২০২০ সালে টানা তৃতীয়বারের মতো ইন্টারনেট বন্ধ করে মানবিক অধিকার হরণে বিশ্বের মধ্যে শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে ভারত। ডিজিটাল অধিকার ও গোপনীয়তা নিয়ে কাজ করা অলাভজনক আন্তর্জাতিক সংস্থা অ্যাক্সেস নাউ-এর এক নতুন প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশব্যাপী কৃষক বিক্ষোভ দমনে ও কাশ্মীরিদের পিষ্ট করতে হাতিয়ার হিসাবে ভারত ইন্টারনেট বন্ধ করেছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট বন্ধ করার মোট ১৫৫টি ঘটনার মধ্যে ভারতই করেছে রেকর্ড ১০৯ বার। পরের অবস্থানে থাকা ইয়েমেনের থেকে এই সংখ্যা ছয়গুণ বেশি। অ্যাক্সেস নাউ অনুসারে, ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী যতোবার ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছে তার মধ্যে ৭০ শতাংশই ভারতে। এর মধ্যে অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরে প্রতি দুই সপ্তাহে অন্তত একবার ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছে। এই প্রতিবেদনে বাকস্বাধীনতার সমর্থকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় মোডিজি_জোয়াব_ডো, ফ্রিডমঅবস্পিচ এবং ইন্টারনেটশাটডাউন হ্যাশট্যাগ দিয়ে সরকারের কাছে ব্যাখ্যা দাবি করা হচ্ছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে অধিকৃত কাশ্মীরে সরকার ২জি ইন্টারনেট সংযোগ পুণরায় চালু করেছিল, তবে এটি অকেজো ছিল। গেন্ডারবল এবং উধমপুর ব্যতীত সেখানে কোথাও ৩জি এবং ৪জি মোবাইল ইন্টারনেট সংযোগ ছিল না। এবং ২০২০ সালে বহুবার মোদি সরকার সেখানে এমনকি ২জি ইন্টারনেট অ্যাক্সেসও বন্ধ করে দিয়েছে। এ ফলে সেখানকার বাসিন্দাদের পাশাপাশি সাংবাদিকরাও বাইরের দুনিয়ার সাতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন।
অনন্তনাগের মতো জায়গায়, কর্তৃপক্ষ বারবার ‘দেশবিরোধী কাজে পরিষেবাগুলোর অপব্যবহার’ হচ্ছে বলে উল্লেখ করে ২জি ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, যখনই সামরিক বাহিনীর সাথে তথাকথিত ‘সশস্ত্র গ্রুপ’ গুলোর সঙ্ঘর্ষ হয়, তখনই ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেয়া হয়।
এ বিষয়ে অ্যাক্সেস নাউয়ের সিনিয়র আন্তর্জাতিক কাউন্সেল এবং এশিয়া প্যাসিফিক পলিসির পরিচালক রমন জিত সিং চিমা বলেন, ‘এটি উদ্বেগজনক যে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র-ভারত এখনও বিশ্বের মধ্যে ইন্টারনেট শাটডাউনে সবথেকে এগিয়ে রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা কয়েক বছর ধরে কাশ্মীরে পরিকল্পিতভাবে ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের মধ্য দিয়ে জীবন কাটিয়েছি। দেশের প্রতিটি অঞ্চলেই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের টার্গেট করতে কিংবা সরকারী কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপগুলো আড়াল করতে এই অস্ত্রের ব্যবহার ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা (৭৫ বার), নির্বাচন (১০ বার), বিক্ষোভ (৮ বার), ধর্মীয় ছুটি বা বার্ষিকী (৫ বার), সাম্প্রদায়িক সহিংসতা (৪ বার) এবং পরীক্ষায় প্রতারণার (২ বার) কারণে ভারত ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছে। এশিয়া প্যাসিফিকের ছয়টি দেশ যৌথভাবে মোট ১০৭ বার ইন্টারনেট বন্ধ করেছে। অথচ, ভারত একাই অন্তত ১০৯ বার ইন্টারনেট বন্ধ করেছে। অ্যাক্সেস নাউ বলেছে যে, বিশ্বের অন্যান্য অংশে ইন্টারনেট বন্ধ করার কারণটিতে ‘সংঘাত’ শীর্ষে ছিল, তারপরে নির্বাচন, প্রতিবাদ, পরীক্ষার প্রতারণা এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা রয়েছে।
২০২০ সালে শাটডাউন দ্বারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ হলেন তারা যারা ইতিমধ্যে দমন, নীরবতা ও প্রান্তিককরণের মুখোমুখি হয়েছেন। এর মধ্যে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমান, গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করা বেলারুশিয়ান এবং সাম্প্রদায়িক সহিংসতা এবং সশস্ত্র সঙ্ঘাতের শিকার ইথিওপীয়, ইয়েমেনি এবং কাশ্মীরিরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অ্যাক্সেস নাও জানিয়েছে, আরও উদ্বেগজনক বিষয় হচ্ছে, ভারত সরকার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের বিষয়বস্তুর উপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর জন্য আইন করে নিজেদের ক্ষমতা আশঙ্কাজনকভাবে আরও বাড়িয়েছে। তারা সামাজিক মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এবং অনলাইন মিডিয়া সাইটগুলোর সাথে ইন্টারনেট সেবাদানকারীদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটি আইন সংশোধন করেছে। সূত্র: এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন