বিশেষ ব্যবস্থায় অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনা, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা, তাদের বিধবা স্ত্রী ও সন্তানদের ৩০ হাজার ঘর বা ‘বীর নিবাস’ নির্মাণ করে দেবে সরকার। তাদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নসহ মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে উপহার হিসেবে বীর নিবাসগুলো দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভিটেমাটিহীন অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষ ব্যবস্থায় জমির ব্যবস্থা করে বীরনিবাস তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ‘অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদন দিতে গিয়ে এ নির্দশ দেন তিনি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৪ হাজার ১২২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী-সচিবরা একনেক সভায় অংশ নেন।
বৈঠক শেষে ব্রিফিং এ তথ্য জানান পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মামুন-আল-রশিদ। এদিন প্রায় ৫ হাজার ৬১৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয় সম্বলিত ছয়টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৫ হাজার ৫১৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ ৫৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৪২ কোটি ৭ লাখ টাকা।
মামুন-আল-রশিদ জানান, শুধুমাত্র এই প্রকল্পটি নিয়েই প্রধানমন্ত্রী মোট ৬টি অনুশাসন দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, প্রথমে ১৪ হাজার বীর নিবাসের প্রস্তাব থাকলেও চূড়ান্ত পর্যায়ে ৩০ হাজার বীর নিবাস নির্মাণের জন্য প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রায় সব মুক্তিযোদ্ধারই সাধারণত ভিটেমাটি আছে। কিন্তু যাদেও একান্তই কোন ভিটেমাটি নেই, তাদের জেলা প্রশাসক বা ইউএনওদের মাধ্যমে জমির ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া জেলা প্রশাসক ও ইউএনওরা প্রয়েজনে প্রকল্পের টাকা দ্রুত ছাড় করতে পারেন তার ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া প্রকল্পটি মেয়াদ ৩ মাস বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুনের পরিবর্তে অক্টোবর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অর্থায়নে যাতে চাপ না থাকে সেজন্য চলতি অর্থবছর থেকেই কাজ শুরু করতে হবে। যাতে চার অর্থবছর মিলেই টাকাটা ছাড় দেয়া যায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে গ্রামীণ অর্থসরবরাহ বেড়ে যাবে।
প্রকল্পের বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের মতামত হলো- প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনা, শহিদ মুক্তিযোদ্ধা, প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধাদের বিধবা স্ত্রী ও সন্তানদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হবে। একই সঙ্গে মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে ৩০ হাজার বীর নিবাস নির্মাণ করা সম্ভব হবে।
একনেক সভা শেষে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব জয়নুল বারী সাংবাদিকদের সামনে বিস্তারিত তুলে ধরেন। অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হলো- স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ‘রাজশাহী কল্পনা সিনেমা হল থেকে তালাইমারী মোড় পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ’ প্রকল্প, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণ’ প্রকল্প, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ‘পিরোজপুর জেলার পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্প, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘শরীয়তপুর জেলার জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলায় পদ্মা নদীর ডান তীর রক্ষা (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘কন্সট্রাকশন অব নিউ ১৩২/৩৩ কেভি অ্যান্ড ৩৩/১১ কেভি সাবস্টেশন আন্ডার ডিপিডিসি (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্প।
সভার কার্যক্রমে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়‚ন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন এবং ভ‚মিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা অংশ নেন।
সভায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন