বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মুক্তাঙ্গন

ফারাক্কা বাঁধ প্রকৃতির বিরুদ্ধে

প্রকাশের সময় : ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এম এইচ খান মঞ্জু
ভারত ফারাক্কা বাঁধের গেটগুলো খুলে দেয়ায় বাংলাদেশের পদ্মা নদীতে বিপজ্জনকভাবে পানি বাড়ছে। ইতোমধ্যে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে বন্যার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। পদ্মার চরগুলো ডুবে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ছুটছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন প্রকৌশলী জানান, বিহার ও মধ্যপ্রদেশে বন্যার কারণে ভারত ফারাক্কা বাঁধের ১০৬টি গেটের সবগুলোই খুলে দিয়েছে। এ কারণে গত এক সপ্তাহ ধরে রাজশাহী পয়েন্টে পানির উচ্চতা প্রতিদিন প্রায় ১২ থেকে ১৩ সেন্টিমিটার করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফারাক্কা বাঁধের সব স্লুইসগেট খুলে দেয়ায় এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের পদ্মা ও মহানন্দা নদী ও এর শাখা-প্রশাখার ওপর।
ভারত থেকে আসা পানির ঢল গত ৪৫ বছরের রেকর্ড ভেঙ্গে এখন বিপদসীমার কাছাকাছি উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জ, শরীয়তপুরসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় হু হু করে বাড়ছে পানি। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে সোমবারের মধ্যে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করবে বলে আশংকা করা হচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশের জনগণের ভোগান্তির মাত্রা আরো বেড়ে যাবে।
নদীমাতৃক বাংলাদেশে ছোট-বড় মিলিয়ে ২৩০টিরও বেশি নদ-নদী রয়েছে। এর মধ্যে ৫৭টি নদী আন্তর্জাতিক, যার মধ্যে ৫৪টির মূল উৎস চীন, নেপাল, ভুটান ও ভারতের পর্বতময় অঞ্চল। অবশিষ্ট ৩টি নদী এসেছে পার্শ্ববর্তী মিয়ানমার থেকে। বাংলাদেশের অবস্থান ভাটি অঞ্চলে হওয়ায় উজানে যে কোন ধরনের পানি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার প্রত্যক্ষ নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ভারত কর্তৃক গঙ্গা নদীতে ফারাক্কা বাঁধের কারণে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে বাংলাদেশ। ভারত কর্তৃক ফারাক্কা বাঁধের মাধ্যমে শুষ্ক মৌসুমে গঙ্গার পানির ব্যাপক প্রত্যাহার বাংলাদেশের জনগণের জীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। মানবসৃষ্ট এই দুর্বিপাকে বাংলাদেশের কৃষি, মৎস্য, বনজ, শিল্প, নৌপরিবহন, পানি সরবরাহ ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রত্যক্ষ ক্ষতির আনুমানিক পরিমাণ প্রায় ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর পরোক্ষ ক্ষতি হিসেবে আনলে ক্ষতির পরিমাণ আরো বেড়ে যাবে।
গঙ্গার প্রবাহ হ্রাসের ফলে অত্যধিক পলিময়তার সৃষ্টি হয়েছে যা নদীর বুক ভরাট করে নদীর খাড়িগুলোর পরিবহন ক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছে। যার কারণে বর্ষায় বন্যার তীব্রতা দেখা দিচ্ছে বাংলাদেশে। এবারও বর্ষায় ফারাক্কা খুলে দেয়ায় দেশের অনেক জেলা বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। বসতবাড়ি ভেসে যাওয়ায় বাস্তুহারা হওয়ার পাশাপাশি খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে দুর্বিষহ জীবন কাটাতে হচ্ছে কোটি কোটি মানুষকে। এছাড়া নষ্ট হয়েছে আবাদি ফসল, প্রাণ গেছে গবাদি পশুর। বাংলাদেশের এমন ব্যাপক ক্ষতির ব্যাপারে বন্ধু রাষ্ট্র ভারতের কিছু করণীয় আছে কিনা তা এখন দেখার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে।
কলকাতা বন্দরের নাব্যতা বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ১৯৭৫ সালের ২১ এপ্রিল থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ৪১ দিনের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে ফারাক্কা বাঁধের সব ফিডার ক্যানেল চালুর কথা বলে ভারত। কিন্তু বাস্তবতা হলো ওই ৪১ দিনের পরিবর্তে ৪১ বছর পরেও বাঁধটি চালু আছে। লক্ষণীয় বিষয় হলো, কলকাতা বন্দরের নাব্যতা বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে ফারাক্কা বাঁধ চালুর পর থেকেই বাংলাদেশ ক্রমাগতভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। ফারাক্কার মাধ্যমে শুষ্ক মৌসুমে গঙ্গার পানি প্রত্যাহার করে নিলে বাংলাদেশ পানি সংকটে পড়ে। আবার বর্ষা মৌসুমে বিহার ও মধ্যপ্রদেশকে বন্যার কবল থেকে রক্ষার অজুহাতে ফারাক্কা বাঁধের গেটগুলো খুলে দিলে বাংলাদেশের মানুষ বন্যায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আন্তর্জাতিক রীতিনীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলে ভারত ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশের এতো বড় ক্ষতি করতে পারতো না। বাস্তব কারণে এখন তো ভারতের ভেতর থেকেই ফারাক্কা বাঁধ সরিয়ে নেয়ার কথা বলা হচ্ছে। বিহার এ ব্যাপারে বেশ সোচ্চার। আসলে রাজনৈতিক কারণে কোন অঞ্চলকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা গেলেও প্রকৃতিকে ভাগ করা যায় না। প্রকৃতিতে হস্তক্ষেপ করতে গেলে তার মন্দ ফল মানুষকে ভোগ করতে হয়।
ষ লেখক : প্রিন্সিপাল, এম এইচ খান ডিগ্রী কলেজ, গোপালগঞ্জ, সাবেক সংসদ সদস্য ও গোপালগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন