বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

দারিদ্র্য মোচনে বাংলাদেশ থেকে শিক্ষা নিতে পারেন বাইডেন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১১ মার্চ, ২০২১, ৪:৫৬ পিএম

দারিদ্র্য মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে বাংলাদেশকে দেখে শিক্ষা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মার্কিন কলামিস্ট নিকোলাস ক্রিস্টোফ। বুধবার নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত একটি কলামে তিনি বাইডেনের প্রতি এই আহ্বান জানান।

ক্রিস্টোফ লিখেছেন, ইতিহাসের সবচেয়ে ধনী এবং সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রেও শিশু দারিদ্র্যতা দেখা দিয়েছে। আমেরিকা পুনরুদ্ধারে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ১ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের পরিকল্পনা পাস হয়েছে। তা দিয়ে আবার ফিরে আসার চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। ঐতিহাসিক এই প্যাকেজে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে খাদ্যসম্ভারের উপর। যেটা দিয়ে শিশু দারিদ্র্য বিমোচন করা সম্ভব। তবে কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির গবেষণা বলছে, এভাবে শিশু দারিদ্র্য কমে যেতে পারে অর্ধেক। ‘ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট যেমন বয়োবৃদ্ধদের সামাজিক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করেছিলেন বাইডেন তেমনিই প্রাচীন পথে হাঁটছেন। এটা মার্কিন নীতির একটি বিপ্লবকে প্রকাশ করে, সেই সঙ্গে দেরিতে হলেও বোঝায় যে সব সমাজের উচিত দরিদ্র শিশুদের জন্য একটা অংশ বিনিয়োগ করা।’

সেজন্য বাংলাদেশের দিকেই দৃষ্টি দেয়ার আহ্বান ক্রিস্টোফের। তিনি লিখেছেন, ৫০ বছর আগে গণহত্যা ও ক্ষুধার মধ্যে দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম। ১৯৯১ সালে এক ঘুর্ণিঝড়েই বাংলাদেশে প্রাণ হারায় ১ লাখ মানুষ। বাংলাদেশ অনেক প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছে কিন্তু সেসব পেরিয়ে গত ৩ দশকে ব্যাপক উন্নয়ন সম্পন্ন করেছে দেশটি। ‘বাংলাদেশে অবিচ্ছিন্নভাবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেড়েছে এবং বিশ্ব ব্যাংকের হিসেবে, সাম্প্রতিক এই মহামারির ৪ বছর আগে বাংলাদেশের অর্থনীতি বেড়েছে ৭-৮ শতাংশ। বাংলাদেশে বর্তমানে গড় আয়ু ৭২ বছর। সেটা যুক্তরাষ্ট্রের কিছু জায়গার থেকেও কম, তার মধ্যে মিসিসিপির ১০টি কাউন্টিও রয়েছে। একসময় বাংলাদেশে হতাশা প্রত্যাশিত ছিলো আর এখন তারা অন্যদের শেখাতে পারে কিভাবে উন্নতি করতে হয়।’

তবে সেটার পেছনে মূল রহস্য হিসেবে দুটি বিষয়ের নাম উল্লেখ করেন ক্রিস্টোফ। এক শিক্ষা ও দুই নারী উন্নয়ন। ১৯৮০ সালের দিকে বাংলাদেশে খুব কম মানুষ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোতো। বিশেষ করে মেয়েরাতো খুবই কম পড়াশোনা করতো ও অর্থনীতিতে অবদান রাখতো। তারপরই সরকার ও নাগরিক সংস্থাগুলো শিক্ষার উপর গুরুত্ব দেন। তারমধ্যে মেয়েরাও ছিলো। বর্তমানে বাংলাদেশে ৯৮ শতাংশ শিশু প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে। অবাক করা বিষয় হচ্ছে বর্তমানে দেশের হাইস্কুলগুলোতে ছেলেদের থেকে মেয়েদের সংখ্যা বেশি। ক্রিস্টোফ যোগ করেন, সবচেয়ে বড় যে নাটকীয় পরিবর্তন আসে তা শুরু হয় নারীর অবস্থান পরিবর্তনের চেষ্টার মধ্য দিয়ে। যেহেতু বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়ন করেছে তাই তারা দেশটির স্তম্ভ হয়ে উঠেছে। দেশের গার্মেন্টস সেক্টর নারীদের অনেক ভালো সুযোগ এনে দিয়েছে। চীনের পরে বাংলাদেশেরই গার্মেন্টস রপ্তানি সবচেয়ে বেশি।

বাংলাদেশের ফ্যাক্টরিগুলোতে পশ্চিমা মানদণ্ডের প্রয়োগ কম। সেখানে অপব্যবহার ও যৌন হয়রানির মাত্রা বেশি। তাছাড়া আগুন ও অন্যান্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতো আছেই। ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসে এগারো শ’ জনেরও বেশি কর্মীর মৃত্যুর পরও কর্মীরা ১৪ বছর বয়সে বিয়ে করে ধানের ক্ষেতে কাজ করার থেকে এটাকেই ভালো মনে করছে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক বাংলাদেশকে ‘দারিদ্র্য দূরীকরণে একটি অনুপ্রেরণার গল্প’ বলেই উল্লেখ করেছেন। গত ১৫ বছরে দারিদ্র্যতা থেকে উঠে এসেছে ২৫ মিলিয়ন মানুষ। ১৯৯১ সালের পরে অপুষ্টির শিকার শিশুর সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে অর্ধেকে, যেটা এখন ভারতের থেকেও কম। কমেছে জন্মহারও।

সবচেয়ে প্রান্তিক এবং কম উৎপাদনশীল জনগণের উপরই বিনিয়োগ করেছে বাংলাদেশ। কারণ সেখান থেকেই সবচেয়ে বেশি ফলাফল আসবে। একই বিষয় সত্য আমেরিকার ক্ষেত্রেও। ক্রিস্টোফের মতে, বিলিয়নিয়ারদের থেকে তো আর অনেক বেশি বেশি উৎপাদনশীলতা পাওয়া যাবে না। তার থেকে বরং সাতজনে একজন দরিদ্র শিশু যে কখনো বিদ্যালয়ে যায়নি তাকে সাহায্য করলে অনেক বেশি লাভ হবে। ক্রিস্টোফ বলেন, বাংলাদেশ দেখিয়েছে প্রান্তিক শিশুদের উপর বিনিয়োগ শুধু মমত্ববোধ নয় বরং সেটা জাতিকে আরো উন্নত হওয়ার জন্য সাহায্য করা। সূত্র: নিউ ইয়র্ক টাইমস।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Shah Alam ১১ মার্চ, ২০২১, ১০:১১ পিএম says : 0
একদম ঠিক, যে দেশে ভারতীয়রা এক বছর চাকরি করে দশ বিলিয়ন ডলার নিয়ে যায়, সে দে-শ থেকে শিক্ষা নিতেই হবে। আর ও ভালো হতো যদি আমিরিকানরা চাকরির ক্ষেত্রে এ দেশে আসে, কেননা তা হলে ভারতীয়দের জন্য একটু কমপিটিশন হতো
Total Reply(0)
Md Shahan Ahmed ১১ মার্চ, ২০২১, ১০:১২ পিএম says : 0
চামচামির একটা সীমা রাখা দরকার ..!
Total Reply(0)
Rumel Lukman Chowdhury ১১ মার্চ, ২০২১, ১০:১২ পিএম says : 0
আমেরিকান রা ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে এসে কাজ করেও তাদের দেশের উন্নয়ন করতে পারেন।
Total Reply(0)
Nura Alam Sajo ১১ মার্চ, ২০২১, ১০:১২ পিএম says : 0
বাংলাদেশর এক মাএ গরিব হলাম আমি যে কিনা এখনো সৌদি আরব কামলা খাঁটি
Total Reply(0)
Fk Rayhan ১১ মার্চ, ২০২১, ১০:১৩ পিএম says : 0
পুরা মিছা কথা বাইডেন স‍্যার আমি তো এখনো গরিব রয়ে গেলাম।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন