বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ভয়াবহ রাজধানীর বাতাস

বায়ুদূষণ ৬৬১ পিএম স্পর্শ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ঢাকা আবার সর্বোচ্চ বায়ুদূষণের শহর বিষয়টি আদালতের নজরে আনব : মনজিল মোরসেদ বায়ুদূষণ রোধে সরকার নির্বিকার : বাপা

রফিক মুহাম্মদ | প্রকাশের সময় : ২৩ মার্চ, ২০২১, ১২:০১ এএম

ঢাকার বাতাস এখন জনস্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ। বায়ুদূষণের মাত্রা যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তাতে নগরবাসীর ঘর থেকে বের হওয়া নিষেধ। এ অবস্থায় স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করা প্রয়োজন। দূষিত বাতাসের কারণে শিশু ও বৃদ্ধরা সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ ছাড়া শ্বাসকষ্ট করোনাভাইসারের একটি উপসর্গ। তাই এতে করোনার সংক্রমণের ঝুঁকিও রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী, বায়ুদূষণের মাত্রা ৩০০ পিএম পেরোলেই জনস্বাস্থ্যের জন্য তা ঝুঁকিপূর্ণ। সেক্ষেত্রে দ্য ওয়ার্ল্ড এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স প্রজেক্ট (একিউআইসিএন) এর তথ্য অনুযায়ী গতকাল ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রা ৬৬১ পিএম ছুঁয়েছে। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এ অবস্থায় অবশ্যই সবার বাইরে বের হওয়ার নিষেধাজ্ঞা এবং স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করা জরুরি বলে বিশেজ্ঞরা মনে করেন। গত এক সপ্তাহ যাবৎ ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রা ৫০০ পিএম এর ওপরে রয়েছে। সেই সাথে বিশ্বের দূষিত শহরের শীর্ষ স্থানটিও দখল করে রেখেছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরিফ জামিল গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকা নগরী এতটাই দূষিত যে, এরই মধ্যে বসবাসের অযোগ্য নগরী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। পরিবেশবিষয়ক আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সমীক্ষায় এটি এরই মধ্যে বলা হয়েছে। তাতেও আমাদের সরকারের কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ দেখতে পাই না। হাইকোর্টের নির্দেশনা থাকার পরও নদী দূষণ চলছে। নিষিদ্ধ পলিথিনে বাজার সয়লাব হয়ে আছে। এসব ব্যাপারে সরকার তথা পরিবেশ অধিদফতর নির্বিকার। বায়ুদূষণের মাত্রা এতটাই বেড়েছে যে- এটা এখন স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। এই দূষিত বাতাসে মানুষের স্বাস্থ্যহানি ও অকাল মৃত্যু হচ্ছে। সরকার এ বিষয়টিকে কোনো গুরুত্বই দিচ্ছে না। বায়ুদূষণ রোধে ‘নির্মূল বায়ু আইন’ এর ড্রাফট করার পরও তা বন্ধ হয়ে যায়। আসলে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা এখন দেশের হর্তাকর্তা হয়ে গেছে। তারাই দেশ চালাচ্ছে। তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই। তিনি বলেন, বায়ুদূষণ রোধ করতে হলে সরকারকে প্রথমে এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। তার পর স্বল্পমেয়াদি, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে এর যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে দূষণমুক্ত নির্মূল বায়ু নগরবাসীকে উপহার দেয়া সম্ভব হবে।

ঢাকার বায়ুদূষণের এর চারপাশের ইটভাটার কালো ধোঁয়ার বড় ভ‚মিকা রয়েছে। এ ছাড়া গাড়ির কালো ধোঁয়াও ঢাকার বাতাস দূষিত করছে। তবে বর্তমানে ঢাকার বায়ুদূষণের অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে উন্নয়ন খোঁড়াখুঁড়ি। রাজধানীতে মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, র‌্যাপিট বাস ট্রানজিট এসব মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। এসব প্রকল্পের কাজের জন্য রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাতাসে ব্যাপকভাবে ধুলাবালি উড়ছে। র‌্যাপিড বাস ট্রানজিট প্রকল্পের কাজ দীর্ঘদিন যাবৎ হচ্ছে। এর জন্য টুঙ্গি থেকে গাজীপুর পর্যন্ত রাস্তার আশপাশের এলাকা ধুলিধূসর হয়ে পড়েছে। জনগণের দুর্ভোগ চরম পর্যায়ে পৌঁছালেও দেখার কেউ নেই। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও মেট্রোরেলের কাজের জন্য উত্তরা, মিরপুর, আগারগাঁও, ফার্মগেট, বাংলামটর, শাহবাগ, পল্টন, মতিঝিল এসব এলাকার বাতাস ধুলায় ধূসর থাকে। রাস্তার আশপাশের দোকানপাট ধুলায় একাকার হয়ে যায়। জনগণ মাস্ক পরে, নাকে রোমাল দিয়েও ধুলা থেকে রেহাই পায় না। রাজধানীর ধুলাদূষণ রোধে এসব উন্নয়ন কাজ যারা করছেন তাদের সকাল বিকাল পানি ছিটানোর জন্য গতবছর হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু হাইকোর্টের সে নির্দেশনাও মানা হচ্ছে না।
ঢাকার আশপাশের পাঁচ জেলার অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করা, মাত্রার চেয়ে বেশি কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে চলা যান জব্দ ও ধুলাপ্রবণ এলাকায় দুই সিটি করপোরেশনের নিয়মিত পানি ছিটানোসহ বায়ুদূষণ রোধে এর আগে দেওয়া ৯ নির্দেশনা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে গত জানুয়ারিতে পুনরায় নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত। একই সঙ্গে নির্দেশনা বাস্তবায়নের বিষয়ে ৩০ দিনের মধ্যে বিবাদীদের আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। ৯ দফার মধ্যে ঢাকা শহরে- মাটি, বালু, বর্জ্য পরিবহন করা ট্রাক ও অন্যান্য গাড়িতে মালামাল ঢেকে রাখা। নির্মাণাধীন এলাকায় মাটি-বালু-সিমেন্ট-পাথর-নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা। সিটি করপোরেশন প্রতিদিন সকাল বিকাল রাস্তায় পানি ছিটাবে। রাস্তা, কালভার্ট, কার্পেটিং, খোঁড়াখুঁড়ির কাজে দরপত্রের শর্ত পালন নিশ্চিত করা। সড়ক পরিবহন আইন অনুসারে গাড়ির চলাচল সময়সীমা নির্ধারণ ও উত্তীর্ণ হওয়া সময়সীমার পরে গাড়ি চলাচল বন্ধ করা। পরিবেশগত সনদ ছাড়া চলমান টায়ার ফ্যাক্টরি বন্ধ করা। মার্কেট, দোকানের প্রতিদিনের বর্জ্য ব্যাগে ভরে রাখা এবং বর্জ্য অপসারণ নিশ্চিত করতে সিটি করপোরেশনের পদক্ষেপ নেওয়ার কথা রয়েছে। ঢাকায় বায়ুদূষণ রোধে আদালতের এর আগের নির্দেশনা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা চেয়ে পরিবেশবাদী ও মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) গত বছর ১৫ নভেম্বর আবেদনটি করে। এইচআরপিবির করা এক রিটের ধারাবাহিকতায় গত ১৩ জানুয়ারি হাইকোর্ট বায়ুদূষণ রোধে ৯ দফা নির্দেশনাসহ আদেশ দিয়েছিলেন।

এইচআরপিবির আইনজীবী মনজিল মোরসেদ এ বিষয়ে গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, বর্তমানে ঢাকা শহর আবার সর্বোচ্চ বায়ুদূষণের শহর বলে গণমাধ্যমে এসেছে। আদালতের নির্দেশনা গুরুত্বের সাথে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তাই গণমাধ্যমের খবর যুক্ত করে বিষয়টি আবারও আদালতের নজরে আনব।

শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. নাজমা ইয়াসমীন ইনকিলাবকে বলেন, বায়ুদূষণের ফলে শিশু ও বৃদ্ধরা সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। এটা দীর্ঘদিন অব্যাহত থাকলে ফুসফুসে ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। এ জন্য করোনা সংক্রমণ বাড়তে পারে কি না, সে রকম কোনো গবেষণা এখনো প্রকাশিত হয়নি। তবে শ্বাসকষ্ট করোনার একটি লক্ষণ। এক্ষেত্রে শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হলে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি তো অবশ্যই বেড়ে যায়।

পরিবেশ অধিদফতরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকার বায়ুদূষণ এক কথায় ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছে। এই দূষণ মানুষকে তাৎক্ষণিক মেরে ফেলে না, ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। অথচ সরকার এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। প্রায় পুরো ঢাকা শহর নিয়ে মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ চলছে। ইইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী তাদের কাজ হচ্ছে প্রতিদিন সেখানে পানি দেয়া। কিন্তু কিছুই দিচ্ছে না। যারা দেখভাল করার দায়িত্বে তারা নিষ্ক্রিয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (10)
কায়সার মুহম্মদ ফাহাদ ২২ মার্চ, ২০২১, ১২:৩৪ এএম says : 0
আমাদের মন্ত্রীরা এসি গাড়িতে চড়েন, আর এসি রোমে থাকেন, তারা বায়ু দূষন দেখেননা। তাদের কোন সমস্যা হয়না বলেই তাদের এইবেপারে মাথাব্যাথাও নাই।
Total Reply(0)
মোহাম্মদ কাজী নুর আলম ২২ মার্চ, ২০২১, ১২:৩৫ এএম says : 0
মন্ত্রীএমপি আর বিত্তবানরা বাড়ি গাড়ি অফিস সব জায়গায় কন্ডিশনড বায়ুমণ্ডল বানিয়ে নিয়েছে । আমাদের মত দুঃখীদের নিয়ে ভাবার সময় কোথায়। আমরা শহরের মানুষেরা বরঞ্চ তাদের এসির কাম-ঘাম মেশানো গরম বাতাস খেয়ে যাই ...
Total Reply(0)
জাহিদ খান ২২ মার্চ, ২০২১, ১২:৩৫ এএম says : 0
ঢাকা শহরে চলাচলকারী কয়টা লেগুনার ফিটনেস আছে বা তাদের চালকদের লাইসেন্স আছে?বাস বা ট্রাক?পুলিশ,প্রশাসন এবং রাজনৈতিক নেতাদের ম্যানেজ করেই ফিটনেসবিহীন গাড়ী নির্ভয়ে চলছে রাজপথে।
Total Reply(0)
কে এম শাকীর ২২ মার্চ, ২০২১, ১২:৩৬ এএম says : 0
but why can't our government take step to stop air pollution.
Total Reply(0)
রাজিব ২২ মার্চ, ২০২১, ১২:৩৬ এএম says : 0
বায়ুদুষনের পাশাপাশি আছে আওয়াজ-দূষন। দূষন নিয়ে কারও মাথাব্যাথা আছে, তেমন মনে হয় না।
Total Reply(0)
হোসাইন এনায়েত ২২ মার্চ, ২০২১, ১২:৩৬ এএম says : 0
আমার ফুসফুস দূষিত বাতাসে ভরে যাচ্ছে।
Total Reply(0)
বারেক হোসাইন আপন ২২ মার্চ, ২০২১, ১২:৩৭ এএম says : 0
যেখানে মেট্র রেলের পিলার বসানো হয়ে গিয়েছে সেখানে পরিষ্কার না করার জন্য বায়ু দুষন একটি স্থায়ী রূপ নিয়েছে।
Total Reply(0)
গাজী মোহাম্মদ শাহপরান ২২ মার্চ, ২০২১, ১২:৩৭ এএম says : 0
ঢাকার বায়ু দুষন বন্ধ করতে হলে আগে প্রয়োজন সড়ক বিভাগের শয়তানি বন্ধ করা জরুরী। প্রতি বছর সুয়েরেজের পাইপ সামান্য হেরফের করে পরিবর্তন করা বন্ধ করতে হবে। কতিপয়ের লুটপাটের জন্য পুরো নগর সভ্যতাকে এরা বিপদে ফেলছে। অথচ এই পাইপের মধ্যে জমে থাকা ময়লা পরিষ্কারে এরা কেউই আগ্রহী নয়।
Total Reply(0)
তোফাজ্জল হোসেন ২২ মার্চ, ২০২১, ১২:৩৭ এএম says : 0
ভালো কোন কিছুতে কি এ দেশ কখনোই শীর্ষে থাকতে পারবে না?
Total Reply(0)
মেহেদী ২২ মার্চ, ২০২১, ১২:৩৭ এএম says : 0
ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান উৎস হচ্ছে ধুলা তার পরে অন্য কিছু । পরিবেশ অধিদপ্তর কি আসলে কোন কাজ করে নাকি জনগণের টাকা উপভোগ করে?
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন