আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রিয় মুমিন বান্দাদের জন্য চিরশান্তির জান্নাত প্রস্তুত করে রেখেছেন। অসংখ্য-অগণিত নিয়ামতে পরিপূর্ণ সে জান্নাত।
সেখানে সুখ-শান্তির অন্ত থাকবে না। আরাম-আয়েশের জন্য যা যা প্রয়োজন তার সব কিছুই থাকবে তাতে।
পবিত্র কোরআন ও হাদিসে জান্নাতের নিয়ামত গুলোর বিশদ বিবরণ এসেছে। জান্নাতের নিয়ামত হবে অকল্পনীয়।
নবী কারিম সা. বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি আমার নেককার বান্দাদের জন্য এমন সব বস্তু তৈরি করে রেখেছি, যা কখনো কোনো চক্ষু দেখেনি, কোনো কান শুনেনি, যা সম্পর্কে কোনো মানুষের মনে কোনো ধারণাও জন্মেনি। (সহিহ মুসলিম: ৭০২৪)
পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‹তাদের জন্য রয়েছে চির শান্তির জান্নাত, চির বসন্তের জান্নাত, যার তলদেশে প্রবাহিত হতে থাকবে নদীসমূহ। সেখানে তাদেরকে সোনার কাঁকনে সজ্জিত করা হবে। তাঁরা পাতলা ও মোটা সবুজ বস্ত্র পরিধান করবে এবং উপবেশন করবে উচ্চ আসনে বালিশে হেলান দিয়ে। চমৎকার পুরস্কার এবং সর্বোত্তম আবাস›। (সূরা কাহাফ:৩১)
অন্যত্র আরো ইরশাদ হয়েছে, অবশ্য মুত্তাকীনদের জন্য সাফল্যের একটি স্থান রয়েছে। বাগবাগিচা, আঙ্গুর, পূর্ণ যৌবন, সমবয়সী তরুণী এবং উচ্ছ¡সিত পানপাত্র। সেখানে তারা শুনবে না কোনো বাজে ও মিথ্যা কথা। প্রতিদান ও যথেষ্ট পুরস্কার তোমাদের রবের পক্ষ থেকে। (সূরা নাবা:৩১-৩৬) এ প্রসঙ্গে প্রিয়নবী এর একটি হাদিস- হজরত আবু হুরায়রা রা. প্রিয়নবী সা. এর দরবারে আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! জান্নাতের বিবরণ দান করুন। তখনি তিনি বর্ণনা করেন,জান্নাতের একটি ইট স্বর্ণের,একটি রৌপ্যের,কংকর হবে মনি-মুক্তার, জাফরানের মাটি, কস্তুরির প্লাস্টার। যে জান্নাতে প্রবেশ করবে, সে আনন্দ- উল্লাসে মাতোয়ারা থাকবে।কোনো দুঃখ-কষ্ট ও অভাব-অনটন, তাকে স্পর্শ করবে না। সে অনন্তকাল এতে অবস্থান করবে। কখনো আর মৃত্যুবরণ করবে না। না তার পরনের পোশাক পুরাতন হবে আর নাতো যৌবনকাল শেষ হবে (তারা অনন্তযৌবনা হবে)। (জামে তিরমিজি: ২৫২৬)
একজন সর্বনিম্নস্তরের জান্নাতিকে এ দুনিয়ার চেয়ে বহুগুণে বড় একটি জান্নাত দান করা হবে।
এক হাদিসে বিশ্বনবী (সা.)ইরশাদ করেন, জান্নাতিদের সর্বাপেক্ষা নিম্নস্তরের হলো সে ব্যক্তি, যার উদ্যান, সেবক,স্ত্রী, মসনদ ও খাট এপরিমাণ জায়গা জুড়ে বিস্তৃত থাকবে, যা এক সহস্র বছরে ও অতিক্রম করা যাবে না।( জামে তিরমিজি:২৫৫৩) রাসূলুল্লাহ সা. আরো বলেন, অতি সাধারণ মর্যাদা সম্পন্ন একজন জান্নাতিরও আশি হাজার সেবক ও বাহাত্তর জন হূর থাকবে। আর তার জন্য মণিমুক্তা,গোমেদ ও ইয়াকূত পাথরের তাঁবু নির্মাণ করা হবে।( জামে তিরমিজি:২৫৬২) প্রতিনিয়ত জান্নাতিদের রুপ-লাবণ্য বৃদ্ধি পেতে থাকবে।
প্রিয়নবী সা. ইরশাদ করেন,জান্নাতে একটি বাজার রয়েছে,যেখানে তারা প্রতি শুক্রবারে পরস্পর সাক্ষাৎ করবে।
তখন উত্তরের বাতাস প্রবাহিত হবে, যা তাদের মুখমন্ডল ও কাপড়ে আলোড়িত করবে। এতে তাদের সৌন্দর্য ও রুপ-লাবণ্য আরো বেড়ে যাবে ।তারা রুপ-লাবণ্যে সমৃদ্ধাবস্থায় স্ত্রীদের কাছে ফিরবে।তখন তাদের স্ত্রীরা বলবে, আল্লাহর কসম, আমাদের থেকে পৃথক হওয়ার পর তোমাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেয়েছে।উত্তরে তাঁরা বলবে,আল্লাহর শপথ, আমাদের প্রস্থানের পর তোমাদের সৌন্দর্য ও বহুগুণে বেড়ে গেছে।(সহিহ মুসলিম:৭০৩৮)
জান্নাতি হুরদের রুপের বিবরণ দিতে গিয়ে প্রিয়নবী সা. বলেন, জান্নাতি রমণীরা ৭০টি কাপড় পরিহিত থাকবে, সে গুলো ভেদ করে ও তাদের পায়ের গোছার শুভ্রতা এবং অস্থি-মজ্জা দেখা যাবে। কারণ, তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন,যেন তারা পদ্মরাগ ও প্রবাল ।আর পদ্মরাগ এমন স্বচ্ছ পাথর যার ভেতর কোনো সুতা প্রবেশ করালে তা বাহির থেকে দেখা যায়। ( তিরমিজি:২৫৩২)
আল্লাহ আমাদের জান্নাতের অফুরন্ত নিয়ামত লাভের তাওফিক দান করুন।
লেখক:মুহাদ্দিস,জামিয়া ইসলামিয়া হামিদিয়া বটগ্রাম, সুয়াগাজী, সদর দক্ষিণ, কুমিল্লা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন