শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

সালামের উপকারিতা

উসমান বিন আ.আলিম | প্রকাশের সময় : ১৮ মার্চ, ২০২১, ১২:০২ এএম

“সালাম” মূলত একটি আরবী শব্দ। এর অর্থ শান্তি, প্রশান্তি, কল্যাণ, দোয়া, আরাম, আনন্দ ইত্যাদি। সালাম শান্তির প্রতীক। ও একটি সম্মানজনক অভ্যর্থনামূলক ইসলামী অভিবাদন। মুমিন-মুসলমানের মধ্যকার অভিভাদনের একমাত্র মাধ্যম। সালাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাত সমূহের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। সালামের উপকারিতা, গুরুত্ব, তরিকা ইত্যাদি সমূহ প্রত্যেক নর-নারীর জন্য জেনে রাখা অত্যান্ত জরুরী। সেই নিমিত্তে সালাম সম্পর্কিয় বক্ষমাণ রচনার ক্ষুদ্র প্রয়াস।

সালামের অসংখ্য উপকারিতা রয়েছে। যা বিভিন্ন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। সেগুলো ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

♦সালাম শান্তির বার্তা পৌঁছায়।
আল্লাহ তাআলা বলেন-
অতঃপর যখন তোমরা ঘরে প্রবেশ কর, তখন তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম বলবে। এটা আলল্লাহর কাছ থেকে কল্যাণময় ও পবিত্র দোয়া। এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্যে আয়াতসমূহ বিশদভাবে বর্ননা করেন, যাতে তোমরা বুঝে নাও। [সূরা নূর ২৪:৬১ ]

♦সালামকারীকে আল্লাহ হেফাজত করেন।
আল্লাহ তা’আলা সালামের প্রচলনকারীর জন্য জিম্মাদার হয়ে যান। তাদের হেফাজতে রাখেন। যেমন হাদীসে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

‘আল্লাহ তাআলা তিন শ্রেণী লোকের জিম্মাদার হন। তাদের মধ্যে প্রথম হলো, যে ব্যক্তি সালাম দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে। অর্থাৎ ঘরে বাবা-মা,স্ত্রী, সন্তান, ভাই-বোন, ছোট-বড় যেই থাকুক না কেন; তাদের সালাম দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে। আল্লাহ তা’আলা ওই বাড়িকে এবং ঐ ব্যক্তিকে হেফাজত করেন।’ (আদাবুল মুফরাদ -১০৯৪)

♦সালাম দিলে সাওয়াব হয়।
পরস্পর সাক্ষাতে সালাম বিনিময়ে রয়েছে অনেক সাওয়াব। সালামের সাওয়াব লাভের নমুনা প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ সাসল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসে পাকে উঠে এসেছে,

হজরত ইমরান ইবনু হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, একবার এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বললেন, ‘আসসালামু আলাইকুম’। তখন তিনি বললেন, লোকটির জন্য ১০টি নেকি লেখা হয়েছে। এরপর অন্য এক ব্যক্তি এসে (একটু বাড়িয়ে) বললেন, ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ‘। তখন আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তার সালামের উত্তর দিয়ে বললেন, তার জন্য ২০টি নেকি লেখা হয়েছে। এরপর অন্য এক ব্যক্তি এসে (আরও একটি শব্দ বাড়িয়ে) বললেন- ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহু’। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তার (সালামের) উত্তর দিয়ে বললেন, লোকটির জন্য ৩০টি নেকি লেখা হয়েছে।’

(সুনানে তিরমিজি-২৬৯০) ইমাম তিরমিজি রহ. এই হাদীসের মান ‹হাসান› বলেছেন।

♦সালামের দ্বারা জান্নাত মেলে।
সালামের বহু ফজিলত রয়েছে। সালামের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসের বিভিন্ন কিতাবে অসংখ্য বর্ণনা পাওয়া যায়। এক বর্ণনায় এসেছে,

হযরত আব্দুল্লাহ বিন সালাম বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি, হে লোক সকল! তোমরা সালামের ব্যাপকভাবে প্রচার প্রসার কর। (ক্ষুধার্তদের) আহার করাও। আত্মীয়-স্বজনদের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখ এবং মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন ওঠে নামায পড়। তাহলে তোমরা নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।

(তিরামিযীঃ ২/৭৫ হাঃ ২৪৮৭। মুসনাদে আহমাদ : ৫/৪৫১) ইমাম তিরমিজি (রহ.) এই হাদিসটির মান ‹হাসান› বলেছেন।

♦সালামে মুহাব্বাত বৃদ্ধি পায়।
এক হাদীসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেন, “তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে যেতে পারবেনা যতক্ষণ না তোমরা মুমিন হবে। আর মুমিন ততক্ষণ পর্যন্ত হতে পারবেনা যতক্ষণ না একে অপরকে মুহাব্বাত করবে। আমি কি তোমাদের এমন একটি আমলের কথা বলে দিব না ! যা করলে তোমাদের পরস্পরের মাঝে ভালবাসা সৃষ্টি হবে? (তা হলো) তোমরা তোমাদের পরপস্পরের মাঝে ব্যাপকভাবে সালামের প্রচার প্রসার কর।›
(মুসলিম : ১/৫৪ হাঃ ৫৪।তিরমিযি : ২/৭ হাঃ ২৬৮৯)

এই হাদিস থেকে এই কথা-ই প্রমাণিত হয় যে, সালাম দেওয়ার দ্বারা আমাদের নিজেদের মধ্যকার যেই দূরত্ব তা নিমিষেই শেষ হয়ে যায়। তৈরি হয় একে অপরের প্রতি ভালোবাসা।

♦সালাম দিলে অহংকার দূর হয়।
যে প্রথমে সালাম দিলো সে যেনো অহংকার মুক্ত থাকলো। ইমাম বায়হাকী (রহ.) তার নিজ গ্রন্থ ‘শুআবুল-ঈমানে একটি হাদিস বর্ণনা করেন।

হজরত আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত যে,আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের যে প্রথমে সালাম দিবে, সে যেনো অহংকার থেকে মুক্ত থাকলো›।
(মেশকাত: ৪৬৬৬। শুআবুল ইমান: ৮৭৮৫)

উপরোক্ত হাদিসগুলো দ্বারা সালামের বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা ও গুরুত্ব ওঠে এসেছে। আল্লাহ তায়ালা আমাকে,আপনাকে উপরোল্লিখিত হাদিস সমূহের উপর আমল করে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাত আঁকড়ে ধরে সুন্নাত অনুযায়ী জীবন-যাপন করার তৌফিক দান করুন।আমিন।

লেখক : মোহাদ্দিস, দারুল উলুম মোহাম্মদপুর কওমি মাদ্রাসা, রেলবাজার, চাটমোহর, পাবনা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন