শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

খাল খননে পুকুর চুরি

কোটি টাকার বিনিময়ে প্রকল্প পরিচালক প্রকল্পে অগ্রগতি মাত্র ৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ১০ মার্চ, ২০২১, ১২:০০ এএম

সারাদেশে পুকুর-খাল খনন উন্নয়ন প্রকল্পে আউট সোসিং নিয়োগে ৫০ কোটি টাকার ঘুঘ বাণিজ্য রমরমা ব্যবসায় পরিতন হয়েছে। এ প্রকল্পে ৪০০ জন কার্যসহকারী ১৬৮ জন উপ-সহকারী প্রকৌশলী ১০ জন সহকারী প্রকৌশলী এবং ১২ জন সসোলজিস্টস পদে লোক নিযোগ করা হয়েছে। আউট সোসিং নিয়োগে সরকারি কোন বিধি বিধান মানা হয়নি। প্রায় ৫০ কোটি টাকা প্রকল্পের পরিচালক একাই নিয়েছেন। এ ঘটনায় প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে নিয়োগ বঞ্চিতরা।

পুকুর-খাল খনন প্রকল্পের আড়াই বছরে মাত্র ১৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ কাজ বাস্তবায়ন হয়েছে। আর্থিক অগ্রগতি আরও কম, মাত্র ৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ। এ প্রকল্পের শুরুতে দুর্নীতি করা হয়েছে। এদিকে পুকুর-খাল খননের কাজ শুরু না হওয়ায় স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে এলজিইডিকে নির্দেশনা দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক প্রতিমন্ত্রী মো. মসিউর রহমান রাঙ্গা ইনকিলাবকে বলেন, সারাদেশে পুকুর-খাল খনন উন্নয়ন প্রকল্পে আউট সোসিং নিয়োগের নামে কোটি টাকার ঘুঘ বাণিজ্য রমরমা ব্যবসায় পরিতন হয়েছে। আউট সোসিং নিয়োগে সরকারি বিধি বিধান মানা হয়েছে কি না তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুর রশীদ খান ইনকিলাবকে বলেন, কিছু কিছু প্রকল্পের পরিচালকের বিরুদ্ধে দুনীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। যদি কেউ দুনীতি করে থাকে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে প্রকল্পর প্রকল্প পরিচালক ও তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান ফোনে প্রকল্পের বিষয়ে ফোনে কিছুই বলতে চাই না। তবে তার একজন সাংবাদিদের সাথে কথা বলতে বলেন। প্রকল্পের নিয়োগ দিয়ে যে টাকা নিয়েছে তা সত্য কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন সেটা বলতে পারবো না। মন্ত্রণালয়ের পাঠানো অভিযোগে বলা হয়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের আতওতায় সারা দেশে পুকুর খাল খনন উন্নয়ন প্রকল্পে বিভিন্ন পদে প্রায় ৫৮০ জন লোক নিয়োগ করা হয়। নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে চাকুরি প্রার্থীদের নিকট থেকে প্রায় ১৫ কোটি টাকা ঘুস আদায় করা হয়েছে। ঘুস গ্রহনের সাথে প্রকল্প পরিচালক( পুকুর খাল) পরিচালক ও তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান সরাসরি ঘুষগ্রহনের সাথে জড়িত। এছাড়া প্রকল্পের অবসর প্রাপÍ একাউন্টেট মো. আতাউর রহমান সহ বেশ কয়েক জন সারা দেশ থেকে দালান দিয়ে চাকুরির প্রার্থী ডেকে এনে তাদের নিকট থেকে মোটা অংকের টাকা ঘুস নিয়ে চাকুরি দিয়েছেন।

সরকারি বিধি বিধান রয়েছে আউট সোসিং নিয়োগে কোন নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া যাবে না। অথচ নাম সর্বস পরীক্ষা নিয়ে কোন রকম মেধা যাচাই ছাড়া নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৫০ জন চাকুরি প্রার্থী কোন পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করেনি তবু তাদেরকে টাকার বিনিময় বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কার্য়সহকারী পদে ২ থেকে ৩ লাখ উপসহকারী প্রকৌশলী পদে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা করে ঘুস নিয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সহকারী প্রকৌশলী পদে ৫ থেকে ৭ লাখ উপ-সহকারি প্রকৌশলী পদে ৩ থেকে ৫ লাখ করে টাকা ঘুষ নিয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মানা হচ্ছে না এসব নিয়োগে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৭ সালের জুলাই প্রকল্পটির প্রক্রিয়া শরু করে। কিন্তু আড়াই বছরে বা ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মাত্র ১৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ কাজ বাস্তবায়ন হয়েছে। আর্থিক অগ্রগতি আরও কম, মাত্র ৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ। মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে চলতি অর্থবছরে প্রকল্পটি নিম্ন অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে। এ অর্থবছরে প্রকল্পটির জন্য বরাদ্দ ৪৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে অতিরিক্ত ১০৫ কোটি বরাদ্দ চেয়ে অর্থ বিভাগ ও পরিকল্পনা কমিশনকে চিঠি দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। ২০১৭ সালের ২৯ আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। এর মোট খরচ ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৩৩৪ কোটি ৯৮ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর প্রকল্পটির প্রথম সংশোধন আনা হয়। সংশোধনীতে এর খরচ বাড়িয়ে ধরা হয় ১ হাজার ৭৫৭ কোটি ৪৭ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। আর প্রকল্পটি মেয়াদ বাড়িয়ে করা হয় ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত।

স্থানীয় সরকার বিভাগের এক যুগ্মসচিব জানান, আড়াই বছরে প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মিজানুর রহমান প্রকল্পের কাজ শুরু না করে। কিভাবে খনন কাজে ১৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ কাজ বাস্তবায়ন হয়েছে। আর্থিক অগ্রগতি আরও কম, মাত্র ৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে প্রকল্পটি নিম্ন অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত থাকায় গত অর্থবছরে শুধু প্রশাসনিক ব্যয় ছাড়া কোনো অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। প্রকল্পটির বিপরীতে মোট ৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও এ যাবত তৃতীয় কিস্তি পর্যন্ত মোট ২৭ কোটি টাকা অবমুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রাজস্ব ১৫ কোটি এবং মূলধন ১২ কোটি টাকা। মূলধন খাতের এ অর্থ প্রকৃত প্রয়োজনের তুলনায় অপর্যাপ্ত।

কর্মকর্তারা আরও জানান, জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্তই এ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নের প্রকৃত সময়। বর্তমানে ১৯ কোটি টাকার চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে এবং মাঠ পর্যায়ে কাজ চলমান রয়েছে। ২০২১ সালের জানুয়ারি নাগাদ চলমান কাজের চুক্তিমূল্য ২৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। গত অর্থবছরে বাস্তবায়িত কাজের বিপরীতে মাঠ পর্যায়ে পরিশোধের পর প্রায় ২৫ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। পরিকল্পনা মোতাবেক প্রত্যাশিত অগ্রগতি নিশ্চিত করতে এ মুহূর্তে মূলধন খাতে অন্তত ১০৫ কোটি বরাদ্দের প্রয়োজন। চললতি অর্থবছরের এডিপিতে অতিরিক্ত বরাদ্দ প্রদানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Jamal khan ১৪ মার্চ, ২০২১, ১:৪১ পিএম says : 0
হলো না
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন