শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

করোনা চিকিৎসায় আবারো সঙ্কট

| প্রকাশের সময় : ২৫ মার্চ, ২০২১, ১২:০২ এএম

গত বছর মার্চ মাসের ৮ তারিখে দেশে প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। অবশ্য এর মাসাধিককাল আগে থেকেই চীনের ওহান থেকে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে করোনা রোগী ছড়িয়ে পড়েছিল। মার্চের শেষ সপ্তাহে দেশে লকডাউন ও সামাজিক দূরত্ব, নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হলেও ইতিপূর্বেকার শৈথিল্যের কারণে দেশে করোনা সংক্রমণের ভয়াবহ প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কা করা হলেও তা হয়নি। সরকারের নানাবিধ ব্যবস্থা এবং সাধারণ মানুষের ঘরে থাকা ও সামাজিক যোগাযোগ সীমিত করার মধ্য দিয়ে দেশে করোনা মহামারীর আশঙ্কা অনেকটা কমিয়ে রাখা সম্ভব হলেও সংক্রমিত রোগীদের নিয়ে দেশের হাসপাতাল ও স্বাস্থসেবা খাতের লেজেগুবুরে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল। প্রয়োজন অনুপাতে করোনা টেস্টিং ব্যবস্থা না থাকা, করোনা রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত আইসিইউ বেড, অক্সিজেন মাস্ক, ভেন্টিলেশন ব্যবস্থার সংকট হাসপাতালগুলোতে তীব্র আকারে দেখা দিয়েছিল। এসব তীক্ত অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়েই বছরের শেষ দিকে এসে করোনা সংক্রমণের হার অনেক কমে যাওয়ায় সামাজিক দূরত্ব, মাস্ক ব্যবহার ও স্বাস্থ্যবিধি অগ্রাহ্য করতে শুরু করেছিল মানুষ। বছরের প্রথম দিকেই দেশে করোনা টিকা কার্যক্রম শুরু হলেও গত দুই মাসে দেশে ভ্যাকসিনেশনের হার শতকরা মাত্র তিনভাগ। অন্যদিকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে।
মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে গত ২৩ দিন ধরে দেশে করোনা সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী। সংক্রমণের হার বৃদ্ধির পাশাপাশি মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়ে চলেছে। সেইসাথে এখন দেশে করোনার যে সব নতুন স্ট্রেইন শনাক্ত হচ্ছে তা অনেক বেশি সংক্রামক ও বিপজ্জনক বলে প্রতিয়মান হচ্ছে। অপেক্ষাকৃত অল্প বয়েসীরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে এবং তাদের মধ্যে জটিল অবস্থা এবং অক্সিজেন ও আইসিইউ পরিচর্যা আগের চেয়ে বেশি লাগছে। গতকাল প্রকাশিত রিপোর্টে গত ২৪ ঘন্টায় দেশে নতুন ৩ হাজার ৫৫৪ জন করোনা পজিটিভ শনাক্ত এবং ১৮ জনের মৃত্যুর তথ্য জানা যায়। গত ৮ মাসের মধ্যে এটি সর্বোচ্চ সংক্রমণ। প্রতিদিনই বাড়ছে সংক্রমণের হার। এরই মধ্যে বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বেডের সংকট দেখা দিয়েছে। শুধু আইসিইউ বেডই নয়, করোনা রোগীর সাধারণ শয্যার সংকটও ক্রমে বাড়ছে বলে প্রকাশিত খবরে জানা যায়। গত মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে যেখানে করোনা সংক্রমণের হার ছিল ২ দশমিক ৬ ভাগ, দেড় মাসেরও কম সময়ের মধ্যে গত পরশুদিন এ হার ১৩ দশমিক ৬৯ ভাগে দাঁড়িয়েছে। এ হারে বাড়তে থাকলে অবস্থা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে আর সময় ক্ষেপণের সুযোগ নেই।
এখনকার করোনা রোগীদের শ্বাসকষ্টসহ দ্রুত অবনতিশীল অবস্থায় পড়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে করোনা আইসিইউ স্বল্পতার কারণে জটিল অবনতিশীল করোনা রোগী ও স্বজনদের হাহাকার করতে দেখা যাচ্ছে। পরিস্থিতি উত্তরণে এখন আবারো নানামুখী উদ্যোগ প্রয়োজন। করোনা টেস্টিংয়ের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়াতে হবে। করোনা রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক শয্যা এবং আইসিইউ সুবিধা বাড়াতে হবে। সেইসাথে সব নাগরিকের মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক করা, সামাজিক মেলামেশা ও জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং জনসচেতনতা গড়ে তুলতে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এখন দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে, এর ভয়াবহতা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। রাস্তা. গণপরিবহণ, বাজার, শপিংমল ও কলকারখানায় জনঘনত্ব কমিয়ে আনা এবং স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার বাধ্যতামূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। শুধু সরকারের পক্ষে এমন মহামারীর সংকট মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। নাগরিক সমাজকেও যথাযথ ভ’মিকা ও দায়দায়িত্ব পালন করতে হবে। ইতিমধ্যে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র শেখ ফজলে নুর তাপস সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন সব মার্কেটের দোকানপাট রাত ৮পর বন্ধ রাখার আহবান জানিয়েছেন। একইভাবে ঢাকা উত্তরসহ দেশের অন্যন্য সিটি কর্পোরেশন, বিভাগীয় ও জেলাশহরের প্রশাসনকেও অনুরূপ নির্দেশনা জারি ও তা বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিতে হবে। করোনার নতুন ঢেউয়ে নতুন করে লাখ লাখ মানুষ কর্ম হারাবে, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোর অর্থনৈতিক সংকট আরো বাড়তে পারে। এসব বিষয় সামনে রেখে সরকারের অর্থনৈতিক সহায়তা ও প্রণোদনার ব্যবস্থা নিতে হবে। বিশেষত: জরুরী ভিত্তিতে আইসিইউ বেড বৃদ্ধিসহ করোনা চিকিৎসার সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিতে হবে। সেই সাথে করোনা টিকা কার্যক্রম সহজ ও জোরদার করার পাশাপাশি বিকল্প উৎস থেকে প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন সংগ্রহের পদক্ষেপ নিতে হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন