বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

খাগড়াছড়ি পাহাড়ের উপর ‘দেবতা পুকুর’

খাগড়াছড়ি জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৯ মার্চ, ২০২১, ৩:০৯ পিএম

উঁচু-নিচু পথ পেরিয়ে পাহাড়ের উপরে ‘দেবতা পুকুর’। সেই পুকুরে থৈ থৈ করছে স্বচ্ছ পানি।ত্রিপুরাদের ধারণা, স্থানীয় ব্যক্তিদের আশীর্বাদস্বরূপ দেবতা নিজে এ পুকুর করে দিয়েছেন। তাদের মতে, এ পুকুরে গোসল করলে মনোবাসনা পূরণ হবে। খাগড়াছড়ি শহর থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে হাজার ফুট উচ্চতায় পাহাড়ের ওপর এই পুকুরের অবস্থান। প্রতিবছর বৈসুকে এখানে তীর্থ মেলা বসে। খাগড়াছড়ি-মহালছড়ি-রাঙামাটি সড়কের সাত কিলোমিটার গেলে মাইচছড়ি। এই মাইচছড়ি থেকে চার কিলোমিটার পশ্চিমে গেলে নুনছড়ি গ্রাম। এই নুনছড়ি গ্রাম থেকে এক কিলোমিটারের পাহাড়ি পথ বেয়ে পাহাড়ের চূড়ায় উঠলেই দেবতা পুকুর। এ পুকুরের স্বচ্ছ স্থির জলরাশি পর্যটকদের মনে প্রশান্তি জোগাবে।
এমনটা আপনার কাছে কল্পনা হলেও পাহাড়ি জনপদ খাগড়াছড়িতে এটাই বাস্তবতা। উঁচু পাহাড়ে পানি জমানো দুষ্কর, কষ্টসাধ্য এবং ব্যয় সাপেক্ষে হলেও পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে বাঁধ সৃষ্টির মাধ্যমে পানি সংরক্ষণের নজির থাকলেও দেবতা পুকুর’ সেসব থেকে ব্যতিক্রম। পৃথিবীর অনেক আশ্চর্য্যের মধ্যে আপনার কাছে ‘দেবতা পুকুর’ হতে পারে এক ধরনের আশ্চর্য।
দেবতা পুকুর’ রূপকথার দেবতার আশির্বাদের মতোই স্রোতহীন সঞ্চার। পাহাড়ের চূড়ায় এ পুকুরটির স্বচ্ছ জলরাশিমনভোলা প্রশান্তি মুহূর্তের মধ্যে পর্যটকদের উদাসীন করে তুলতে পারে। এ দেবতা পুকুরকে ঘিরে রয়েছে পাহাড়ের পর্যটন সম্ভাবনা।
খাগড়াছড়ি জেলা সদর খাগড়াছড়ি-মহালছড়ি-রাঙ্গামাটি সড়কে ১১ কিলোমিটার দক্ষিণে মূল সড়ক থেকে ৪ কিলোমিটার পশ্চিমে নুনছড়ি মৌজার আলুটিলা পর্বতশ্রেণী থেকে সৃষ্ট ছোট্ট নদী নুনছড়ি। নুনছড়ির সমতল ভূমি থেকে প্রায় এক হাজার ফুট উপরে পাহাড়ের চূড়ায় ‘দেবতা পুকুর’। সবুজ অরণ্যবেষ্টিত দেবতার পুকুরের দৈর্ঘ্য প্রায় ১ হাজার ৫০০ ফুট এবং গড় প্রস্থ ৬০০ ফুটের মতো। সময়ের ব্যবধানে ‘দেবতা পুকুর’ স্থানীয় ত্রিপুরাদের তীর্থক্ষেত্র হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। প্রতিবছর চৈত্র সংক্রান্তিতে দেবতা পুকুরে বসে তীর্থ মেলা এবং তান্ত্রিক বিধান মতে ত্রিপুরাগণ যাগযজ্ঞাদি করে।
ত্রিপুরা জনঅধ্যুষিত এলাকায় এর অবস্থান বলে এটি ত্রিপুরা ভাষায় ‘মাতাই পুখির’ নামেই অধিক পরিচিত। মাতাই অর্থ ‘দেবতা’ আর পুখির অর্থ ‘পুকুর’। পুকুরের চারিদিকে ঘন সবুজ অরণ্য যেন সৌন্দর্যের দেবতা বর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
কথিত আছে, স্থানীয় বাসিন্দাদের জলতৃষ্ণা নিবারণের জন্য স্বয়ং জলদেবতা এ পুকুর খনন করেছেন। দেবতা পুকুরের পানি কখনোই শুকায়না। পুকুরের পানিকে স্থানীয় পাহাড়িরা দেবতার আর্শীবাদ বলে মনে করেন। দেবতা পুকুর দেবতা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং পুকুরের তলদেশে গুপ্তধন লুকায়িত আছে যা দেবতারা পাহাড়া দিচ্ছে। প্রতিবছর চৈত্র সংক্রান্তিতে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী ছাড়াও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের হাজারো নারী-পুরুষ-শিশু দেবতা পুকুর দর্শনে হাজির হয়।
পাহাড়ের পাদদেশ ১ হাজার ৩৮৬টি সিঁড়ি বেয়ে দেবতা পুকুরে পৌঁছাতে হয়। সিঁড়ি বেয়ে প্রায় ২৫ মিনিটের পথ পেরুলেই দেখা মিলবে স্বপ্নের দেবতা পুকুর। সিঁড়ি নির্মাণের আগে প্রায় দুই ঘণ্টারও বেশি সময় লাগতো দেবতা পুকুরে পৌঁছাতে। দেবতা পুকুরে যাবার পথে দেখতে পাবেন ১৫ ফুট উচ্চতার একটা জলপ্রপাত। যার শনশন পানির শব্দ আপনাকে বিমোহিত করবে।
পুকুরের পাশেই গড়ে উঠেছে একটি শিব মন্দির। মন্দিরের দায়িত্বে আছেন একজন পুরোহিত। দেবতা পুকুরে আসা পূজারিরা পুকুরে স্নান সেরে পুজো দেন। পূজারিদের বিশ্বাস এখানে পুজো দিলে সবধরনের মনোবাসনা পূরণ হয়।

খাগড়াছড়ি জেলা সদর খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি সড়কে ১১ কিলোমিটার দক্ষিণে মহালছড়ি উপজেলার মাইসছড়ি। মাইসছড়ি থেকে ৪ কিলোমিটার পশ্চিমে নুনছড়ি যেতে হবে। চাঁদের গাড়ি (জিপ) বা সিএনজিতে যেতে পারেন নুনছড়ি। মোটরসাইকেলেও যেতে পারেন সেখানে। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে পৌঁছাবেন দেবতা পুকুর। তবে পায়ে হাঁটার অভ্যাস থাকলে মাইসছড়ি থেকে দলবেঁধে পায়ে হেঁটে যেতে পারেন দেবতা পুকুর। এক্ষেত্রে বাড়তি আনন্দ পাওয়ার পাশাপাশি খরচও কমবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন