রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

মহান রবের অনন্যসাধারণ দান

মুহাম্মাদ শামীম হুসাইন | প্রকাশের সময় : ১৮ মার্চ, ২০২১, ১২:০০ এএম

মহান আল্লাহ তাআলা প্রদত্ত অগণিত নিয়ামতের মাঝে আমরা প্রতিনিয়ত ডুবে আছি। আমাদের জন্য তাঁর কী ব্যাপক আয়োজন- সুবিশাল নীলাকাশ, সুবিস্তৃত জমিন, চন্দ্র-সূর্য আর তারকাখচিত আসমান, সুউচ্চ পাহাড়-পর্বত, নয়নাভিরাম পুষ্পরাজি, জ্যোৎস্না প্লাবিত রজনী, উপাদেয় খাদ্যসামগ্রী, দৃষ্টিনন্দন সমুদ্র- সৈকত, সবুজ বৃক্ষরাজি, সুদৃশ্য ঝর্ণাধারা, নির্মল সমীরণ, সুশীতল পানি এবং আমাদের নাজানা এরকম আরো হাজারো লাখ নিয়ামত। পবিত্র কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে : আর যদি তোমরা আল্লাহর নিয়ামতসমূহ গণনা করতে থাক, তবে তা গুনে শেষ করতে পারবে না। (সূরা নাহল : ১৮)।

কিন্তু কেন এত কিছুর আয়োজন তা কি ক্ষণিকের তরেও আমরা একটু ভেবে দেখেছি? মানবদেহ মহান সৃষ্টিকর্তার এক অতি বিস্ময়কর ও আশ্চর্যজনক নিয়ামত। অসাধারণ ও অনিন্দ্যসুন্দর আকৃতিতে মানুষের সৃজন। আল্লাহ তাআলা আমাদের দিয়েছেন- দেখার জন্য চোখ, বলার জন্য মুখ, ধরার জন্য হাত, স্বাদ গ্রহণের জন্য জিহ্বা, শোনার জন্য কান, অনুভূতির জন্য ত্বক, ঘ্রাণের জন্য নাক, চলার জন্য পা এবং আরো কত কী! এসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রত্যেকটি এক একটি অমূল্য সম্পদ।

এসব ছাড়াও দেহাভ্যন্তরে রয়েছে- হার্ট, লিভার, ভাল্ব, ফুসফুস, পাকস্থলী, কিডনিসহ অসংখ্য মূল্যবান নিয়ামত, যার কোনো কোনোটি বিকল হলে সমগ্র বিশ্বের সবকিছুর বিনিময়েও সচল করা অসম্ভব। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন : যারা নিশ্চিত বিশ্বাসী তাদের জন্য পৃথিবীতে রয়েছে বহু নিদর্শন। এবং স্বয়ং তোমাদের (নিজ সত্তার) মাঝেও; তবুও কি তোমরা অনুধাবন করতে পার না? (সূরা যারিয়াত : ২০-২১)।

আল্লাহ তাআলার এসব নিয়ামত নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করলে অনেক হতাশা, ক্ষোভ ও না-প্রাপ্তির বেদনা প্রশমিত হয়ে মনের গভীরে এক অনাবিল প্রশান্তির অনুভূতি জাগ্রত হয়। যেমন কি না দামি জুতা না-প্রাপ্তির বেদনায় ব্যথিত যুবক দুই পা-বিহীন কাউকে পর্যবেক্ষণ করে নিমিষে মনের মধ্যে এক স্বস্তি ও সান্ত্বনা অনুভব করতে পারে- একথা ভেবে যে, জুতা না থাকলেও নিজের অন্তত দুটো পা তো আছে, আর তার যে পা-ই নেই।

সামান্য এক গ্লাস ঠান্ডা পানির কথা ভাবলেই অনুভব করা যায়- এটা কত বড় নিয়ামত। বাদশাহ হারুনুর রশীদ একবার ভীষণ পিপাসার্ত অবস্থায় পানি পান করতে চাইলেন। তখন তার সামনে ইবনুস সাম্মাক (প্রসিদ্ধ বুযুর্গ) উপস্থিত ছিলেন। তিতি অত্যন্ত বিচক্ষণ, জ্ঞানী ও আল্লাহওয়ালা ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর সাথে বাদশাহর ভালো সম্পর্ক ছিল। বাদশাহ পানি পান করতে চাইলে সে বলে উঠল- হে আমীরুল মুমিনীন! আপনাকে যদি এই পানি না দেয়া হয় এবং আপনাকে তা কিনতে হয় তাহলে আপনি কত দিয়ে এই (এক গ্লাস) পানি ক্রয় করবেন? বাদশা উত্তরে বললেন- আমার রাজত্বের বিনিময়ে।

ইবনুস সাম্মাক আবার প্রশ্ন করলেন- যদি এ পানি বের হওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি হয় (আর্থাৎ প্রস্রাব না হয়) তাহলে এর জন্য আপনি কত ব্যয় করবেন। এর উত্তরেও হারুনুর রশীদ বললেন, আমার রাজত্বের বিনিময়ে হলেও আমি তা বের করার ব্যবস্থা করব। তখন ইবনুস সাম্মাক বললেন, যে রাজত্বের মূল্য সামান্য এক গ্লাস পানি তা নিয়ে দ্ব›দ্ব-প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়া কি সাজে? অর্থাৎ আপনার রাজত্বের মূল্য আল্লাহর অগণিত নিয়ামতসমূহের মধ্য হতে সামান্য এক গ্লাস পানির কাছে কিছুই না। (দ্র. শাজারাতুয যাহাব ২/৪৩৪, হারুনুর রশীদ রাহ.-এর জীবনী দ্রষ্টব্য)।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন : তোমরা যে পানি পান করো তা সম্পর্কে কি চিন্তা করেছ? তা কি মেঘ হতে তোমরা নামিয়ে আন, না আমি তা বর্ষণ করি। আমি চাইলে তা লবণাক্ত করে দিতে পারি। তবুও কেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো না। (সূরা ওয়াকিয়া : ৬৮-৭০)।

এ নিয়ামত যদি আল্লাহ আমাদের থেকে ছিনিয়ে নেন তাহলে আমাদের কিছুই করার নেই। আল্লাহ পানির লেয়ার আমাদের নাগালের বাইরে নামিয়ে দিলে কারো সাধ্য নেই তার নাগাল পাওয়ার। কিন্তু আল্লাহ নেন না; আমাদের নাফরমানি সত্তে¡ও তিনি আমাদের জন্য তা অবারিত রেখেছেন। তারপরও কি আমরা তাঁর কৃতজ্ঞ হব না?

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন : বল, তোমরা ভেবে দেখেছ কি- যদি পানি ভূগর্ভে তোমাদের নাগালের বাইরে চলে যায়, তখন কে তোমাদের এনে দেবে প্রবহমান পানি? (সূরা মুলক : ৩০)।

এভাবে আল্লাহ তাআালার নিয়ামত নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করলে এসব নিয়ামতের অপরিসীম গুরুত্ব ও তাৎপর্য কিছুটা হলেও আমাদের উপলব্ধিতে আসবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (10)
মরিয়ম বিবি ১৮ মার্চ, ২০২১, ১:২৬ এএম says : 0
কোরআন মাজীদের উল্লেখযোগ্য অংশজুড়ে আছে আল্লাহর নিয়ামতের বর্ণনা। এই নিয়ামত তাঁর পরিচয় প্রকাশ করে
Total Reply(0)
গাজ ওয়া তুল হিন্দ ১৮ মার্চ, ২০২১, ১:২৬ এএম says : 0
মানুষের জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণাদি একমাত্র মহান আল্লাহর প্রদত্ত নিয়ামত। আল্লাহর নিয়ামত ও অনুগ্রহ ছাড়া মানুষের বা কোনো প্রাণীর এক মুহূর্তও বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
Total Reply(0)
কায়সার মুহম্মদ ফাহাদ ১৮ মার্চ, ২০২১, ১:২৬ এএম says : 0
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, মানুষ আল্লাহর অগণিত নিয়ামত ভোগ করা সত্ত্বে¡ও এ নিয়ামতের উপযুক্ত শুকর আদায় করে না
Total Reply(0)
হোসাইন এনায়েত ১৮ মার্চ, ২০২১, ১:২৭ এএম says : 0
আর আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায়ের অর্থ হচ্ছে তাঁর আদেশাবলি যথাযথভাবে মেনে চলা। অথচ বেশির ভাগ মানুষই আল্লাহর শুকরগুজার না করে প্রতিনিয়ত আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত
Total Reply(0)
নাসিম ১৮ মার্চ, ২০২১, ১:২৭ এএম says : 0
আল্লাহ মানুষকে যে নিয়ামত দান করেছেন তা সীমাহীন। এমন অনেক নিয়ামতও আছে যেগুলোর খবর মানুষ জানেই না।
Total Reply(0)
জাহিদ খান ১৮ মার্চ, ২০২১, ১:২৭ এএম says : 0
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেনÑ ‘যদি তোমরা আল্লাহর নিয়ামতগুলো গণনা করতে থাকো তাহলে সেগুলো পুরোপুরি গণনা করতেও পারবে না।’ (সূরা ইবরাহিম-৩৪)
Total Reply(0)
রাজিব ১৮ মার্চ, ২০২১, ১:২৮ এএম says : 0
সর্বাবস্থায় আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমে তাঁর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা উচিত। যাতে করে আল্লাহর নিকট হিসাব দেয়া সহজ হয়।
Total Reply(0)
salman ১৮ মার্চ, ২০২১, ৫:২৪ এএম says : 0
Allah'r Kotto kotto Neyamot, kon ta rekhe kontar SUKOR korbo. Alhamdulillah Allah, tomar Lak o Kuti sokor....Alhamdulillah
Total Reply(0)
Sayed,+Freedom+Fighter ১৮ মার্চ, ২০২১, ৬:৪১ এএম says : 0
A simple thing that we can't see but exists everywhere that is AIR that keeps the whole world alive. Do we know that and do we know who is controlling it? Allah, the creator of this earth is controlling it, whenever any living creature needs it, they get it.
Total Reply(0)
Ibrahim ১৮ মার্চ, ২০২১, ৭:০০ এএম says : 0
আল্লাহ মহান।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন