বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

শাবান হচ্ছে রমজানের প্রস্তুতির মাস

জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ান

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ মার্চ, ২০২১, ১২:১৪ এএম

শাবান মাসের অনেক ফজিলত। শাবান মাস হচ্ছে রমজান মাসের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের মাস। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ মাসে অধিক হারে রোজা রাখতেন। গতকাল বিভিন্ন জামে মসজিদের খুৎবাপূর্ব বয়ানে পেশ ইমামরা এসব কথা বলেন। যথযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে নগরীর মসজিদগুলোতে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে। মসজিদে স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় আগত মুসল্লিদের রাস্তার ওপর জুমার নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে।

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি এহসানুল হক জিলানী গতকাল জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানুল মোবারকের জন্য মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন রজব মাস থেকেই। যখন রজব মাসের চাঁদ উদয় হতো তখন তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন ‘হে আল্লাহ আমাদের রজব মাসে বরকত দিও শাবান মাসেও বরকত দিও আর রমজান পর্যন্ত আমাদের পৌঁছে দিও।’ আর যখন শাবান মাস আসতো সাহাবায়ে কেরামকে বলতেন, ‘রমজানের স্বার্থে তোমরা শাবান মাসের দিনগুলো ভালোভাবে গণনা করো কয় দিন গেল আর রমজান আসতে কয়দিন বাকি থাকল।’ তিনি এসব কথা কিসের জন্য বলতেন যাতে করে মানুষ রমজানের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে। রমজান আসার পূর্বে এমনভাবে কাজকর্ম গুঁটিয়ে নিতে পারে যেন রমজানের ইবাদতগুলো আদায় করতে কোনো ঝামেলা না হয়। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনুল কারিমের মাঝে এরশাদ করেন, ‘যারা আমার পথে মেহনত মোজাহাদা শুরু করে দেয় অবশ্যই আমি তাদের জন্য আমার পথ পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেই।’ আল­াহ তায়ালা আমাদের রমজানুল মোবারকের পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নেয়ার এবং হক আদায় করার তৌফিক দান করুন- আমীন!

দিনাজপুর গোর-এ-শহীদ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মাওলানা রেজাউল করিম গতকাল জুমার বয়ানে বলেন, সূরা মুমিনুন এর ১১৫ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আমি মানুষকে অনর্থক সৃষ্টি করিনি। মানুষকে এক বিশাল সুমহান দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়েছে। কোরআনে কারিমের সূরা আয যারিয়াত এর ৫৬ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আমি মানুষকে আমার একমাত্র ইবাদত এর জন্য সৃষ্টি করেছি এবং সূরা বাকারার ৩০ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি খেলাফত তথা শাসন কতৃত্ব করার জন্য। সূরা নূরে আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে আল্লাহ তায়ালা ওয়াদা করেছেন যে তাদের অবশ্যই পৃথিবীতে শাসন কতৃত্ব দান করবেন। যেমন তিনি শাসন কতৃত্ব দান করেছেন তাদের পূর্ববর্তীদের এবং তিনি অবশ্যই সুদৃঢ় করবেন তাদের ধর্মকে যা তিনি তাদের জন্য পছন্দ করেছেন। তিনি আরো বলেছেন, তোমরা একমাত্র আমারই ইবাদত করো এবং আমার সাথে কাউকে শরিক করিও না। পরের আয়াতে আল্লাহ তায়ালা কিছু মৌলিক ইবাদতের কথা বলেছেন, নামাজ কায়েম করো জাকাত প্রদান করো রাসুলের আনুগত্য করো। আমাদের সকলকে এ কথাগুলো মেনে চলার তৌফিক দান করুন- আমীন!

ঢাকা ডেমরা দারুননাজাত সিদ্দীকিয়া কামিল মাদরাসা জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা মো. মনিরুল ইসলাম জুমার বয়ানে বলেন, শাবান মাসের অনেক ফজিলত। শাবান মাস হচ্ছে রমজান মাসের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের মাস। সাহাবায়ে কেরামরা এ মাসে বেশি বেশি ইবাদত বন্দেগী শুরু করে দিতেন। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ মাসে অধিক হারে রোজা রাখতেন। হযরত উসামা (রাদি.) রাসুলুল্লাহ সাল্লালামকে জিজ্ঞেস করলেন : ইয়া রাসুলুল্লাহ শাবান মাসে আপনি যত রোজা রাখেন অন্য মাসে আপনি এতো রোজা রাখেন না? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ ইরশাদ করলেন : রজব ও রমজান মাসের এই শাবান মাস; যে মাসের ব্যাপারে মানুষ গাফেল থাকে। এই মাসে মানুষের (বাৎসরিক আমল) আল্লাহর দরবার উঠানো হয়। আমি চাই যে, আমার আমলনামা আল্লাহর দরবারে এমন অবস্থায় পৌঁছাক যে আমি রোজাদার। তাই আমাদেরও উচিৎ এ মাসে বেশি বেশি রোজা রাখা ও রমজান মাসের প্রস্তুতি গ্রহণ করা। আল্লাহ সবাইকে তৌফিক দান করুন। আমীন! ঢাকার উত্তরা সেক্টর-৩ মসজিদ আল মাগফিরাহ এর খতিব মুফতি ওয়াহিদুল আলম জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে বলেন, শাবান মাস একটি মোবারক মাস। বিভিন্ন হাদীস থেকে জানা যায় যে, নবী (সা.) রমজান মাস ব্যতীত অন্য সকল মাসের তুলনায় শাবান মাসে বেশি রোজা রাখতেন। এ মাসের প্রথম থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত এবং কখনো কখনো প্রায় পুরো মাসই নবী (সা.) রোজা রাখতেন। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) নবী (সা.) কে এ মাসে রোজা রাখার প্রতি এতো গুরুত্ব প্রদানের কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে, তিনি বলেন, এ মাসে আল্লাহ তায়ালার কাছে মানুষের আমল উঠানো হয়। আর আমি ভালবাসি যে, আমি রোজাদার অবস্থায় আমার আমল উঠানো হোক। (নাসায়ী) খতিব বলেন, এমাসের মধ্যে অতিব গুরুত্বপূর্ণ রাত হলো শবে-বরাত, যে রাতে আল্লাহ তায়ালা গুনাহগার মুসলমানদের নিজ দয়ায় ক্ষমা করেন। শবে-বরাতের মূল শিক্ষা হলো র্শিক, বিদ’আত ও হিংসা-বিদ্বেষ হতে আত্মাকে পবিত্র রাখা, কবর যিয়ারত করা, দোয়া করা, নফল নামাজ আদায় করা ও রোজা রাখা। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে নবী (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম (রা.) এর মতো নেক আমল করার তৌফিক দান করুন- আমীন!

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন