মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দক্ষিণডিহি এখন পাঁপড়ের গ্রাম নামে পরিচিত

বিকিকিনি মাসে কোটি টাকার

ডি এম রেজা সোহাগ, খুলনা থেকে | প্রকাশের সময় : ২৬ মার্চ, ২০২১, ১২:০৭ এএম

এবারের মতো শীত বিদায় নিয়েছে। তারপরও মধ্যরাতের পর থেকে ভোর পর্যন্ত হালকা শীত অনুভূত হয়। এমন আবহাওয়ায় সকালের মিষ্টি রোদে গৃহবধূরা ঘরের উঠোনে খেজুর পাতার লম্বা পাটি ও চট বিছিয়ে কাঁচা পাঁপড় শুকানোর কাজে ব্যস্ত।

এক কিংবা দুই ঘর নয়, পুরো গ্রাম জুড়ে চলছে এই কাজ। পুরুষরা নারীদের সাহায্য করছেন সাধ্যমত। পাঁপড় শুকানোর পর তা প্যাকেটে ভরে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এখানকার মানুষের মূল পেশা পাঁপড় বিক্রি। পাঁপড় বিক্রি করে কয়েকশত পরিবার টিকে রয়েছে। গ্রামটির নামই হয়ে গেছে ‘পাঁপড় গ্রাম’।

খুলনার প্রবেশদ্বার ফুলতলা উপজেলার একটি গ্রাম দক্ষিণডিহি। মূল শহর থেকে ১৯ কিলোমিটার দূরে উপজেলা। আর গ্রামটি খুলনা-যশোর মহাসড়ক থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার ভেতরে। অনেকেই জানেন, গ্রামটিতে রয়েছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুরালয়। কবিগুরুর মা সারদা সুন্দরী দেবী দক্ষিণডিহি গ্রামে জন্মেছিলেন। বেনীমাধব রায়ের কন্যা, কবিগুরুর স্ত্রী মৃণালিনী দেবীর জন্ম একই গ্রামে। তাদের দ্বিতল বাড়িটি কালের সাক্ষি হয়ে আজো দাড়িয়ে আছে। এখানে একটি যাদুঘর করেছে প্রতœতত্ব অধিদফতর।
বাড়িটির সামনে বিশাল এক খোলা মাঠ। মাঠ জুড়ে চলছে কাঁচা পাঁপড় শুকানোর কাজ। রুটির মতো গোলাকৃতির হাজার হাজার পাঁপড়ে মাঠটি ঢাকা পড়েছে। হঠাৎ দেখলে মনে হবে যেন পাঁপড়ের মাঠ! শুধু এই মাঠটি নয়, গ্রামের অলিগলি সব জায়গাতেই একই চিত্র। গৃহবধূরা শাড়ির আঁচল দিয়ে ঘোমটা টানছেন। আর পুরুষরা মাথায় দিচ্ছেন গামছা। কিছু সময় পরপর পাঁপড়গুলো এপিঠ ওপিঠ করে দিচ্ছেন।

দক্ষিণডিহি ছাড়াও এ উপজেলার নাওদাড়ি ও তত্তিপুর গ্রামের মানুষও পাঁপড় তৈরির সঙ্গে জড়িত। তিন গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই রাত-দিন পাঁপড় তৈরি চলে। এর সঙ্গে যুক্ত পরিবারের প্রায় প্রতিটি সদস্য। অনেকে বাপ-দাদার পেশা হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। খুলনা ও ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকারি ক্রেতারা এখানকার পাঁপড় কিনে খুচরা বিক্রি করেন। খুচরা ক্রেতারা কিনে দোকানে, রাস্তার ধারে বা উৎসব উপলক্ষে মেলা ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের স্টলের কাছে বসে তেলে ভেজে বিক্রি করেন।
পাঁপড় তৈরির সাথে জড়িত এমন কয়েকজন জানালেন, মাষকলাই ডাল থেকে পাঁপড় তৈরি করা হয়। মসুর, ছোলা, চাল থেকে তৈরি আটা দিয়েও পাঁপড় করা যায়। এর সঙ্গে মেশাতে হয় চালের গুঁড়া, লবণ, কালিজিরা ও খাওয়ার সোডা।

কাঁচা পাঁপড় পাতলা রুটির মতো গোল আকৃতি করে প্রথমে রোদে শুকিয়ে রাখা হয়। রোদে শুকানো পাঁপড় তেলে ভাজলেই খাওয়ার উপযুক্ত হয়। তেলে ভেজে, বিট লবণ বা টমেটো সস লাগিয়েও খাওয়া যায়।
রাবেয়া নামে এক নারী জানান, পাঁপড় তৈরি ও শুকানোর কাজে নারীরাই মূলত যুক্ত বেশি। কবিগুরুর শ্বশুরালয়ের পাশের মাঠে শতাধিক নারী পাঁপড় শুকায়। বছরের বৈশাখী ও চৈত্র-সংক্রান্তির মেলায় বেড়ে যায় পাঁপড়ের চাহিদা। এছাড়া বছরজুড়েই থাকে এর চাহিদা। হেদায়েত নামে আরেক পাঁপড় শ্রমিক জানান, একেক মহাজনের ২০ থেকে ৩০ জন জন শ্রমিক রয়েছে। তারা পাঁপড় তৈরি, শুকানো ও বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। ১২ মাস পাঁপড় তৈরি করা হয়। বৃষ্টি হলে একটু কষ্ট করে শুকাতে হয়। দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিভিন্ন ধরনের পাঁপড়ের বিভিন্ন দাম। মান ভেদে পাঁপড় ১০০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। এখান থেকে দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকাররা এসে কিনে নিয়ে যায়। আবার তাদের অর্ডার মতো পাঠানোও হয়। প্রতিমাসে কোটি টাকার পাঁপড় বিক্রি হয়।
ফুলতলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ আকরাম হোসেন বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই দক্ষিণডিহি, নাওদাড়ি ও তত্তিপুর গ্রাম পাঁপড়পল্লি হিসেবে গড়ে উঠেছে। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত উদ্যোক্তা ও শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহযোগিতা দিলে পাঁপড় শিল্পের সম্ভাবনাকে আরও প্রসারিত করা সম্ভব।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন