শাবান মাস হিজরী সনের অষ্টম মাস। এটি বিশেষ মর্যাদা ও ফযিলতপূর্ণ মাস। হিজরতের পর এই মাসেই কিবলা পরিবর্তন হয়। প্রিয় নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর দরূদ শরীফ পাঠ করার নির্দেশনা সহকারে সূরা আহযাবের-৫৬ নং আয়াতটি এই মাসেই অবতীর্ণ হয়। এমাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতকে বলা হয় “লায়লাতুন নিসফি মিন শাবান” বা শাবানের মধ্য রজনী। সারা বৎসরে যে পাঁচটি বৈশিষ্ট্য মন্ডিত রাতে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত ও মাগফেরাতের ফল্গুধারা প্রবাহিত হয় তম্মধ্যে এই রাতটি অন্যতম। আমাদের দেশে এই রাতকে ‘শবে বরাত’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ফার্সি ভাষায় ‘শব’ অর্থ রাত এবং ‘বরাত’ অর্থ মুক্তি। সুতরাং ‘লাইলাতুল বরাত’ হলো মুক্তির রাত। এ রাতে ইবাদতের মাধ্যমে বান্দাহ তার পুঞ্জিভূত পাপরাশি ইবাদতের মাধ্যমে ধুয়ে মুছে পরকালীন মুক্তির পথ নিশ্চিত করতে পারে। এরাতে কোনো বান্দাহ তার কৃত গুনাহ থেকে মুক্তির জন্য অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ তায়ালা তা কবুল করেন, রিজিক বৃদ্ধি করেন, বিপদাপদ ও রোগ বালাই থেকে রক্ষা করেন।
পবিত্র কুরআনের আলোকে শবেবরাত ঃ আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন মাজীদে বলেন, হা-মীম। সুস্পষ্ট কিতাবের শপথ, নিশ্চয় আমি উহা বরকতময় রাতে অবতীর্ণ করেছি। নিশ্চয় আমি সতর্ককারী। এই রাতে বন্টন করে দেওয়া হয় প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়। (সূরা দুখান: ১-৪)। হযরত ইকরামা (রাঃ) ও একদল মুফাসফিরের মতে, লাইলাতুল মুবারাক অর্থ হলো শাবান মাসের মধ্য রাত। (ইমাম আলুসী, রুহুল মাআনী : খ-১৩, পৃ- ১১০)। তাফসিরে জালালাইন শরীফে রয়েছে আল্লাহর বাণী “নিশ্চয় আমি উহা বরকতময় রাতে অবতীর্ণ করেছি”- এখানে বরকতময় রাত বলে লাইলাতুল কদর বা লাইলাতুন নিসফি মিন শাবানের রাত বুঝানো হয়েছে। কেননা এই রাতে উম্মুল কিতাব বা কুরআন মাজিদ সপ্তম আসমান থেকে প্রথম আসমানে নাজিল হয়েছে। (তাফসিরে জালালাইন, পৃ: ৪১০)। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, হা-মীম। আল্লাহ তায়ালা কিয়ামত পর্যন্ত যা ঘটবে তা নির্ধারণ করেছেন। সুস্পষ্ট কিতাবের শপথ! বলতে আল কুরআনকে বুঝানো হয়েছে। আর “লায়লাতুম মুবারাকা” হলো শাবান মাসের মধ্য রাত, আর তা হলো লাইলাতুল বারাত। (তাফসিরে দুররে মনসুর খ-৭, পৃ-৪০১)
হাদীসের আলোকে ঃ লাইলাতুল বারাআতের ফযিলত নিয়ে অনেকগুলো হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তম্মধ্যে কিছু হাদীস সহীহ, কিছু হাদীস হাসান লিযাতিহী, কিছু হাদীস হাসান লিগাইরিহী, আর কিছু হাদীস যয়ীফ কিন্তু আমলযোগ্য। হযরত আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন, যখন শাবানের মধ্যরাত হবে তখন তোমরা রাত্রি জাগরণ কর ও দিনের বেলায় রোজা রাখ। নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর প্রথম আসমানে অবতীর্ণ হয়ে বলেন, কোনো ক্ষমাপ্রার্থী কি নেই? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব। কোনো জীবিকাপ্রার্থী কি নেই? আমি তাকে জীবিকা দান করব। কোনো বিপদগ্রস্ত কি নেই? আমি মুক্ত করে দিব। এ রকম আরো আরো প্রার্থী যারা আছে আমার নিকট প্রার্থনা করলে আমি তাদের আশা পূর্ণ করব। এভাবে ফজর পর্যন্ত মহান আল্লাহর আহবান চলতে থাকে। (ইবনে মাজাহ)
হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) বলেন, একদিন রাতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নামাজ পড়ছিলেন এবং সিজদায় দীর্ঘ অবস্থানের কারণে আমি মনে করলাম তিনি হয়ত ইন্তিকাল করেছেন। এমনকি আমি বিচলিত হয়ে তার কাছে যাই এবং তার বৃদ্ধঙ্গুলিতে নাড়া দিলাম, তখন তিনি নড়ে উঠলেন। আমি নিজস্থানে ফিরে আসলাম। তিনি সিজদাহ থেকে মাথা মোবারক উত্তোলন করে নামাজ শেষ করলেন। তিনি আমাকে ডাক দিয়ে বললেন, হে আয়েশা ! অথবা হুমায়রা, তুমি কি আশংকা করছ যে, আল্লাহর রাসূল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি বললাম, না, ইয়া রাসূলাল্লাহ। আপনার দীর্ঘ সিজদা আমাকে সংকায় ফেলেছিল। আমি ভেবেছিলাম আপনার ইন্তেকাল হয়ে গেলো কিনা। রাসূলে পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, হে আয়েশা! তুমি কি জান আজ কোন রাত? আমি বললাম , আল্লাহ এবং তার রাসূল ভালো জানেন। তিনি বললেন, আজ শাবানের পনেরো তারিখের রাত। এই রাতে আল্লাহ তায়ালা জগদ্বাসীর দিকে বিশেষভাবে করুনার দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন। ক্ষমা প্রার্থীদের ক্ষমা করেন। রহমত প্রার্থীদেরকে রহমতে প্রদান করেন। কিন্তু পরস্পর শত্রুভাব পোষণকারীদের অবকাশ দেন না। (বায়হাকী, শুআবুল ঈমান খ-৫, পৃ- ৬৩১)
অপর হাদীসে হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি এক রাতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে ঘরে পাইনি। অতঃপর আমি ঘর থেকে বের হয়ে তাকে জান্নাতুল বাকীতে পেয়েছি। তিনি আমাকে বলেন, তুমি কি ভয় কর যে, আল্লাহ এবং তার রাসূল তোমার উপর অন্যায় করবেন? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল মূলত তা নয়। বরং আমি মনে করেছি আপনি আপনার অন্য কোন স্ত্রীর নিকট গিয়েছেন। অতঃপর তিনি বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা শাবান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে প্রথম আসমানে অবতীর্ণ হন (কুদরতি ভাবে) আর কলব গোত্রের লোকদের ছাগপালের গায়ে যে পরিমাণ পশম আছে, এই রাতে সে পরিমাণ লোককে দোযখ থেকে মুক্তিদেন (তিরমিযি)। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, পাঁচ রজনীতে বান্দার দোয়া আল্লাহ তায়ালা ফিরিয়ে দেননা। জুমআ রাত্রির দোয়া, রজবের প্রথম রাত্রির দোয়া, শাবানের অর্ধ রাত্রির দোয়া, দুই ঈদ ও রাতের দোয়া। (মুসন্নাফে আবদুর রাজ্জাক, বাবু নিসফু মিন শাবান, খ-৪, পৃ-৩১৭)
লাইলাতুল বারাতের নাম সমূহ ঃ এই পবিত্র রজনীকে লাইলাতুম মুবারাকা, লাইলাতুর রহমত, লাইলাতুস সাকও বলা হয়। লাইলাতুস সক অর্থ পুরস্কারের সনদ প্রদানের রাত। এই রাতে আল্লাহর বিশেষ রহমত নাযিল হওয়ার কারণে ‘লাইলাতুর রহমত’ বলে থাকেন কেউ কেউ। লাইলাতুল বারাত এই জন্য বলা হয় যে, খাজনা আদায়কারী খাজনা পাওয়ার পর দাতাকে মুক্তি সনদ বা রসিদ দেয়। ঠিক একইভাবে যারা এই রাতে ইবাদত বন্দেগী করে তাদেরকে মুক্তির সনদ দেওয়া হয়। কেউ কেউ এই রাতকে ‘লাইলাতুল মাগফেরাহ’ বা ক্ষমা ও মার্জনার রাত, লাইলাতুত তাওবা বা তাওবার রাত বলে অভিহিত করেছেন।
লাইলাতুল বারাতের তাৎপর্য ঃ লাইলাতুল বারাতের রাতে আল্লাহর রহমতের দরজা গুলো খুলে দেওয়া হয়। হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি হযরত রাসূলে পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলতে শুনেছি চার রাতে আল্লাহ তায়ালা কল্যাণের দরজা খুলে দেন। ঈদুল আযহার রাত, ঈদুল ফিতরের রাত, শাবান মাসের অর্ধরাত্রি যে রাতে মৃতের তালিকা তৈরি করা হয়, রিযিক নির্ধারিত হয় ও হজে গমনকারীদের তালিকাভূক্ত করা হয়। আর আরাফার রাত ফজরের আযান পর্যন্ত। (দায়লামী)। হযরত ইকরামা (রাঃ) বলেন, এই শাবানের মধ্যরাতে সারা বছরের বাজেট, জীবিত ও মৃতদের তালিকা, হাজীদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়। উক্ত তালিকা হতে একজনও বাড়ে-কমেনা। (ইমাম আলুসী, তাফসিরে রুহুল মাআনী)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, শাবানের মধ্যরাতে যাবতীয় বিষয়ের ফয়সালা করা হয় এবং উহা রমজানের ২৭ তারিখ (কদরের) রাতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দায়িত্বশীলদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। (তাফসিরে কুরতুবি, ১৬/১২৬)। হযরত আতা ইবনে ইয়াসার (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, মধ্য শাবানের রাত্রে মালাকুল মাউতকে একটি তালিকা দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন, যাদের নাম তালিকাতে রয়েছে তাদের রূহকে আগামী বছর কবয করা হবে। উক্ত রাতে মানুষগুলো নানা কাজে ব্যস্ত থাকেন। কেউ জীবনোপকরন সংগ্রহ করছে, কেউ বাগানে গাছ লাগাচ্ছে, কেউ গৃহ নিমার্ণ করছে, বিবাহ করছে, অথচ তাদের নাম মৃত্যুর তালিকায় রয়েছে তার কোনো খবর তাদের কাছে নেই। (আব্দুল হক দেহলভী (রহ:), মা-সাবাতা বিসসুন্নাহ)
মুসলিম মনীষীগণের দৃষ্টিতে লাইলাতুল বারাত ঃ নির্ভরযোগ্য ও সর্বজন গ্রহণযোগ্য তাফসির গ্রন্থ সমূহ, ইলমে হাদীসের বিশেষজ্ঞগণ, ফিকাহ শাস্ত্রের ইমামগণ আপন আপন কিতাবে এই রাতের ফযিলত নিয়ে আলোচনা করেছেন।
১। হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত ফকীহ ইমাম ইবনে নুজাইম মিসরী (রহ:) বলেন, রমজান মাসের শেষ দশ রাত, দুই ঈদের রাত, জিলহজের প্রথম দশরাত এবং শাবান মাসের অর্ধরাতে ইবাদত করা মুস্তাহাব। কারণ হলো এর সপক্ষে অনেকগুলো হাদীস বর্ণিত হয়েছে। ইমাম আল মুনাভী (র:) “আত-তারগিব ওয়াত তারহিব” গ্রন্থে এ সমস্ত হাদীস শরীফগুলো বর্ণনা করেছেন এখানে রাত জাগা মানে সারা রাত জাগ্রহ থেকে ইবাদত করা। (আল বাহরুর রায়েক, কিতাবুস সালাত)
২। ইমাম শাফেয়ী (রহ:) বলেন, বছরের পাঁচটি রাতে দোয়া কুবল হয়। এগুলো হলো জুমার রাত, দুই ঈদের দুইরাত, রজব মাসের প্রথম রাত এবং শাবান মাসের মধ্যরাত। এ রাতগুলোর মর্যাদা সম্পর্কে আমি যা বর্ণনা করেছি তা আমি খুব পছন্দ করি। (কিতাবুল উম্ম, খ : ১, পৃ: ২৬৪)
৩। ইমাম ইবনে রাজব হাম্বলী বলেন, এই রাতে ইবাদত করা মুস্তাহাব। এই রাতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইবাদত করতেন। (লাতায়িফুল মায়ারিফ, পৃ: ১৩৮)
৪। আবদুর রহমান মুবারকপুরী বলেন, অর্ধ শাবানের মাহাত্ন্য ও মার্যাদার ব্যাপারে একাধিক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এগুলো সামষ্টিকভাবে প্রমাণ করে যে, এই রাতের (ইবাদতের) ভিত্তি অত্যন্ত মজবুত ও সুদৃঢ়। (তুহফাতুল আহওয়াজী, খ-৩, পৃ: ৩৬৭)
৫। ইমাম মুহাম্মদ ইবনে আলী আল হাসকাফী (রহ:) বলেন, সফরে বের হওয়ার পূর্বে দু’রাকাত নামাজ পড়া এবং সফর হতে ফিরে এসে দু’রাকাত নামাজ পড়া, দু’ঈদের রাতে, শাবানের মধ্যরাতে, রমজানের শেষ দশ রাতে এবং যিলহজ মাসের প্রথম দশ রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদত করা মুস্তাহাব। (আদ-দুররুল মোখতার, খ-১ম, পৃ: ২৪-২৫)
বরাত রাতে করণীয় আমল ঃ প্রিয় নবি রাহমাতুল্লিল আলামীন (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম), তার সাহাবাগণ, তায়েবীগণ এবং এরই ধারাবাহিকতায় পূণ্যবান মনীষীগণ এই রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদত বন্দেগীতে লিপ্ত থাকতেন। ইমাম ইবনুল হাজ আল-মালেকী (রহ:) বলেন. আর এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, এই বরাত রজনী খুবই বরকতময়, আল্লাহর কাছে সম্মানিত। আমাদের পূর্বপুরুষগণ এ রাতকে খুবই সম্মান করতেন, এ রাত আগমনের পূর্বেই ইবাদতের প্রস্তুতি গ্রহন করতেন। যখন এ রাত উপস্থিত হতেন তখন এ রাতের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করার জন্য সচেষ্ট থাকতেন। (আল মাদখাল)
এ রাতের করণীয় হলো নফল ইবাদতে মশগুল থাকা, কুরআন তিলাওয়াত করা, তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করা, সালাতুত তাসবিহ আদায় করা, দরূদ শরীফ পাঠ করা, যিকির-আযকার করা, তাওবা- ইস্তেগফার করা, দান-সদকা, কবর যিয়ারত ইত্যাদি ইবাদত করা এবং পরের দিন রোজা রাখা। আবদুল হাই লখনোভী বলেন, এই রাতে নফল সালাত বেশি করে পড়া উচিত। এই রাতের নফল হবে লম্বা, সিজদা হবে দীর্ঘতর, দু’রাকাত করে পড়বে যতবার ইচ্ছা পড়তে পারবে। রাকাতের কোনো নির্দিষ্টতা নেই, কোনো নির্দিষ্ট সূরাও নেই। অর্থ্যাৎ, যে কোনো সূরা দিয়ে পড়তে পারবে। (আল আসারুল মারফুয়া. পৃ: ৮০)
এই রাতে বর্জনীয় ঃ মনে রাখতে হবে লাইলাতুল বারাত বা সৌভাগ্যের রজনী আল্লাহর অনেক বড় অনুগ্রহ। এই রাতে ইবাদত, তাওবা ইস্তেগফার থেকে দূরে থাকা ঈমানদারের কাজ হতে পারে না। অনুরূপভাবে শরিয়াত বিবর্জিত কু-প্রথা থেকে বেঁচে থাকাও জরুরী। যেমন, এই রাতের গুরুত্বকে মূল্য না দিয়ে খেল তামাশা করা, আতশবাজি ফুটানো, পটকা ফুটানো, রাস্তা-হাট বাজারে যুবকদের আড্ডা, শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে অপচয় করা এবং ফজরের জামাত থেকে দূরে থাকা অনুচিত ও পরিত্যাজ্য।
এই রাতে বঞ্চিত যারা ঃ লাইলাতুল বারাতে আল্লাহ তায়ালা প্রার্থনাকারীদের দোয়া কবুল করেন। বিপদগ্রস্থদের বিপদ দূরীভূত করেন। জীবন-জীবিকা লিপিবদ্ধ করেন। কিন্তু কিছু কিছু মানুষের গুনাহ এই রাতেও ক্ষমা হবে না। হযরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত রাসূল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরশাদ করেছেন, শাবান মাসের অর্ধরাতে হযরত জিবরাইল (আ:) এসে আমাকে বললেন, আকাশের দিকে মস্তক উত্তোলন করুন। আমি বললাম, এ রাত্রির বৈশিষ্ট্য কী? তদুত্তরে তিনি বলেন, আজকের রাতে আল্লাহ তায়ালা তিনশত রহমতের দরজা খুলে দেন। যারা আল্লাহর সাথে শিরক করে না। অপর বর্ণনায় রয়েছে যারা যাদুকর নয়, গণক নয়, বারবার ব্যভিচার করে না ও মদ্যপান করে না এসব বান্দাকে আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করে দেন। (নুযহাতুল মাজালিস)
মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা ও সুনানে ইবনে মাজাতে হাদীসের (নং-১৩৯০) কিঞ্চিত পরিবর্তনসহ ঈর্ষাপরায়ণ ও আত্মীয়তা সম্পর্ক ছিন্নকারী, মূর্তী পূজারীদের ক্ষমা না করার কথা বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং, যারা পরকালে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেতে চায়, ইহকালে আল্লাহর নেয়ামত লাভে ধন্য হতে চায় শান্তি ও সুখের জীবন লাভ করতে চায় তাদের উচিত পবিত্র রাতগুলোতে ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে অতিবাহিত করা। আর এই পবিত্র রজনী গুলোর মধ্যে লাইলাতুল বারাত অত্যন্ত ফযিলতপূর্ণ।
লেখক : সহকারি শিক্ষক (ইসলাম শিক্ষা), চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন