শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

প্রফেসর ড. জিয়া রহমানের আর্থিক অনিয়ম

ঢাবি অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগে আয়-ব্যয় হিসাব নিরীক্ষা

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ১৭ মার্চ, ২০২১, ১২:০১ এএম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. জিয়া রহমান বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে নিয়ম বহির্ভূতভাবে আর্থিক লেনদেন করেছেন। নিয়ম বহির্ভূতভাবে ১৭ লাখ টাকা সম্মানী নেয়া, ইভিনিং কোর্সের আয়ের নির্ধারিত অংশ বিশ্ববিদ্যালয় তহবিলে জমা না দেয়া, খরচে একাডেমিক ও কো-অর্ডিনেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিঅ্যান্ডডি) কমিটির অনুমোদন না নেয়াসহ পিপিআর অনুসরণ না করে কয়েক লাখ টাকার কেনাকাটা করার অনিয়ম পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে। জিয়া রহমানের দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে বিভাগের ১ কোটি টাকার এফডিআর খোলা হয়েছে দুজন শিক্ষকের নামে। এছাড়াও বিভাগে অর্থছাড়ের ক্ষেত্রে সংরক্ষণ করা হয়নি কোনো ভাউচার। যেসব ভাউচার রয়েছে সেগুলোর ৯৫ শতাংশেই কারো সই পাওয়া যায়নি। সবমিলিয়ে গত পাঁচ বছরে বিভাগের বিভিন্ন খাতে প্রায় তিন কোটি ৮০ লক্ষ ১০ হাজার ৯৯৩ টাকার অর্থ লেনদেনে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যানের নির্দেশে করা নিরীক্ষায় এই অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে। ২০১৫ সালের ১ আগস্ট থেকে ২০২০ সালের ১ আগস্ট পর্যন্ত— পাঁচ বছরে বিভাগটির নিজস্ব উৎস থেকে আয়-ব্যয়ের এই নিরীক্ষাটি করা হয়। এ সময়কালের বেশির ভাগ অংশজুড়ে বিভাগটির দায়িত্ব পালন করেন জিয়া রহমান। নিরীক্ষা পরিচালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয় অভ্যন্তরীণ অডিট শাখার উপহিসাব পরিচালক খোরশেদ আলম ও সহকারী হিসাব পরিচালক (অডিট) মো. আহসানুল আলম। নিরীক্ষা শেষে ১ মার্চ প্রতিবেদনটি বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান খন্দকার ফারজানা রহমান কাছে জমা দেয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ড. জিয়া রহমান বিভাগটির চেয়ারম্যান পদে থাকাকালীন নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে লেনদেন করেছেন। শ্রেণীকক্ষ সংস্কারের নামে ৪২ লাখ, ভারত ও মিয়ানমার ভ্রমণ বাবদ ১১ লাখ, ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামের নামে ৮ লাখ, কনফারেন্সের অনুদান বাবদ ৯ লাখ, ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সের আয়োজন বাবদ ১০ লাখ এবং কম্পিউটার ও অন্যান্য মালপত্র ক্রয় বাবদ ১২ লাখ টাকার বেশি অর্থ নিয়মবহির্ভূতভাবে ব্যয় করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, খরচের অনুমোদন ও ভাউচারগুলোতে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর নেই। বড় বড় খরচের ক্ষেত্রে কোনো কমিটির মাধ্যমে অর্থ ব্যয় হয়নি। এমনকি একাডেমিক কমিটির অনুমোদন না নিয়ে চেয়ারম্যান এককভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যা নিয়মবহির্ভূত। এছাড়া ব্যয়ের সপক্ষে অনেক খরচেরই ভাউচার পাওয়া যায়নি এবং অনুমোদন নেই। যেসব ভাউচার পাওয়া গেছে, তার ৯৫ শতাংশেই কারো সই নেই, টাকা গ্রহণের প্রাপ্তি স্বীকারপত্র নেই। এমনকি হিসাবও সংরক্ষণ করা হয়নি। এছাড়া বেশকিছু চেকের মাধ্যমে কয়েক লাখ টাকা ব্যয় করা হলেও কোনো ভাউচার পাওয়া যায়নি এবং কোন খাতে ব্যয় করা হয়েছে নিরীক্ষায় তা দেখাতে পারেনি।
নিরীক্ষার তথ্যমতে, বিভাগটির ইভিনিং বা সন্ধ্যাকালীন কোর্সের আয় থেকে সম্মানী বাবদ ১৭ লাখ টাকা নিয়মবহির্ভূতভাবে গ্রহণ করেন ড. জিয়া রহমান। পারিশ্রমিক গ্রহণের ক্ষেত্রে আয়কর বাবদ ১১ দশমিক ১১ শতাংশ অর্থ যোগ করে সম্মানী গ্রহণ করলেও আয়করের টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া হয়নি। বিভাগটির অন্য শিক্ষকদের ক্ষেত্রে মূল টাকা থেকে ১০ শতাংশ হারে আয়কর কর্তন করেছেন। এছাড়া সাবেক চেয়ারম্যানের মেয়াদকালীন সিঅ্যান্ডডির সুপারিশ নিয়ে অস্থায়ী ভিত্তিতে দুজন কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়, যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অনুমোদন নেয়া হয়নি। অস্থায়ী কর্মচারীদের বেতন প্রদানের সঙ্গে উত্তোলনের হিসাব সঠিক নয়। আবার এক্ষেত্রে ধারাবাহিকতাও রক্ষা করা হয়নি। এছাড়া নিয়মবহির্ভূতভাবে মোট ১ কোটি টাকার এফডিআর খোলা হয়েছে দুজন শিক্ষকের নামে।
গত সোমবাব, ১৫ মার্চ বিভাগের একাডেমিক কমিটির সভায় পূর্বনির্ধারিত এজেন্ডা অনুযায়ী প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। সেখানে ড. জিয়া রহমান ও একজন শিক্ষক একাডেমিক কমিটির অনুমোদন ছাড়া নিরীক্ষা করায় এ প্রতিবেদন অগ্রাহ্য করেছেন মর্মে নোট দেন। অন্য দুজন শিক্ষক প্রতিবেদনটি গ্রহণ করেন। বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান খন্দকার ফারজানা রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, একাডেমিক কমিটির সভায় আমি বলেছি, যেহেতু একাডেমিক কমিটির কার্যপরিধিতে নিরীক্ষার জন্য অনুমতি গ্রহণের কোনো শর্ত নেই, তাই বিভাগীয় প্রধানের রুটিন কাজ হিসেবেই আমার নিরীক্ষা করানোর এখতিয়ার রয়েছে। এছাড়া কোষাধ্যক্ষ মহোদয়ের অনুমতি নিয়ে নিরীক্ষা হয়েছে। তাই সবার মতামতসহ প্রতিবেদনটি কোষাধ্যক্ষ কার্যালয়ে পাঠানো হবে। তিনি বলেন, আগে বিভাগের নিজস্ব উৎসের আয়-ব্যয়ের কোনো নিরীক্ষা হয়নি। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষের অনুমোদনক্রমে নিরীক্ষা গ্রহণের উদ্যোগ নিই।
এ বিষয়ে প্রতিবেদক প্রফেসর ড. জিয়া রহমানকে মঙ্গলবার বিকেলে কল দিলে তিনি সন্ধ্যার পর কথা বলবেন বলে জানান। সন্ধ্যার পর একাধিক বার কল দেয়া হলেও তিনি কল কেটে দেন। সার্বিক বিষয়ে বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘বিভাগের সব ধরনের কাজে একাডেমিক কমিটি ও সিঅ্যান্ডডির অনুমোদন বা মতামত নিতে হবে। কেননা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশেই এ কমিটিগুলোকে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।’
নিরীক্ষায় কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, বিভাগকে ৫ হাজার এক টাকা থেকে পঁচিশ হাজার টাকা পর্যন্ত ক্রয় ক্ষেত্রে তিন সদস্য বিশিষ্ট অভ্যন্তরীণ ক্রয়ের মাধ্যমে কার্যক্রম সম্পন্ন করা এবং বিল ভাউচারের ক্রয় কমিটির স্বাক্ষর নিতে হবে; পঁচিশ হাজার টাকার উপরে বিশ^বিদ্যালয়ের আর্থিক সংবিধি পিপিআর যথাযথভাবে অনুসরণ করার জন্য অনুরোধ করা হলো; সংশ্লিষ্ট বিভাগের হিসাব বিভাগকে ভবিষ্যতে বছরান্তে বা নির্দিষ্ট সময়ন্তে আয় ও ব্যয় বিবরণী তৈরি করে চেয়ারম্যানের অনুমোদন নেওয়ার জন্য পরামর্শ প্রদান করা হলো; সঠিকভাবে হিসাব সংরক্ষণের জন্য ক্যাশবুক স্টক রেজিস্টার চেক রেজিস্টার মেইনটেইন করা সমস্ত ভাউচারে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর গ্রহণ এবং এ বিষয়ে ঢাবির অভ্যন্তরীণ অডিটের সহায়তা দেওয়া হলো।##

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন