বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

স্বাস্থ্য

কোমল পানীয় স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর

| প্রকাশের সময় : ২৬ মার্চ, ২০২১, ১২:০৯ এএম

প্রচন্ড গরমে ঠান্ডা কোমল পানীয় দেহমনে প্রশান্তি আনে। কিন্তু সকল কোমল পানীয় যেমন পেপসি, কোকাকোলা, আরসিকোলা, ইউরাকোলা, সেভেন আপ, স্প্রাইট, ফিজআপ, আপারটেন, সানক্রেস্ট ইত্যাদি স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর। গবেষণায় দেখা গেছে, কোমল পানীয়তে কোন পুষ্টি উপাদান তো নেইই বরং দেহের জন্য ক্ষতিকর কিছু রাসায়নিক উপাদান রয়েছে। আমেরিকা, মালয়েশিয়া, জাম্বিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বেশ কিছু দেশের গবেষণার রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, নিয়মিত কোমল পানীয় খাওয়াতে দাঁতের, হাড়ের, পেশির, লিভারের জটিল রোগ হয়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় শিশু-কিশোরদের।

কোমল পানীয়ের অন্যতম উপাদান হচ্ছে ক্যাফেইন। ক্যাফেইন একটি আসক্তির মাদক, যা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে উত্তেজিত করে। এটা দেহকে কৃত্রিমভাবে উত্তেজিত করে। হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি করে, সাময়িক বুদ্ধিবৃত্তি বাড়ায় এবং অবসন্ন ভাব বা শ্রান্তি দূর করে। অত্যধিক ক্যাফেইন গ্রহণের ফলে বর্ধিত হারে মূত্রাশয় ও পাকস্থলীয় ক্যান্সার এবং উচ্চরক্তচাপ দেখা দেয়। এটি শিশুদের মধ্যে জন্ম বৈকল্য সৃষ্টি করে। ডায়াবেটিসের কারণ এবং পাকস্থলীর দেয়ালের ক্ষতি করে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে- শারীরিক কঠোর পরিশ্রমের পর কোমল পানীয় পান করলে ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়ামের অভাব ঘটতে পারে। গবেষকরা বলেন, অধিকাংশ কোমল পানীয় ফসফরাস, ক্যাসসিয়াম এবং হাড়ের ক্ষতিকে দ্রুত করে দেয়। কৃত্রিম মিষ্টিকারক হিসেবে কোমল পানীয়তে এসপারটেম, এসিসালফেম ও স্যাকারিন ব্যবহার করা হয়। এগুলো স্মৃতি বিনষ্ট, মৃগীর খিচুঁনি, বমিভাব, ডায়রিয়া, অস্পষ্ট দৃষ্টি, মস্তিষ্কের ক্যান্সার, মূত্রাশয়ের ক্যান্সার সৃষ্টির সম্ভবনা রয়েছে। এসব গ্রহণে লিভার সিরোসিসের মত জটিল রোগ হতে পারে। কোমল পানীয়কে সজীবতা ও অম্লস্বাদ আনয়নের জন্য সাইট্রিক এসিড, ফসফরিক এসিড এবং কদাচিৎ মৌলিক এসিড ও টারটারিক এসিড ব্যবহার করা হয়। ব্রিটিশ দন্ড সংস্থা এর মতে, অতি মিষ্টি পানীয় অথবা অম্লস্বাদযুক্ত পানীয় পান করার পর দাঁত পরিষ্কার করলেও দাঁতের ক্ষতি হয়। ব্রিটেনে এক জরিপে দেখা গেছে যে, যারা নিয়মিত কোমল পানীয় পান করে তাদের মধ্যে শতকরা ২০ ভাগ দাঁতের রোগে ভুগে। একটি দাঁত কোমল পানীয়তে দুদিন রেখে দিলে দাঁতটি নরম হয়ে যায়। ফসফরিক এসিডের ফসফরাস মানুষের পাকস্থলীর হাইড্রোক্লোরিক এসিডের সাথে বিক্রিয়া করে বদহজম, গ্যাস এবং পাকস্থলীর স্ফীতির সৃষ্টি করে। অধিক চাপের কার্বনডাইঅক্সাইড কোমল পানীয়তে বুদ বুদ সৃষ্টি করে। কার্বনডাইঅক্সাইড একটি বিষাক্ত দূষিত পদার্থ। বাতাসে এর পরিমাণ বাড়লে বাতাস দূষিত হয়। অথচ এই দূষিত কার্বনডাইঅক্সাইড আমরা কোমল পানীয়ের সাথে খাচ্ছি। ফলে ফুসফুসের জটিল রোগ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কোমল পানীয় মূল উপাদান ৯৯% ডিসটিলড ওয়াটার।

সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, যত বেশি ডিসটিলড ওয়াটার পান করবে তার মধ্যে ততো খনিজ পদার্থের স্পল্পতা ও এসিড অবস্থার সৃষ্টি হবে। কোমল পানীয়ের সংরক্ষণ মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য কার্বনিক এসিড বেনজয়িক এসিড বা সোডিয়াম বেনজয়েট দেয়া হয়। এগুলো হাঁপানি, ফুসকুড়ি এবং অতি সক্রিয়তার কারণ ঘটায়। বস্তুর বিরঞ্জনে কিংবা পরিষ্কার করতে যে সালফার ডাই অক্সাইড ব্যবহার করা হয় তা কোমল পানীয়তে সংরক্ষণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। হইা রক্তিমাভা, মূচ্ছাভাব, ত্বক স্ফীতি, মাংসপেশী ফোলা, দুর্বলতা, বুকের টান টানভাব এর কারণ ঘটায়। হাঁপানিগ্রস্ত রোগীর হাঁপানি বেড়ে যায়। রঙিন কোমল পানীয় বেশি ক্ষতিকর। কারণ ব্যবহৃত কৃত্রিম রঙ মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। পেপসির টারট্রাজিনের রঙ কমলা হলুদ। এই রঙ এলার্জিক বিক্রিয়া সৃষ্টি করে বিধায় নরওয়ে ও সুইডেনে এটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এটি ক্যান্সার সৃষ্টিকারক এজেণ্ট। মিরিন্ডা অরেঞ্জে সানসেট ইয়োলো এবং টারট্রাজিন দেখা হয়। এটিও ক্যান্সার সৃষ্টিকারক। এটিও উক্ত দেশ ও ফিনল্যান্ডে নিষিদ্ধ করেছে। অন্য রঙও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। কোমল পানীয়কে ঠান্ডা রাখার জন্য ইথাইলিন গ্লাইকোল দেয়া হয়। এই রাসায়নিক পদার্থ আর্সেনিকের মতোই ধীর ঘাতক। এক ঘন্টার মধ্যে কেউ ৪ লিটার কোমল পানীয় খেলে মৃত্যুবরণ করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে ১২-১৫ বছর বয়সী স্কুলগামী ৫৯১ জন ছেলে এবং ৭৪৪ জন মেয়ের উপর গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, অতিরিক্ত পরিমাণে নিয়মিত কার্বনেটেড কোমল পানীয় পান করার ফলে তাদের হাড়ে খনিজ পদার্থের পরিমাণ কমে গেছে। এতে দাঁতের ও হাড়ের বিভিন্ন রকম রোগ হয়। তাই নিজের যত্ন না নিলে নিজে অন্যের ওপর ভরসা মিছে।

ডাঃ মাওঃ লোকমান হেকিম
চিকিৎসক-কলামিস্ট, মোবাইল : ০১৭১৬ ২৭০১২০

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন