতাধিক আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনসমূহের নেতা কর্মীরা দলীয় সমর্থন চাইছেন।

এদিকে, শুরুতেই দলের একাধিক সিনিয়র নেতার বিরুদ্ধে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে। অন্যদিকে, প্রতিটি ইউনিয়নে ‘হেভিওয়েট’ বেশ কয়েকজন নেতা মনোনয়ন চাওয়ায় বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন দলের স্থানীয় নীতি নির্ধারকেরা। রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেও সমঝোতায় পৌঁছাতে পারছেন না তারা।

সূত্র জানিয়েছে, খুলনা প্রেসক্লাবে জেলার দাকোপ উপজেলার লাউডোব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নিহার মন্ডল ৪ মার্চ সংবাদ সম্মেলন করেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে তিনি মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ আনেন। নিহার মন্ডল বলেন, ‘বিশেষ সুবিধা’ নিতে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও তার কয়েকজন অনুসারী চেয়ারম্যান প্রার্থীদের প্যানেল বা তালিকা তৈরি করেছেন। যদিও আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আলহাজ্ব আবুল হোসেন বলেছেন, ‘একটি পয়সাও আমি কারো কাছ থেকে গ্রহণ করিনি, সব অভিযোগ অবান্তর।’

প্রতিটি ইউনিয়নে একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থী থাকায় বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে দলের স্থানীয় হাই কমান্ড। খুলনা মহানগরীর মাঝেই যোগিপোল ইউনয়ন পরিষদ। এখানে মনোনয়ন চাইছেন নগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি বেগ লিয়াকত আলী। অন্যদিকে মনোনয়ন চাইছেন খুলনা জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও খানজাহান আলী থানা যুবলীগের আহবায়ক সাজ্জাদুর রহমান লিংকন। বিষয়টি নিয়ে ৫ মার্চ শুক্রবার রাতে খুলনার একজন টপ সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতার বাসায় ‘রুদ্ধদ্বার গোপন বৈঠক’ বসে। ওই বৈঠকে কেউই তাদের দাবি থেকে সরে আসেননি বলে জানা গেছে। এ অবস্থায় ভোটের আগেই ওই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্তদের মাঝে গোপন ভোটের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভোটের মাধ্যমে নির্ধারণ হবে কে দলীয় সমর্থন পাবেন। যদিও বৈঠকের বিষয়ে আওয়ামী লীগের কোনো নেতাই মুখ খোলেননি।

খুলনার কয়রা উপজেলার ৭ ইউনিয়নে কমপক্ষে ২৫ জন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা দলীয় সমর্থন চাইছেন। এ উপজেলায় জামায়াতে ইসলামীর উল্লেখযোগ্য ভোটার রয়েছেন। ফলে এই ৭টি ইউনিয়নের প্রতিটিতে একাধিক নেতা মাঠে থাকায় দলের মধ্যে ‘হাই টেনশান’ কাজ করছে। মনোনয়নকে কেন্দ্র করে কোনো প্রকার বিভাজন থেকে দূরে থাকার জন্য মৌখিকভাবে তাদের সতর্ক করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

পাইকগাছা উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের রয়েছেন ৩২ জন মাঠে রয়েছে। খুব শিগগিরই জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ তাদের ডেকে পাঠাবেন বলে জানা গেছে। দিঘলিয়া উপজেলার ৬ ইউনিয়ন, বটিয়াঘাটার ৭ ইউনিয়ন এবং দাকোপের ৯ ইউনিয়নের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের বিরোধ মেটাতে এ মাসের মাঝামাঝি জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ডাকা হবে বলে জানা গিয়েছে।

সূত্র জানায়, ২০১৯ এর ৩০ মার্চ অনুষ্ঠিত খুলনায় সর্বশেষ উপজেলা নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ উত্থাপন করেছিলেন খোদ দলেরই নেতা কর্মীরা। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, ওই সময় মূলত মনোনয়ন বাণিজ্য থেকে ক্ষোভের কারণে সৃষ্ট অন্ত:কোন্দলে জেলার ৯ উপজেলার মধ্যে ৫টি উপজেলাতেই হেরেছিল দল মনোনীত প্রার্থী, জিতেছিলেন বিদ্রোহী প্রার্থীরা। এবার ইউপি নির্বাচনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা না গেলে দলের প্রার্থীরা বিপর্যয়ের মুখে পড়বেন।

স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক এ্যাড. আতাহার হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেলেই নির্বাচিত হবেন-এমন ধারণা থেকেই মনোনয়ন পেতে প্রার্থীদের মাঝে অনৈতিক প্রতিযোগিতা শুরু হয়। অতীতেও আমরা দেখেছি, বর্তমানেও দেখছি। নির্বাচনকে ঘিরে অর্থবাণিজ্যের ‘কালচার’ বন্ধ না হলে গণতন্ত্রই হুমকির মুখে পড়ে যায়।

খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. সুজিত অধিকারী বলেছেন, আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ত্যাগীদেরকে মুল্যায়ন করা হবে। কোন হাইব্রিড ও অনুপ্রবেশকারী কাউকেই দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে না। অনুপ্রবেশকারী ও হাইব্রিডদের ভীড়ে ত্যাগী নেতারা এখন কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন। দলের দুঃসময়ে যেসকল নেতাকর্মী নিজের জীবনবাজি রেখে মিছিল মিটিং করেছে, জেল-জুলুম থেকে রেহাই পাননি, তাদের মুল্যায়ন করতে হবে। মনোনয়নকে কেন্দ্র করে কোনো অভিযোগ উঠলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

প্রসঙ্গত, প্রথম ধাপে খুলনা ৫ উপজেলার ৩৫টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এগুলোর মধ্যে কয়রা উপজেলায় সদর মহারাজপুর, মহেশ্বরীপুর, উত্তর দেবকাশি, দক্ষিণ বেদকাশি, আমাদি ও বাগালি। দাকোপ উপজেলার সদর, বাজুয়া, কামারখোলা, তিলডাঙ্গা, সুতারখালী, লাউডোব, পানখালী, বানিশান্তা ও কৈলাশপুর। দিঘলিয়া উপজেলা সদর, নৈহাটি, গাজিরহাট, বারাকপুর, আরড়ংঘাটা ও যোগীপোল। পাইকগাছা উপজেলার সোলাদানা, বারুলি, গড়ইখালী, গদাইপুর, দেলুটি, চাঁদখালী, লতা, লস্কর, হরিঢালী ও কপিলমুনি। বটিয়াঘাটা উপজেলার গঙ্গারামপুর, বালিয়াডাঙ্গা, আমিরপুর। ১৮ মার্চ মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন। ১৯ মার্চ মনোনয়ন বাছাই, ২৪ মার্চ প্রতীক প্রত্যাহার ও ১১ এপ্রিল ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন