রবিউল ইসলাম, কালিগঞ্জ (সাতক্ষীরা) থেকে
সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণে হাজার হাজার হেক্টরে কৃষি জমিতে লোনা পানি তুলে চিংড়ি চাষ এখন কৃষকের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রথম প্রথম এ সব জমিতে চিংড়ি চাষের পাশাপাশি ধান চাষ করে কৃষক লাভবান হলেও দীর্ঘ দিন লোনার কারণে তা আর সম্ভবপর হচ্ছে না। লোনা পানিতে চিংড়ি চাষ করায় এ অঞ্চলের কৃষকের ধান চাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বোরো চাষ করলেও চাষাবাদের পর লোনার কারণে শত শত একর জমি বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষি প্রধান এলাকা হিসেবে পরিচিত কালিগঞ্জ উপজেলায় ধানচাষ করে এলাকার কৃষকেরা স্বাবলম্বী। কয়েক বছর ধরে চিংড়ি চাষ করায় বোরো চাষাবাদ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক কৃষক আশা নিয়ে বোরো চাষাবাদ করেছিল, কিন্তু রোপণের ১৫/২০ দিনের মধ্যে চারা হলুদ বিবর্ণ হয়ে মরে যাওয়ায় চাষিরা হতাশ। মৌতলা বিল, দক্ষিণ শ্রীপুর বিল, কামারের বিলসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এসব বিলের বেশির ভাগ ইরি ধান বন্ধ হয়ে গেছে। গত বছরও এসব বিলে ছিল সবুজ ধানের সমারোহ। এ সময় কথা হয় মৎস্য আহরণকারী রঘুনাথপুর গ্রামের সাহেব আলীর সাথে। তিনি জানান, একদিন বিলে ধান চাষ করে তারা সুখে শাস্তিতে বসবাস করতেন। নিজের জমি ও অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করে অত্যন্ত স্বাচ্ছন্দ্যে দিন কাটত। গত কয়েক বছর এসব বিলে লোনা পানি উঠিয়ে মাছ চাষ করায় এখন আর জমিতে ইরি ধান হয় না। প্রথম প্রথম কয়েক বছর ধানচাষ হয়েছে। বর্তমানে লোনা এত বেশি যে এখন আর জমিতে ধান চাষ করা সম্ভব হচ্ছে না। আক্ষেপ করে বলেন, এখন খালে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন। একই সময় কথা হয় মথুরেসপুর গ্রামের জহুরল ইসলামের সাথে। তিনি জানান, গত চার-পাঁচ বছর আগেও এসব বিলে এক ইঞ্চি পরিমাণ জায়গায় ধানচাষ হতে বাকি থাকত না। লোনা পানি তুলে চিংড়ি চাষ করায় এখন আর ধান চাষ হচ্ছে না। ধানচাষি বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের নুর মোহাম্মদ আলী জানান, ধান রোপণ না করে যদি চারা বিক্রি করে দিতেন তা’হলে ১০-১৫ হাজার টাকা পেতেন, সেই ধানের চারা রোপণ করে পাঁচ হাজার টাকারও ধান হবে না। কালিগঞ্জ কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ১৬ হাজার ৪০০ হেক্টর বোরো চাষাবাদ করা হয়েছে। যার ফলন আশানুরূপ। কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোসাদ্দেক আলী দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, লবণাক্ততায় উপজেলায় কিছু কিছু এলাকায় ২৮ জাতের ধান মরে গেছে। তবে লবণাক্ত এলাকায় বিনা ৮ ও ১০ জাতের ভালো ফলন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, উপকূলীয় এসব এলাকায় কৃষকদের পর্যাপ্ত ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা না থাকায় কৃষকরা না বুঝে লবণ সহিঞ্চু ধান রোপণ না করায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। একটানা দীর্ঘদিন চিংড়ি চাষ করায় জমিতে লবণাক্তের পরিমাণ বহুগুণ বেড়ে গেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন