শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

নিষিদ্ধ হচ্ছে হিমায়িত গোশত আমদানি

আমদানি নীতিমালা করতে চায় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ১২ মার্চ, ২০২১, ১২:০৬ এএম

মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি

কোরবানীর গরুর জন্য কিছুদিন আগেও ভারতের দিকে তাকিয়ে থাকতে হতো। তবে এখন দেশে পালিত গরুতেই কোরবানির শতভাগ চাহিদা পূরণ হচ্ছে। দেশের খামারে উৎপাদিত পশুর গোশত চাহিদা মিটিয়ে এখন উদ্ধৃত্ত হচ্ছে। রফতানি বাজারেও দেশের গোশতের বেশ কদর রয়েছে। তার পরও বৈধ ও অবৈধ পথে আসছে পশুর গোশত। এর মধ্যে বেশির ভাগই মহিষের। গত কয়েক বছর থেকে গোশত আমদানি হচ্ছে। আমদানি করা নিম্নমানের মহিষের গোশত গরুর বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে দেশের বিভিন্ন হোটেল- রেস্তোরাঁয়। সেই সঙ্গে বিক্রি হচ্ছে চোরাই পথে আনা রোগাক্রান্ত গরুর গোশত। কোনো ধরনের উন্নত পরীক্ষা ছাড়াই এসব নি¤œমানের গোশত দেদার ঢুকছে দেশে। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকিও বাড়ছে। অবশেষে ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে হিমায়িত গোশত আমদানি নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে সরকার।

ইতোমধ্যে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে চলতি মাসের ৩ তারিখ হিমায়িত গোশত আমদানির ক্ষেত্রে বিমানবন্দরে প্রবেশ, কোল্ড স্টোরে সংরক্ষণ, পরিবহণ এবং বিতরণের বিষয়ে জানতে চেয়ে চিঠি দিয়েছে প্রাণী সম্পদ অধিদফতরকে।

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের ড. মোহাম্মদ মুসলিম পরিচালক (ল্যাব নেটওয়ার্ক) ইনকিলাবকে বলেন, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ নিরাপদ গোশত আমদানি নিশ্চিত করতে চায়। একারণে একটি নীতিমালা করা প্রয়োজন। হিমায়িত গোশত আমদানির ক্ষেত্রে প্রাণি সম্পদ অধিদফতর কী কী মানদন্ড আমদানির অনুমতি দিচ্ছে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। তাদের প্রতিবেদন পেলেই হিমায়িত গোশত আমদানির বিষয়ে একটি নীতিমালা করা হবে।

এদিকে প্রাণী সম্পদ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ডা. পল্লব কুমার দত্ত জানান, দেশে হিমায়িত গোশত আমদানির জন্য কোনো নীতিমালা নেই। আদানি সংক্রান্ত একটি আদেশের বলে আমদানি করা হয়ে থাকে। এ টি সংশোধনের জন্য মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। তিনি যতটুকু জেনেছেন ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে গোশত আমদানি বন্ধে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। আমরা গোশত উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। এ পর্যায়ে গোশত আমদানি খামারীদের জন্য ক্ষতি কর। ক্ষতির কথা বিবেচনা করে সরকার গোশত আমদানি নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। এ অবস্থায় আমাদের আর নতুন করে হিমায়িত গোশত আমদানির প্রয়োজন নাই। তিনি বলেন, বিশেষ ক্ষত্রে কোনো দূতাবাস বা মিশন যদি চায় বা মনে করেন এদেশের গোশত না খেয়ে তাদের নিজ দেশের গোশত খাবেন সেক্ষেত্রে বিশেষ অনুমতি নিয়ে গোশত আমদানির সুযোগ পাবেন।

মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক বর্তমানে গরু মোটা তাজাকরণ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে গরুর গোশত উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। অর্থনীতিতে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। হিমায়িত গরুর গোশত আমদানি করা হলে খুচরা বাজারে দাম কমলেও দেশীয় খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ধর্মীয় ঐতিহ্য অনুযায়ী দেশের মানুষ শরিয়াহ মোতাবেক জবাই করা গরুর গোশত খেয়ে থাকে। পাশের দেশ থেকে গরুর গোশত আমদানি করা হলে জবাইয়ের পদ্ধতিটি নিয়ে জনমনে সংশয় সৃষ্টি হতে পারে। মালয়েশিয়া থেকে হিমায়িত গরুর গোশত আমদানি হয়। আমদানিতে এসব মাংসের কেজিপ্রতি দাম দেখানো হয় ১০৮ থেকে ২২৫ টাকা। এই দর বাংলাদেশের বাজারের চেয়ে অনেক কম। ঢাকার বাজারে এখন গরুর গোশতের কেজিপ্রতি দাম ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকা।

ট্যারিফ কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে আমেরিকান ডেইরি লিমিটেড, বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মস অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রির হিসাবে বাংলাদেশে প্রাণিজ আমিষের প্রধান উৎস গরুর মাংসের বর্তমান প্রাপ্যতা বছরে ৭১ দশমিক ৫৪ লাখ মেট্রিক টন। প্রতি বছর প্রায় ২০ হাজার কেজি গোশত আমদানি হয়। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে প্রায় ২০ টন বা ২০ হাজার কেজি গরুর গোশত আমদানি হয়েছে। আগের অর্থবছরে দেশে প্রায় ৫৫ হাজার কেজি গরুর গোশত আমদানি হয়েছিল। তবে তার আগের, অর্থাৎ ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ১৮ হাজার কেজি গরুর গোশত। আমদানি নীতি অনুযায়ী, দেশে শূকর ছাড়া অন্যান্য পশুর গোশত আমদানি করা যায়। তবে এ ক্ষেত্রে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের অনুমতি নিয়ে আমদানি করতে হবে। আমদানির ক্ষেত্রে নানা শর্ত আছে। শর্তের মধ্যে অন্যতম হলো গরু, ছাগল ও মুরগির গোশত এবং মানুষের খাওয়ার উপযোগী অন্যান্য পশুর গোশত আমদানির ক্ষেত্রে মোড়কের গায়ে রফতানিকারক দেশের উৎপাদনের তারিখ ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ মুদ্রিত থাকতে হবে। পাশাপাশি পৃথক লেবেল ছাপিয়ে মোড়কের গায়ে লাগানো যাবে না। এ ছাড়া গোশত নানা ধরনের ক্ষতিকর উপাদান, অ্যান্টিবায়োটিক ও রোগমুক্ত বলে সনদ থাকতে হবে। গোশত বন্দরে পরীক্ষা করবে বাংলাদেশি সরকারি সংস্থা। গরুর গোশত আমদানিতে মোট কর ৩৩ শতাংশ। এর মধ্যে আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ, অগ্রিম আয়কর ৫ শতাংশ ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৩ শতাংশ।

দেশে ভারত থেকে হিমায়িত মাংস আমদানি বাড়লে বরং খামারিদের ক্ষতি হতে পারে। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে গরু কেনা, গরু লালন-পালন, গরুর সংকরায়ণ, দুগ্ধজাতীয় খাদ্যসামগ্রী উৎপাদন ও বিপণন খাতে বিপুল পরিমাণ ঋণ দেয়া হয়েছে। দেশে সরকারি ও বেসরকারি গবাদিপশু পালনে ব্যাপক বিনিয়োগ হচ্ছে। ফলে ভবিষ্যতে গরুর গোশতের দাম কমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ বলেন, দেশে কৃষিঋণের মাধ্যমে চরাঞ্চলে পশু পালন করা শুরু হয়েছে। এখন আমাদের দেশে গরুর গোশত ও কোরবানির চাহিদা পূরণ করেও বিদেশে গোশত, হাড়, শিং, নাড়ি-ভুঁড়ি, চামড়া রফতানি করে ৬০ থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা আয় করছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
Faruk ১২ মার্চ, ২০২১, ১:৩৬ এএম says : 0
Very good
Total Reply(0)
Faruk ১২ মার্চ, ২০২১, ১:৩৬ এএম says : 0
Very good
Total Reply(0)
Habib ১২ মার্চ, ২০২১, ১:৩৬ এএম says : 0
Druto ban kora hok
Total Reply(0)
Humayun ১২ মার্চ, ২০২১, ২:২৪ এএম says : 0
100% হারাম হারাম হতে পারে।
Total Reply(0)
Humayun ১২ মার্চ, ২০২১, ২:২৪ এএম says : 0
100% হারাম হারাম হতে পারে।
Total Reply(0)
মেহেদী ১২ মার্চ, ২০২১, ৮:০২ এএম says : 0
জবাইয়ের পদ্ধতি নিয়ে সংশয় থা্কলে অবশ্য তা নিষিদ্ধ করতে হবে।
Total Reply(0)
মেহেদী হাসান শাওন ১২ মার্চ, ২০২১, ৮:০৩ এএম says : 0
এখঅনে ইমানি বিষয় জড়িত তাই বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিতে হবে।
Total Reply(0)
হোসাইন এনায়েত ১২ মার্চ, ২০২১, ৮:০৩ এএম says : 0
বাংলাদেশে যথেষ্ট গোশত উৎপাদন হয়, সন্দেহপূর্ণ এসব খাবার না আনায় ভালো।
Total Reply(0)
কাজী হাফিজ ১২ মার্চ, ২০২১, ৮:০৪ এএম says : 0
ভালো উদ্যোগ, আমাদের সমর্থন রইলো।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন