শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকান্ডের প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৪ মার্চ, ২০২১, ১২:০১ এএম

কক্সবাজার উখিয়া থানাধীন বালুখালি রোহিঙ্গা শিবিরে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে আশ্রয় কেন্দ্রের কয়েক হাজার ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ছয়-সাত ঘন্টার চেষ্টায় দমকল বাহিনী আগুণ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলেও শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আগুনে পুড়ে মারা গেছে অন্তত ৭ জন। আহত হয়েছেন কয়েকশ’ শিশু ও নারী-পুরুষ। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, সোমবার বিকাল চারটার দিকে ঘনবসতিপূর্ণ শিবিরে আগুন লাগার একঘন্টা পর দমকল বাহিনী সেখানে পৌঁছালেও কয়েক ঘন্টা চেষ্টা করেও আগুন নেভাতে পারেনি। গত চারদিনে বালুখালি রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে তৃতীয়বারের মত অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যায়। মাত্র চার দিনের মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় দফা আগুন লাগার পর তৃতীয়বারের আগুন নেভাতে দমকল বাহিনীকে এত বেগ পেতে হল কেন, আগুন লাগার পর দমকল বাহিনীর পৌঁছতে কেন সময় লাগল, আগুন কিভাবে লাগল ইত্যাদি প্রশ্ন উঠেছে। ছয়-সাত ঘন্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন শেড থেকে ধোঁয়া উঠছিল বলে জানা যায়। যেকোনো সময় আবারো আগুন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

রোহিঙ্গা ক্যাম্প দুর্গম পাহাড় বা ঘন বনজঙ্গলে আকীর্ণ নয়। বহুতল ভবনও নয় যে, আগুন নিয়ন্ত্রণে দমকল বাহিনীকে এমন সমস্যায় পড়তে হবে। আগুন নেভাতে নেভাতে ৯ হাজারের বেশি ঘর পুড়ে গেল কিভাবে? অগ্নিকান্ড প্রায় ৩২ হাজার রোহিঙ্গা ঘরহারা হয়েছেন বলে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়। ক্ষয়ক্ষতির সঠিক হিসাব এখনো অজানা। তবে আগুন লাগার পর প্রাণভয়ে ছুটাছুটির সময় বেশ কিছু শিশু নিখোঁজ হয়েছে বলে জানা যায়। সন্দেহজনকভাবে অন্তত ১০ রোহিঙ্গা যুবককে আটক করার কথাও জানা গেছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বার বার আগুন লাগার কারণ এবং আগুন নিয়ন্ত্রণে এত সময় লাগার পেছনের কারণগুলো চিহ্নিত করা জরুরী। সেখানে প্রাকৃতিক জলাশয় এবং সুপেয় পানির ব্যবস্থা অপ্রতুল হলে সে অনুসারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে শান্তি-শৃঙ্খলা, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এখনো যথেষ্ট ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। ৮ নং ক্যাম্প থেকে আগুনের সূত্রপাত হলেও তা দ্রæত ৯, ১০, ১১ নম্বর ক্যাম্পে ছড়িয়ে পড়ে। ঘিঞ্জি এলাকা হওয়ায় এক ক্যাম্প থেকে আরেক ক্যাম্পে আগুণ দ্রæত ছড়িয়ে পড়ে। ফলে ক্যাম্পের নিরাপত্তা বেষ্টনি সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে হবে। ক্যাম্প তৈরি করে কেবল আশ্রয় দিলেই হয় না। সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নিশ্চিত করা উচিৎ। এই মুহুর্তে আগুনের উৎস এবং নিখোঁজ শিশুদের খুঁজে বের করতে জরুরী পদক্ষেপ নিতে হবে। আগুন লাগার উৎস কি, তা ফায়ার সার্ভিস বা এ সংক্রান্ত অভিজ্ঞদের দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে উদ্ঘাটন করতে হবে।

মিয়ানমারের জান্তা সরকারের জাতিগত নির্মূল অভিযানের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত ও অস্তিত্ব সংকটের সম্মুখীন জাতিগোষ্ঠী হিসিবে গণ্য। এদেরকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মহলের প্রশংসা পেলেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন এবং রোহিঙ্গাদের ভরনপোষন ও নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে মাদক ব্যবসা ও চোরাচালানের সংঘবদ্ধ চক্রের অপতৎপরতা নতুন বিষয় নয়। রোহিঙ্গা ক্যাম্প স্থাপনের পর থেকেই দেশি-বিদেশি অপরাধিচক্র নানা ধরনের অপকর্মে এই ক্যাম্প এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিকে ব্যবহার করছে। ইয়াবা ব্যবসার বিরোধকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের গোলাগুলির ঘটনাও ঘটেছে বিভিন্ন সময়। বালুখালি আশ্রয় শিবিরে বার বার আগুন লাগার নেপথ্যে নাশকতার কোনো যোগসূত্র আছে কিনা তা খুঁজে বের করতে হবে। রোহিঙ্গা শিবিয়ে বার বার আগুণ লাগা, নিরাপত্তাহীনতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা দেশের ভাবমর্যাদার জন্য ক্ষতিকর। তাছাড়া সেখানকার অপরাধমূলক তৎপরতার প্রভাব কক্সবাজারসহ আসপাশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা অমূলক নয়। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শৃঙ্খলা, উন্নত নজরদারি ব্যবস্থা ও নিরাপত্তার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। নিরাপত্তা টহল বাড়ানোর পাশাপাশি রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরের পুরো এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন