দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বিগত ৫ মাসে দুর্নীতির অভিযোগ সংশ্লিষ্ট কতজনকে অব্যাহতি দিয়েছেন সেই তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট। ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে গতকাল বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার এবং বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের ডিভিশন বেঞ্চ এ তালিকা চান। এ তথ্য জানান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক। তিনি জানান, গত ৫ মাসে কতজনকে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন তার একটি তালিকা বিদায়ী চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের কাছ থেকে চেয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ১১ এপ্রিলের মধ্যে এ তালিকা দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ‘সোর্স ও তথ্য-প্রমাণ’ দাখিলেরও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এর আগে গত ১৪ এপ্রিল ‘দুদকে অনুসন্ধান-বাণিজ্য’/বহু রাঘব বোয়ালকে ছেড়ে দেন ইকবাল মাহমুদ’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে ইনকিলাব। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদায়ের আগে দুর্নীতিবাজ বহু রাঘব বোয়ালকে ছেড়ে দেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। তাদের দায়মুক্তি আড়াল করতে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন কিছু নিরীহ ও দুর্বল ব্যক্তিকে। সব মিলিয়ে শেষ ৫ মাসে তিনি ২ শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে অব্যাহতি (দায়মুক্তি) দেন।
এছাড়া বহুল আলোচিত কাস্টমস কমিশনার নূরুল ইসলাম, সিভিল এভিয়েশনের প্রধান প্রকৌশলী শুধেন্দু গোস্বামী, পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেড ও তৎকালীন পরিচালক ও চেয়ারম্যান ক্যাপ্টেন মোয়াজ্জেম হোসেন, বাপেক্স’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (তিতাসের সাবেক এমডি) নওশাদুল ইসলাম, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নূরুল হুদা, এলজিইডি’র সাবেক প্রধান প্রকৌশলী খলিলুর রহমান, হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. কফিলউদ্দিন। দায়মুক্তি পাওয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ‘আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশন’। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের অর্থায়নে এলজিইডি’র প্রকল্প পরিচালক, দুদকের উপ-পরিচালক আব্দুছ ছাত্তার সরকার, জনস্বাস্থ্যের নির্বাহী প্রকৌশলী নূরুল কবীর ভুইয়া, সওজ’র নির্বাহী প্রকৌশলী সেলিম আজাদ খান, রাজউকের নির্বাহী প্রকৌশলী ছাইদুর রহমান, একই প্রতিষ্ঠানের মো. সিরাজুল ইসলাম, সওজ’র নির্বাহী প্রকৌশলী শাহরিয়ার শরীফ খান, ঢাকা ওয়াসার প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. নূরুল ইসলাম, সাউথ-ইস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ, ডি বিল্ডার্স অ্যান্ড প্রপার্টিজ লিমিটেডেরর মালিক মো. সরোয়ার খালেদ, প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের প্রকল্প পরিচালক ডা. মো. বেলাল হোসেন, পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক কাজী মোস্তফা সারোয়ার, কাস্টমস কমিশনার (রাজস্ব) ড. মো. সহিদুল ইসলাম, উপ-প্রধান বন সংরক্ষক মো. শফিউল আলম চৌধুরী, বিডিবিএল’র এমডি মঞ্জুর আহমেদ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্স হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ডা. কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, গোয়াইনঘাটের সাব-রেজিস্ট্রার স্বপ্না বেগম, স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাছির উদ্দিন, কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের ক্যাশিয়ার মো. দেলোয়ার হোসেন, বিয়ানীবাজার উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান খান, গণপূর্তের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা একেএম মজিবুর রহমান, যুগ্ম-সচিব মো.আবুল হাসনাত হুমায়ুন কবীর, পুলিশ ইন্সপেক্টর মাহবুবুল আলম ভুইয়া, পুলিশ ইন্সপেক্টর সাইদুর রহমান, সিটি ব্যাংকের ডিএমডি মো. ওয়াদুদ, আশুলিয়ার সাব-রেজিস্ট্রার গাজী মো. আবদুল করিম, চট্টগ্রাম সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসের রেকর্ড কীপার বাবু ভজন বৈদ্য, বাখরাবাদ গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের ম্যানেজার (নাম নেই), বিআরটিএ, ঢাকার সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি) মো. শামসুল কবির, একই অফিসের মোটরযান পরিদর্শক মো. রিয়াজুল ইসলাম, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. নজরুল ইসলাম। এর বাইরেও অনেককে দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে। আর এসব অভিযোগ ‘পরিসমাপ্তি’র চিঠির অধিকাংশগুলোতেই স্বাক্ষর করেন দুদক মহাপরিচালক (বিশেষ অনু:-তদন্ত) সাঈদ মাহবুব খান। এর আগে ইকবাল মাহমুদের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের কমিশন অব্যাহতিপত্র অনুমোদন করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন