শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দেশে কঠিন হয়ে গেছে : বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ মার্চ, ২০২১, ১২:০১ এএম

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গুরতর অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা বাংলাদেশে দিনে দিনে কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে দ্রæত বিদেশে নেয়া প্রয়োজন। গতকাল জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার তাকে (খালেদা জিয়া) গৃহবন্দি করে রেখেছে। চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতে চেয়েছেন সেটাও সরকার দেয় নাই। তাকে বাংলাদেশে রেখেই চিকিৎসা করতে বলছে। যেখানে তার চিকিৎসা অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে দিনে দিনে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা একটা কঠিন সময় পার হচ্ছি, একটা সঙ্কট মুহূর্ত পার হচ্ছি। আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায় মামলায় সাজা দিয়ে তাকে আটক করে রাখা হয়েছে। তিনি অসুস্থ। এই দুই-তিনদিন আগে তাকে আরো ৬ মাস তার সাজা স্থগিত করছে বলছে। কোথায় সাজা স্থগিত করছে আমরা এখনো জানি না।
তিনি বলেন, আমরা অবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই। আমরা এর নিচে কিছু চাই না। মুক্তি দিতে হবে, নিঃশর্তভাবে মুক্তি দিতে হবে। আমরা আমাদের যেসব নেতা-কর্মী বন্দি আছেন তাদের সকলে মুক্তি দিতে হবে। আমাদের নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে, আমাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ৩৫ লক্ষ মামলা আছে সেগুলো প্রত্যাহার করতে হবে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে।
গুলিস্তানে মহানগর নাট্যমঞ্চে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের চতুর্থ জাতীয় সম্মেলননের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়। প্রায় দুই যুগ অর্থাৎ ২২ বছর পর কৃষক দলের এই জাতীয় সম্মেলন হয়। সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ১৯৯৮ সালের ১৬ মে।
সকাল ১০টায় মহানগর নাট্যমঞ্চের প্রাঙ্গনে জাতীয় পতাকা ও দলীয় উত্তোলন, রঙিন বেলুন ও সাদা কবুতর উন্মুক্ত করে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও কৃষকদলের আহবায়ক শামসুজ্জামান দুদু। এই সময়ে জাতীয় সঙ্গীত এবং পরে দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়।
বিকাল তিনটায় গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে হয় সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্ব কাউন্সিল অধিবেশন। এই সম্মেলনে সারা দেশে থেকে আসা সংগঠনটির ৫৪৮ জন কাউন্সিলর অর্থাৎ ৭৯টি সাংগঠনিক জেলার ৩৯৫ জন এবং কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির ১৫৩ জন প্রতিনিধি অংশ নেন।
উদ্বোধনীর অনুষ্ঠানের বক্তব্যের সমাপ্তিতে সংগঠনের বিধান অনুযায়ী নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের পূর্বাহ্নে কৃষক দলের ১৫৩ সদস্যের আহবায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব। গত বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি শামসুজ্জামান দুদুর নেতৃত্বে ১৫৩ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে বিএনপি
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ সরকার অন্যায়ভাবে ক্ষমতায় বসে আছে, দখল করে বসে আছে। কি তফাৎ আপনাদের পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সঙ্গে আমাকে বুঝাবেন একটু? আমি পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সাথে আপনাদের কোনো তফাৎ দেখি না। তারাও জোর করে বন্দুক দিয়ে মানুষকে মেরে ক্ষমতা দখল করে বসেছিল। আপনারা আজকে সেই একই কায়দায় মানুষকে হত্যা করে, নির্যাতন করে, জোর করে আপনারা ক্ষমতায় বসে আছেন। দয়া করে আপনাদের একদম অতীতের কথা চিন্তা যখন আপনারা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছিলেন সেই কথা চিন্তা করে আওয়ামী লীগকে যদি বাঁচাতে চান তাহলে অবিলম্বে যা আপনারা করেছেন তার জন্য মাফ চেয়ে দেশের মানুষের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যবস্থা করেন। পদত্যাগ করেন, নির্বাচন দিন, নতুন নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় নির্বাচনে নতুন সরকার আসুক, নতুন পার্লামেন্ট আসুক।
কৃষকদের দুরবস্থার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, কৃষকদের সংগঠিত করতে হবে। তাদের অধিকার আদায় করতে কৃষক দলকে সক্রিয় হতে হবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তিনি ৫ হাজার টাকার কৃষক ঋণ সুদসহ মওকুফ করে দিয়েছিলেন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মাফ করে দিয়েছিলেন। বিএনপি যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই কৃষকদের ঋণ সহজ করে দিয়েছে। এই সরকার এখন পর্যন্ত কৃষকদের জন্য এমন কিছু করেনি যা দিয়ে তারা বলতে পারবে আমরা কৃষকদের জন্য এই এই কাজগুলো করেছি। কোবিড-১৯ এর প্রণোদনা দিয়েছে বিভিন্ন সেক্টরে, কৃষি ক্ষেত্রেও দিয়েছে কিন্তু কৃষি ক্ষেত্রের টাকাগুলো তাদের নেতারা (আওয়ামী লীগ) পকেটে ভরে নিয়েছে। আড়াই হাজার টাকা করে অনুদান দেয়ার কথা ছিল সেটাও তারা পকেটে ভরে নিয়েছে। এই সরকার লুটেরা সরকারে পরিণত হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ এই দেশটাকে পৈত্রিক সম্পত্তি করে নিয়েছে। এই যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তিনি খুব সুন্দর সুন্দর কথা বলেন। চমৎকার চমৎকার আসনে বসে, ফিরোজা রঙের এ্কটা আসনে বসে তিনি প্রতিদিন বিএনপির বিরুদ্ধে বিষোধগার করতে থাকেন, প্রতিদিন তিনি বিএনপিকে ধমক দেন, শিক্ষা দেন। আরে আপনি আগে নিজের ঘরকে শিক্ষা দেন। আপনার ভাই কাদের মির্জা যে সমস্ত কথা আপনার সম্পর্কে বলে, আপনাদের নেতাদের সম্পর্কে বলে সেটার পরে তো আপনাদের থাকার কথা না, পদত্যাগ করা উচিত। আপনারা নিজের ঘরে নিজেরা মারামারি করে, দলাদলি করে ইতিমধ্যে দুইজনকে হত্যা করেছেন-একজন সাংবাদিক, একজন রাজনৈতিক কর্মী। কোনো বিচার নাই। এটাই সমগ্র বাংলাদেশের চিত্র। আমরা দেখেছি, কিভাবে আজকে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে, সমগ্র দেশটাকে তাদের দলীয় সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছে এবং দেশটাকে তারা শোষন করছে। হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করছে। এই দেশটাকে তারা লুটেরা স্বর্গ রাজত্ব তৈরি করেছে।
উন্নয়নের নামে মেগালুট করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, আজকের পত্রিকায় দেখলাম ফাস্টেড ট্রেন, দ্রুতগামী ট্রেন চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার জন্য দুইটা চীনা কোম্পানি তারা সাপ্লাইয়ার্স ক্রেডিটে এটা করে দিতে চায়। পয়সা দেবে কে? পয়সা ওরা (চীন) এখন দেবে এবং সরকার আমাদের পকেট থেকে কেটে নেবে। আমাদের প্রশ্ন ওই জায়গায় আপনারা যে উন্নয়ন উন্নয়ন বলে চিৎকার করছেন, এই উন্নয়নে লাভবান হচ্ছে কে? লাভবান হচ্ছে আ্পনাদের কিছু মানুষ যারা কমিশন এজেন্সি করে, যারা দালালি করে, বখরা করে শুধু মাত্র আপনাদের মানুষ উপকৃত হচ্ছে, সাধারণ মানুষ কোনোভাবেই উপকৃত হচ্ছে না। এই ব্যবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে কৃষক দলকে এলাকায় গিয়ে কৃষকদেরকে সংগঠিত করে একটা গণঅভ্যুত্থানের সূচনা করার আহ্বানও জানান বিএনপি মহাসচিব।
কৃষক দলের আহ্বায়ক শামসুজ্জামান দুদুর সভাপতিত্বে ও সদস্য এসকে সাদীর পরিচালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কৃষক দলের সৈয়দ মেহেদি আহমেদ রুমি, একেএম মোয়াজ্জেম হোসেন, নাজিমউদ্দিন, আফতাব উদ্দিন আহমেদ মন্ডল, জামালউদ্দিন মিলন, এমএ হালিম, নাসির হায়দার, জিয়াউল হায়দার পলাশ, লুৎফুর রহমান, মাহমুদুল হক সানু, শরীফুল ইসলাম মোল্লা, মহসিন আহমেদ তুষার, আনোয়ারুল হক, এনায়েতুল্লাহ খোকন, রবিউল হাসান পলাশ, সালাহউদ্দিন খান মিলকী, নাসিরউদ্দিন আহমেদ বাচ্চু, রফিকুল আলম রফিক, মাহবুবুর রহমান আউয়াল, আনোয়ারুল ইসলাম বাদশা বক্তব্য রাখেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংগঠনিক প্রতিবেদন পেশ করেন কৃষক দলের সদস্য সচিব হাসান জাফির তুহিন এবং শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন তকদির হোসেন জসিম।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শহিদুল ইসলাম বাবুল, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, আবদুল খালেক, আমিরুজ্জামান শিমুল, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের আবদুর রহিম ও ছাত্র দলের ইকবাল হোসেন শ্যামল উপস্থিত ছিলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
মোঃ দুলাল মিয়া ১৩ মার্চ, ২০২১, ২:২৬ এএম says : 0
34লক্ষ কেন এক কোটি লোকের মামলা দিতে পারবে কিন্তু এবার আর এ সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না না নিরপক্ষে সরকার গঠন করে নির্বাচন হবে হবে তাই চৌরাচার সরকার কে দেশ থেকে পালাবার সুযোগ না দিয়ে পতিটি উপজেলায় পতিটিজেলায় পতিটিবিভাগে সংগ্রাম গড়ে তোলার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিইতেছি সময় বেশি নাই বসে থাকার সময় নাই আপনারা যে যেভাবে পারেন পসতুত থাকেন মুক্তি যুদ্ধের মতো আবার তৈরী হতে হবে সাধীন দেশ এখন সাধীন নাই তাই আবার সাধীন করতে হবে বাংলার জনগণ পয়োজনে অস্রে হাতে তুলে নিতে হবে ভয় করিবেন না ।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন