বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

জমি অধিগ্রহণের টাকা নিয়ে দুর্নীতি-অস্বচ্ছতা নয়

| প্রকাশের সময় : ১ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০২ এএম

যে কোনো সরকারি অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়নের প্রথম পদক্ষেপ শুরু হয় জমি অধিগ্রহণের মধ্য দিয়ে। রাস্তার উন্নয়ন-সম্প্রসারণ, ব্রিজ নির্মাণ, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, ট্রেনিং সেন্টার বা সরকারি প্রশাসনিক ভবন নির্মাণে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। এর মধ্যে জমি অধিগ্রহণ খাতে ব্যয়ের অংক ১০ ভাগেরও কম। এসব অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বার বার সময় বৃদ্ধির সাথে সাথে অস্বাভাবিকহারে বাজেটবৃদ্ধির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কিন্তু উন্নয়ন প্রকল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ জমি অধিগ্রহণের টাকা পরিশোধে নানাবিধ দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা এবং হয়রানির শিকার হয় প্রকল্প এলাকার ক্ষতিগ্রস্তরা। যাদের ত্যাগের বিনিময়ে একেকটি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবরূপ পরিগ্রহ করে, সে সব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের হয়রানি ও ঘুষ-দুর্নীতির সিন্ডিকেট থেকে মুক্ত করার দাবিও দীর্ঘদিনের। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় রাস্তা উন্নয়নে ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ ও ভূমি অধিগ্রহণে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও টাকা ভাগাভাগির চিত্র উঠে এসেছে। প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণ খাতে ১৬১ কোটি টাকার বরাদ্দ পেতে ১৪৮ জন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি নানাবিধ হয়রানির শিকার হয়ে প্রতিকার চেয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও উচ্চ আদালতে অভিযোগ দায়ের করেছেন । সেখানে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সংশ্লিষ্ট ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তার যোগসাজশের তথ্য জানা যায়।

যেখানে প্রকল্প বাস্তবায়নের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নানা অজুহাত ও কালক্ষেপণের কারণে প্রকল্পের ব্যয় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে, সেখানে যাদের জমি ও ত্যাগের বিনিময়ে প্রকল্প ভিত্তি লাভ করে তারাই থাকে সবচেয়ে উপেক্ষিত। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায়, শুধুমাত্র একখন্ড জমি বা বসতবাড়ির মালিক অধিগ্রহণের কারণে নিঃস্ব ভূমিহীন হয়ে পড়েন। বাধ্যতামূলক অধিগ্রহণে প্রচলিত মূল্যের চেয়ে দুই থেকে তিনগুণ মূল্য পরিশোধের আইন থাকায় প্রকল্পে জমি হারানো ব্যক্তিরা অন্যত্র জমি কেনা ও বসতভিটা গড়ে তোলার সুযোগ নিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রাপ্য পরিশোধের বাধ্যবাধকতা কঠোরভাবে অনুসরণ করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও প্রকল্প পরিচালকদের। ব্যক্তিগত জমি অধিগ্রহণ করে সরকারি স্থাপনা নির্মাণের পর বছরের পর বছর ঘুরেও ক্ষতিগ্রস্তরা তাদের প্রাপ্য টাকা না পাওয়ার বেশ কিছু উদাহরণ আছে। গত মাসে জামালপুরে রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণে ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা পরিশোধের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম তার মন্ত্রণালয়ে জমি অধিগ্রহণের টাকা পেতে রাজনৈতিক ব্যক্তি ও প্রশাসনের সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য ও জমি মালিকদের হয়রানির শিকার হওয়ার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন। তবে রেলওয়ের উন্নয়ন প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্তরা সিন্ডিকেটের শিকার হননি। তারা খুব সহজেই প্রাপ্য টাকা বুঝে পেয়েছেন।
দেশে ডিজিটালাইজেশনের সুবাতাস বইছে। ই-গর্ভনেন্স, ই-কর্মাস ও এবং ই-টেন্ডারিং এর মধ্য দিয়ে গতানুগতিক সিন্ডিকেট ও অস্বচ্ছতার ধারা বদলে যেতে শুরু করেছে। সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণেও ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে দ্রুত গতিতে ঘরে বসেই প্রাপ্য টাকা প্রাপ্তির উদাহরণও ইতোমধ্যে দেখা গেছে।
গত বছর ফেব্রুয়ারিতে বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলায় অর্গানিক মহিষ প্রজনন কেন্দ্র সম্প্রসারণ প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা পরিশোধ সংক্রান্ত একটি অনলাইন সেবা কার্যক্রম উদ্বোধন করতে গিয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব স্মার্টফোনের মাধ্যমে ঘরে বসে নিজের ব্যাংক একাউন্টে টাকা পরিশোধের প্রক্রিয়া তুলে ধরেন।
নিজেদের জমি দিয়ে উন্নয়ন প্রকল্পে অবদান রাখা ব্যক্তিরা মাসের পর মাস জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ বিভিন্ন দফতরে ঘুরে হয়রান হওয়া এবং মোটা অংকের ঘুষ ও ভাগবাটোয়ারার বিনিময়ে প্রাপ্য টাকা পরিশোধের চলমান বাস্তবতা বন্ধ করতে হবে। প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের টাকা পরিশোধে এ ধরনের সিন্ডিকেটের তৎপরতা ও অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে অহেতুক কালক্ষেপণ ও জনদুর্ভোগ লাঘবে আরো কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন। বাগেরহাটের ফকিরহাটে সূচিত ডিজিটালাইজেশন ব্যবস্থার অনুকরণে সব জেলা ও উপজেলায় ভূমি ব্যবস্থাপনা এবং জমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা পরিশোধের স্থায়ী ও দুর্নীতিমুক্ত ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন