আফগান সরকারের কাছে যুদ্ধের অবসানসহ চার দফা কৌশল উপস্থাপন করে বাইডেন প্রশাসন একটি শীতল বার্তায় জানিয়েছে, শান্তি চুক্তির অনুপস্থিতিতে তালিবানদের ‘দ্রæত অঞ্চলভিত্তিক উত্থান’ ঘটতে পারে। আফগানিস্তান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি এবং আফগান শান্তি কাউন্সিলের প্রধান ড. আবদুল্লাহ আবদুল্লাহর সাথে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেক্রেটারি অ্যান্টনি বিøংকেন এ কৌশল শেয়ার করেছেন। তিনি উভয় নেতার কাছে একটি চিঠি লিখেন যা আফগানিস্তানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত জালমে খলিলজাদ তার সা¤প্রতিক সফরে নিয়ে এসেছিলেন। আফগান সংবাদমাধ্যম টোলোনিউজের শেয়ার করা চিঠিতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে যে, বাইডেন প্রশাসন শান্তি প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করতে চায়। চিঠিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি বিøংকেন বলেছেন, ‘মার্কিন এবং ন্যাটো সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়া হলে আফগানিস্তান জুড়ে তালিবানের ব্যাপক সামরিক উত্থান ঘটতে পারে।’ এ অজুহাতে তারা এখনই আফগানিস্তান না ছাড়ার প্রস্তাব দিয়েছে। তালিবান এবং ট্রাম্প প্রশাসনের করা এক চুক্তি অনুযায়ী আগামী মাসের শেষ নাগাদ সব মার্কিন সৈন্য আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে।
৯/১১ হামলার জবাবে ২০০১ সালে আফগানিস্তানে হামলা চালায় আমেরিকা। তখন তালিবানকে উৎখাতের লক্ষ্য নিয়ে তারা হামলা শুরু করে। অবশেষে যুদ্ধের কোনো সমাপ্তি ছাড়া ‘চুক্তি করে’ আফগানিস্তান ছাড়তে রাজি হয় আমেরিকা। ২০২০ সালে চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাইডেন প্রশাসন জানায়, তারা সেই চুক্তি ‘রিভিউ’ করবে। ওই চুক্তি অনুযায়ী মে মাসের ১ তারিখের আগে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনীর সব সদস্য আফগানিস্তান ছেড়ে যেতে হবে। এর বিনিময়ে তালিবান আফগানিস্তানে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেবে। কিন্তু এখন বাইডেন প্রশাসন বলছে, আফগানিস্তান ছাড়ার আগে তারা ‘তালিবানের ওয়াদার বাস্তবায়ন’ দেখতে চায়।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর চিঠির বরাত দিয়ে সংবাদ মাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, আমেরিকা এখন ৯০ দিনের ‘সংঘর্ষ বন্ধ’ দেখতে চায়। তারা এ শান্তি প্রক্রিয়া জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে পর্যবেক্ষণ করবে।
ওই চুক্তির আওতায় তালিবানের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আফগানিস্তানে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ন্যাটোর বাকি ১০ হাজার সেনা আগামী ১ মের মধ্যেই সরিয়ে নেয়ার কথা। হোয়াইট হাউস এখন বলছে, ওই সৈন্যদের সরিয়ে নেয়ার আগে তারা নিশ্চিত হতে চায় যে, আফগান উগ্রবাদী গোষ্ঠী তাদের ‘প্রতিশ্রুতি অনুসারে কাজ করছে’। বিশেষ করে সহিংসতা হ্রাস ও সন্ত্রাসীদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার প্রতিশ্রুতি তারা রক্ষা করছে।
যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওই চিঠিতে আফগানিস্তানে ৯০ দিনের মধ্যে সহিংসতা কমিয়ে আনার পাশাপাশি জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে একটি নতুন আন্তর্জাতিক শান্তি প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন, যেন স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানো সম্ভব হয়। একইসাথে আফগানিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি যেন আরো অবনতি না হয়, এ জন্য জরুরি ভিত্তিতে এ পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন বলে সতর্ক করেছেন তিনি। চিঠিতে বলা হয়, জাতিসঙ্ঘ যেন ওই অঞ্চলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে বৈঠকে বসে, এর জন্য সংস্থাটিকে অনুরোধ করা হবে। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, তালিবান ও আফগান সরকারের মধ্যে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক আয়োজনের ক্ষেত্রে তুরস্ক সম্ভাব্য স্থান হতে পারে।
চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘতম যুদ্ধের শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য ওয়াশিংটনের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরা হয়েছে। বিবিসি সংবাদদাতা জানান, সৈন্য সরিয়ে নেয়ার ফলে গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা ও আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের পতন এড়িয়ে যেতে প্রেসিডেন্ট ঘানি ও তালিবানদের ওপর চাপ বাড়িয়ে দিচ্ছেন বিøংকেন। আফগান সরকার ও তালিবানের মধ্যে শান্তি আলোচনা স্থগিত থাকায় প্রেসিডেন্ট ঘানি গত শনিবার উগ্রবাদি সংগঠনটিকে সহিংসতা ছেড়ে নতুন করে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন। সূত্র : এএফপি, বিবিসি, দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন