শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ইসলামে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের স্থান নেই : র‌্যাব ডিজি

প্রকাশের সময় : ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার

র‌্যাব ডিজি বেনজীর আহমেদ বলেছেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম। এখানে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের স্থান নেই। ইসলামের নামে যারা মানুষ হত্যা করছে তারা মুসলমানের শত্রু। এদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরোধ গড়ে তুলবে হবে। ইসলাম কখনো নিরীহ মানুষকে হত্যা করা সমর্থন করে না।
গতকাল শনিবার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটিতে নবীনবরণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন র‌্যাব প্রধান বেনজীর আহমেদ।
র‌্যাবের ডিজি বলেন, আর্টিজান হামলা আমাদেরকে নাড়া দিয়েছে। এখান থেকে আমরা অনেক শিক্ষা পেয়েছি। ছেলেমেয়েরা কোথায় কী করে, কাদের সঙ্গে মেশে, তাদের আচরণে কোনো পরিবর্তন হলো কি না, এসব বিষয়ে নজর রাখতে হবে।
তিনি আরো বলেন, কোনো ছাত্র উগ্রবাদে জড়ালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে তার দায়িত্ব নিতে হবে। এব্যাপারে সবাইকে সর্তক থাকতে হবে। কারণ জঙ্গিরা ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠার নামে ইসলাম ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা মেধাবীদের তারা দলে টানছে। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বড় ভাই শিক্ষার্থীদের কাছে বিভ্রান্ত মতবাদ প্রচারের খবর পাওয়া গেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে খবর দিতে হবে।
বেনজীর আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত শান্তিপ্রিয় ও সহনীয়। শান্তিপ্রিয় এ সমাজে ঘোষণা দিয়ে বোমা মেরে, অস্ত্র দিয়ে কয়েকজন মানুষ মেরে কিছু করার স্বপ্ন যারা দেখছেন তারা কিছুই করতে পারবে না। ইতোমধ্যে তারা বাংলাদেশ থেকে নিশ্চিহ্ন হয়েছেন, আবারও হবেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ যে ধর্মচর্চা করে তা শিখেছেন পরিবার থেকে। জেনেছেন ইমামদের কাছ থেকে। এখন সেখানে ইসলাম শেখাচ্ছে বড় ভাইরা। ক্যাম্পাসে ইসলাম প্রচারের নামে এ বড় ভাইদের দেখলে সঙ্গে সঙ্গে জানানোর অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, এ বড় ভাইদের আমরা নিশ্চিহ্ন ও ধ্বংস করে দিতে চাই।
সোশ্যাল মিডিয়া সম্পর্কে র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, এর অনেক ভালো ও খারাপ দিক রয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়াকে টেরোরিস্টরা তাদের রিক্রুটমেন্টের কাজে ব্যবহার করছেন। ৯ম-১০ম শ্রেণির শিশুরা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করছে। জঙ্গিরা টার্গেট করছে তাদের। প্রত্যেক অভিভাবককে এদিকে নজর রাখতে হবে, যাতে তাদের টার্গেট করতে না পারে। সোশ্যাল মিডিয়ায় সন্ত্রাসী, জঙ্গি কার্যক্রমের কোনো প্রচার, অপচেষ্টা দেখলে সঙ্গে সঙ্গে র‌্যাবকে জানানোর জন্য শিক্ষার্থীদের অনুরোধ জানান বেনজীর আহমেদ।
সাম্প্রতিক জঙ্গি তৎপরতায় দেশের উচ্চবিত্ত শ্রেণির পছন্দ এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টির বেশ কিছু ছাত্রের সম্পৃক্ততার তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলাকারীদের একজন নিবরাস ইসলাম এবং ৭ জুলাই কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় হামলাকারী আবির রহমান এই বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্র ছিলেন।
গত ২৬ জুলাই রাজধানীর কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় নিহত সন্দেহভাজন তিন জঙ্গিও নর্থসাউথের শিক্ষার্থী ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়টির আরও অন্তত ৪০ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে উদ্বিগ্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এদের দুইজন তাদের পরিবার নিয়ে উধাও হয়েছে। তারা বাংলাদেশ ছেড়ে একটি মুসলিম দেশে পাড়ি জমিয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে দেখা গেছে, বেসরকারি এই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে উগ্রবাদীরা গত কয়েক বছর ধরেই তৎপর। ছাত্রদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষকের বিরুদ্ধেও উগ্রপন্থায় জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর্টিজান হামলায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে গ্রেফতার হাসনাত আর করিম এই বিশ্ববিদ্যালয়টিরই শিক্ষক ছিলেন। চার বছর আগে জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে এবং চার শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করা হয়।
তবে কেবল নর্থসাউথ নয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ব্র্যাক, আল মানারাত ইউনিভার্সিটিরও একাধিক শিক্ষার্থীর জঙ্গি সম্পৃক্ততায় জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের কেবল ছেলে শিক্ষার্থী নয়, একাধিক তরুণীও গ্রেফতার বা নিখোঁজ হয়েছেন।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েরও বেশ কিছু শিক্ষার্থীর জঙ্গি সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে। গুলশানে হলি আর্টিজানে হামলার মূল হোতা হিসেবে যাদেরকে শনাক্ত করা হয়েছে তাদের একজন মারজান ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী নিখোঁজ আছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েরও একাধিক শিক্ষার্থীর জঙ্গি সম্পৃক্ততার তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েরও চার ছাত্রকে আটক করেছে পুলিশ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আতিকুল ইসলাম। এতে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান আজিমুদ্দিন আহমেদ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, মাদরাসার পদক্ষেপ নেওয়ার প্রশংসা করেন প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সরকার কোনোভাবেই জঙ্গিবাদের কাছে মাথা নত করতে পারে না। কোনো কিছুর বিনিময়ে জঙ্গিবাদের সঙ্গে আপোস করবো না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন