বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দেশে করোনা শনাক্তের এক বছর আজ

এক মাসে ৩৮ লাখ মানুষ টিকা নিয়েছেন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ মার্চ, ২০২১, ১২:০১ এএম

দেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ার এক বছর আজ। ২০২০ সালের এই দিন প্রথম দেশে করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়। এই এক বছরে করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা পৌঁছেছে ৫ লাখ ৫০ হাজার ৩৩০ জনে। আর করোনা টিকা গ্রহণের এক মাস পার হয়েছে গতকাল রোববার। এ সময়ে টিকা নিয়েছেন প্রায় ৩৮ লাখ (৩৭ লাখ ৮৯ হাজার ৩৫২ জন) মানুষ।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাব মতে, ৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে প্রথম রোগী শনাক্ত হলে তিন মাস পর ১৮ জুন তা এক লাখ ছাড়িয়ে যায়। এর ঠিক এক মাস পর ১৮ জুলাই শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ২ লাখে। এর পরের এক লাখ রোগী শনাক্ত হয় এক মাস ৯ দিনে ২৬ অগাস্ট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছাড়ায় তিন লাখ। এর দুই মাস পর ২৬ অক্টোবর শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৪ লাখ ছাড়িয়ে যায়। ৫৫ দিন পর গত ২০ ডিসেম্বর তা পাঁচ লাখে পৌঁছায়। এর পরের ৭৭ দিনে শনাক্ত রোগীর তালিকায় যুক্ত হলো আরো ৫০ হাজার নাম। এই এক বছরে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা পাঁচ লাখ ৫০ হাজার ৩৩০ জন। এক মাসে দেশের প্রায় ৩৮ লাখ মানুষকে করোনার টিকা দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান বৈশ্বিকভাবে অনেক ওপরে। কিছু ক্ষেত্রে টিকা উৎপাদনকারী প্রতিবেশী দেশ ভারতকেও পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক তথ্য-উপাত্তবিষয়ক দাতব্য প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল চেঞ্জ ডেটা ল্যাব নিয়মিতভাবে করোনার টিকা প্রয়োগবিষয়ক বৈশ্বিক তথ্য প্রকাশ করছে। গতকাল শনিবার তারা সবচেয়ে বেশি টিকা দেওয়া হয়েছে এমন ২০টি দেশের তালিকা প্রকাশ করেছে। তালিকার ১৭ নম্বরে বাংলাদেশ। সবচেয়ে বেশি টিকা দেওয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। এ পর্যন্ত দেশটির ৮ কোটি ৫০ লাখের বেশি মানুষ টিকা পেয়েছেন। প্রতিবেশী দেশ ভারতে ১ কোটি ৯৫ লাখ মানুষ টিকা পেয়েছেন।

বাংলাদেশে গণটিকাদান শুরু হয় ৭ ফেব্রুয়ারি। এই সময়ে ছুটির দিন বাদে মোট ২৩ দিন মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। গতকাল সারাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় টিকা নিয়েছেন ১ লাখ ৭ হাজার ২০০ জন। এদের মধ্যে মাত্র ২৩ জনের সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। আর এখন পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন ৩৭ লাখ ৮৯ হাজার ৩৫২ জন। এদের মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে ৮৪৮ জনের। পাশাপাশি টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন ৫০ লাখ ১৭ হাজার ৮০৪ জন। গতকাল সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (এমআইএস) অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান। এতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় টিকা নিয়েছেন এক লাখ ১৭ হাজার ৮০৪ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ৬৫ হাজার ৪৩০ জন ও নারী ৪১ হাজার ৭৭০ জন।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ঢাকা বিভাগে ৩৯ হাজার ২৪৪ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৪ হাজার ৩২ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৮ হাজার ২৫০ জন, রাজশাহী বিভাগে ১১ হাজার ৪৫ জন, রংপুর বিভাগে ৯ হাজার ৫৯০ জন, খুলনা বিভাগে ১৬ হাজার ৮৬৯ জন, বরিশাল বিভাগে ৩ হাজার ৮০৬ জন ও সিলেট বিভাগে ৪ হাজার ৩৬৪ জন রয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুমের তথ্য অনুসারে, গত ২৭ জানুয়ারি দেশে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করে। প্রথম দিন টিকা দেওয়া হয় ২৬ জনকে।

করোনাভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রমের দ্বিতীয় দিনে ২৮ জানুয়ারি রাজধানীর ৫টি হাসপাতালে ৫৪১ ব্যক্তিকে টিকা দেওয়া হয়। আর ৭ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে টিকা কার্যক্রম শুরু হয়। এদিন সারাদেশে টিকা নেন ৩১ হাজার ১৬০ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ২৩ হাজার ৮৫৭ জন ও নারী ৭ হাজার ৩০৩ জন।

এর আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, রাজধানী ঢাকায় ৫০টি হাসপাতাল ও সারাদেশে ৯৫৫টি হাসপাতালসহ ১ হাজার ৫টি হাসপাতালে টিকাদান কার্যক্রম চলছে। রাজধানী ঢাকায় ৫০টি হাসপাতালে ২০৪টি ও সারাদেশে ৯৫৫টি হাসপাতালে ২ হাজার ১৯৬টি টিম কাজ করবে। অর্থাৎ ১ হাজার ৫টি হাসপাতালে ২ হাজার ৪০০টিম কাজ করবে। এছাড়া টিকা বিষয়ক কার্যক্রমের জন্য টিম প্রস্তুত রয়েছে ৭ হাজার ৩৪৪টি।

কানাডায় এ পর্যন্ত ২২ লাখ মানুষ টিকা পেয়েছেন। শুধু কানাডা নয়, প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ, আফগানিস্তানের চেয়ে ভালো অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত ছাড়া অন্য যে দেশ ও অঞ্চল বেশি মানুষকে টিকা দিয়েছে সেই তালিকায় আছে: চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল, তুরস্ক, ইসরায়েল, জার্মানি, রাশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ফ্রান্স, ইতালি, চিলি, স্পেন, মরক্কো, পোল্যান্ড।

বাংলাদেশ মূলত একটি উৎস থেকে টিকা পাচ্ছে। সেটি ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট। একাধিক উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের উদ্যোগ জোরদার করা দরকার।
বাংলাদেশ করোনার টিকা উৎপাদন করছে না। গ্লোবাল চেঞ্জ ডেটা ল্যাবের হিসাব বলছে, কিছু মাপকাঠিতে উৎপাদনকারী দেশকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ১০০ জনের মধ্যে ২ দশমিক ৬ জনকে টিকা দিয়েছে। প্রতিবেশী ভারতে এই হার ১ দশমিক ৪। বিশ্বে এই হার সবচেয়ে বেশি ইসরায়েলে, ৯৯ শতাংশ।

বাংলাদেশ গর্ভবতী নারী ছাড়া ৪০ বছরের বেশি বয়সী সব নাগরিককে টিকা দেওয়ার কথা বলেছে। দেশে ৪০ বছরের বেশি বয়সী নাগরিকের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ কোটি। বর্তমান হারে টিকা দেওয়া চলতে থাকলে সব মানুষকে টিকা দিতে আট মাসের বেশি সময় লাগবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন