বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ফের আলোচনায় রেলওয়ে

দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই রোটেমের ১০টি মিটারগেজ ইঞ্জিন ক্রয়ে দুর্নীতি

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৭ মার্চ, ২০২১, ১২:০০ এএম

রেলওয়ের জন্য ১০টি মিটারগেজ লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) কেনা হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে। ইঞ্জিনগুলো কিনতে ঋণ দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। গত বছর আগস্টে ইঞ্জিনগুলো সরবরাহ করে কোরিয়ার হুন্দাই রোটেম কোম্পানি। তবে ইঞ্জিনগুলোয় দরপত্রের শর্তানুসারে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ সংযোজন করা হয়নি। নিম্নমানের যন্ত্রাংশ দিয়ে তৈরি করা এসব ইঞ্জিন। প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা ইঞ্জিনগুলো গ্রহণ না করে ফেরত পাঠানোর পরামর্শ দিলেও মন্ত্রণালয়ের চাপে করোনার মধ্যে ইঞ্জিনগুলো গ্রহণ করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, তদন্তে মানসম্মত না হওয়ার পরেও যাচাইয়ের নামে ইঞ্জিনগুলো গ্রহণ করার চেষ্টা চলছে। এ কারণে এ সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন গোপন রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এর আগে করোনায় কেনাকাটা নিয়ে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগে আলোচনায় এসেছিল রেলওয়ে। ওই ঘটনায় চিহ্নিতদের আড়াল করার একইরকম অভিযোগ উঠেছিল।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, গত ২৫ ফেব্রæয়ারি ইঞ্জিনগুলো কেনায় অনিয়মের বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তদন্ত কমিটি। তবে এক সপ্তাহের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও তা গোপন করে রেখেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। এমনকি তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর গত ৩ মার্চ রেলভবনে পর্যালোচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও সেখানে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়নি। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইঞ্জিন পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা প্রি-শিপমেন্ট এজেন্ট সিঙ্গাপুরের সিসিআইসি’ও তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেনি। তাই নি¤œমানের ইঞ্জিন সরবরাহের দায় হুন্দাই রোটেম ও সিসিআইসির। এজন্য প্রতিষ্ঠান দুটির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি। সূত্র জানায়, তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, রেলের ১০টি ইঞ্জিন কেনার দরপত্রে চারটি কোম্পানি অংশ নেয়। তাদের মধ্যে হুন্দাই রোটেম কারিগরিভাবে রেসপনসিভ করে মূল্যায়ন কমিটি। পরে তাদের আর্থিক প্রস্তাব মূল্যায়ন করা হয়। এডিবির অনুমোদনসাপেক্ষে ২০১৮ সালের ১৭ মে হুন্দাইয়ের সঙ্গে চুক্তি সই করা হয়। এছাড়া চুক্তি অনুযায়ী ইঞ্জিন সরবরাহ করা হচ্ছে কি না, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সিঙ্গাপুরের সিসিআইসিকে নিয়োগ করা হয়। চুক্তির শর্তানুসারে ইঞ্জিনগুলো সরবরাহ করা হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করতে প্রাক-জাহাজীকরণ পরিদর্শন প্রতিবেদন (পিএসআই) প্রদান করার কথা ছিল সিসিআইসির।

গত বছরের ১২ আগস্ট সিসিআইসি যে প্রতিবেদন দাখিল করে তাতে বলা হয়, ইঞ্জিনগুলো বাংলাদেশে আসার পর কমিশনিং পিরিয়ডে টেস্টিং ও ট্রায়াল রান সন্তোষজনক হতে হবে বলে শর্ত দেয়া হয়। আবার একই তারিখে সিসিআইসি শর্তবিহীন আরেকটি পিএসআই সার্টিফিকেট দাখিল করে। একই দিনে দুই ধরনের পিএসআই প্রতিবেদন দেয়ায় ইঞ্জিন গ্রহণে আপত্তি তোলেন রেলের প্রকল্প পরিচালক। তবে ইঞ্জিনগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছানোর পর যথাসময়ে খালাস না করলে জটিলতা সৃষ্টি হবে বলে অজুহাত দেখিয়ে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তা খালাস করে পাহাড়তলী ডিজেল ওয়ার্কশপে রাখা হয়। প্রতিবেদনে রহস্যজনকভাবে ওই প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে সুপারিশ করা হয়েছে।

এদিকে, বাংলাদেশ রেলওয়ের গঠিত কমিশনিং কমিটি ইঞ্জিনগুলোর টেস্টিং, ট্রায়াল রান ও কমিশনিং সম্পন্ন করে প্রতিবেদন দাখিল করে। এতে ইঞ্জিনের কারিগরি শর্ত তথা অলটারনেটর, কম্প্রোসার, ট্রাকশন মোটর এ চারটি ক্যাপিটাল কম্পোনেন্টস চুক্তি অনুযায়ী সরবরাহ করা হয়নি বলে উল্লেখ করে। ফলে ইঞ্জিনের ব্রেক হর্সপাওয়ার ২২০০বিপিএইচ ও ট্রাকশন হর্সপাওয়ার ২০০০টিএইচপি হওয়ার কথা থাকলেও পাওয়া যায় ২১৭০ ও ১৯৪২এইচপি। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত ২৭ জানুয়ারি ইঞ্জিনগুলোর বিষয়ে প্রকল্প পরিচালকের মতামত চায় তদন্ত কমিটি। এ সময় তিনি জানান, চুক্তির পর দক্ষিণ কোরিয়ায় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হুন্দাই রোটেম দুই দফা ভিন্ন মডেলের অলটারনেটর সংযোজনের প্রস্তাব দিলেও তা গ্রহণ করা হয়নি। এছাড়া হুন্দাই রোটেম চুক্তি অনুযায়ী অন্যান্য ক্যাপিটাল কম্পোনেন্ট সংযোজন না করায় সরকারি বিধি-বিধান লঙ্ঘন করা হয়েছে। ফলে এসব পণ্য গ্রহণ করা তার পক্ষে সম্ভব নয় বলেও তিনি জানান।

আর গত ২০ জানুয়ারি তদন্ত কমিটির কাছে লিখিত বক্তব্য পেশ করে হুন্দাই রোটেম। এতে তারা অলটারনেটর, ট্রাকশন মোটর ও ইঞ্জিনে কিছুটা পার্থক্য আছে বলে উল্লেখ করে। এছাড়া ৭ জানুয়ারি সিসিআইসির কাছে বিস্তারিত ব্যাখ্যা চাইলে তারাও কিছুটা পার্থক্যের কথা জানায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি ইঞ্জিনগুলো সম্পর্কে কিছু পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ পেশ করে। এতে বলা হয়, রেলওয়েকে সরবরাহকৃত ১০ ইঞ্জিনে অলটারনেটর, ইঞ্জিন ও ট্রাকশন মোটরের মডেলের ভিন্নতা রয়েছে। হুন্দাই রোটেম চুক্তি ভঙ্গ করে এগুলো সংযোজন করেছে। তাই তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। আর প্রি-শিপমেন্ট এজেন্ট সিসিআইসি তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করেনি। তাই তাদের বিরুদ্ধেও চুক্তি অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।

এদিকে প্রকল্পের কাজ যথাসময়ে সম্পাদন না হওয়া এবং চুক্তির ব্যত্যয়ের বিষয়টি প্রকল্প পরিচালক যথাসময়ে কর্তৃপক্ষকে জানাননি বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতি রেলওয়ে ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে বলেও মন্তব্য করেছে কমিটি। ফলে ভবিষ্যতে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে রেলওয়েকে আরও সতর্ক থাকার সুপারিশ করা হয়েছে। যদিও প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগটি সত্য নয় বলে জানা গেছে। কারণ নিম্নমানের ইঞ্জিন সরবরাহের কারণে তা গ্রহণ না করে দক্ষিণ কোরিয়ায় ফেরত পাঠাতে চেয়েছিলেন প্রকল্প পরিচালক। এছাড়া ইঞ্জিন দেশে এলেও নিম্নমানের হওয়ায় এখনও ঠিকাদারের বিল পরিশোধ করেননি তিনি। পরে সাবেক মহাপরিচালক মো. শামসুজ্জামানের অনুমতিক্রমে তা খালাস করা হয়।
উল্লেখ্য, হুন্দাই রোটেমের নিম্নমানের ইঞ্জিন সরবরাহের অভিযোগ তদন্ত করার জন্য গত ১৯ জানুয়ারি এ কমিটি করা হয়। কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. ফারুকুজ্জামান। তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটির অপর দুজন ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহ. মাহবুবুর রাজ্জাক ও রেলওয়ের যুগ্ম মহাপরিচালক ( মেকানিক্যাল) তাবাসসুম বিনতে ইসলাম। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তাই কথা বলতে রাজি হননি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
JESMIN ANOWARA ৭ মার্চ, ২০২১, ৫:১১ এএম says : 0
train minister should be prosecuted
Total Reply(0)
Jack+Ali ৭ মার্চ, ২০২১, ১:৩২ পিএম says : 0
Why we have to buy train from foreign countries, are we not human being like those country who manufacture everything's??? we would have manufacture everything's without depending on any country if our country rule by Qur'an... those who are ruling our beloved country they are according to Qur'an they are Dumb, Deft and Blind.
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন