অথচ সচেতন অভিভাবকের এ বিষয়টি ভুলে যাওয়া উচিত নয়, পিতামাতা যখন সন্তানকে বেশি অপরাধ করতে দেখেন, তখন তার সংশোধনের জন্য প্রয়োজন মতো বোঝান। কাজ না হলে বকা দেন। তাতেও না হলে প্রহার করেন। আর যখন শতো চেষ্টার পরও কোনো কাজ না হয়, তখন বাবা-মা নিরাশ হয়ে সন্তানের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন-‘তোর যা ইচ্ছে তাই কর।’ আর অবিভাবকের এ আচরণ অতি স্বাভাবিক। কারণ আল্লহপ্রদত্ত নিয়ম একই রকম। যখন কোনো বান্দা ইমান আনে, তখন তিনি তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে তাকে পরীক্ষা করেন। যখন সে কোনো গোনাহ করে, তখন আল্লাহ তাকে সামান্য কষ্ট দেন, যেনো সে মন্দ কর্ম ছেড়ে আল্লাহর পথে ফিরে আসে। আর যে কাফের, আল্লাহতায়ালা তার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে দুনিয়ায় ভোগের সুযোগ দেন, যেনো সে বেশি করে গোনাহ কামিয়ে জাহান্নামের পথ বাছাই করে নেয়।
আজকাল অনেকে ভাবে, আল্লাহ তাকে ভালোবাসেন বলে কোনো কষ্টে ফেলছেন না। এ ধারণা নিতান্তই ভুল। তেমনি অনেক সময় শিক্ষকের সম্পর্কেও ভুল বুঝে থাকেন ছাত্র ও অবিভাবক। একজন শিক্ষক ছাত্রকে ততোক্ষণ পর্যন্ত সংশোধনের চেষ্টা করেন ও প্রয়োজনে অনোন্যপায় হয়ে প্রহার করেন, যতোক্ষণ তার প্রতি শিক্ষকের আস্থা অক্ষুণ্ণ থাকে। আর যখন শিক্ষক তার প্রতি ভরসা হারিয়ে ফেলেন, মনে করেন যে, তার পক্ষে তাকে সংশোধন করা সম্ভব নয়, তখন তিনি নিরাশ হয়ে তাকে আর প্রহারের চেষ্টাও করেন না। বরং তার প্রতি কষ্টে ও অবহেলায় নম্র ব্যবহার করেন। অথচ ছাত্র ও অবিভাবক ভাবতে থাকেন, শিক্ষক বোধয় সন্তুষ্টই আছেন। আসলে ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে। আর আল্লাহর শিক্ষা যার মাধ্যমে গ্রহণ করছে, যদি তিনি অসন্তুষ্ট থাকেন, তাহলে ঐ ছাত্রের কল্যাণ কামনা বৃথা।
যদি একজন বাবা তার এক সন্তানের ব্যপারে এতো বেশি চিন্তিত থাকেন, তাহলে যিনি এ ধরনের ১৫-২০ জন সন্তানকে পড়ান, তার অবস্থা কতো করুণ হবার কথা। তবুও তিনি এ সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত ও দীনে ইসলামের জন্য দিনরাত মেহনত করে যাচ্ছেন নিজের শতো কষ্টসত্তে¡ও। আর যিনি একজন সন্তানের ভবিষ্যত গড়ার চেষ্টা করবেন, তিনি যদি তাকে শাসনের এতোটুকু অধিকার না পান, তাহলে তিনি কিভাবে সে সন্তানের সংশোধনে সর্বচেষ্টা প্রয়োগ করবেন। তাই সন্তানের প্রতি শিক্ষকের সফল প্রচেষ্টা ও সন্তুষ্টি রক্ষার জন্য সচেতন অভিভাবকের কর্তব্য হলো, শিক্ষকের সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ রাখা। সন্তানের জন্য দোয়া চাওয়া। তাহলে তিনি তার সংশোনে আরও গুরুত্ব দেবেন। কারণ শিক্ষকদের সঙ্গে অভিভাবকগণের যোগাযোগ রাখা তার সন্তানের প্রতি শিক্ষকের মেহনতের আগ্রহ বৃদ্ধি করে।
অনেক সময় পিতামাতা সন্তানের অনাগ্রহসত্তে¡ও কোনো এক বিষয়ে তাকে শিক্ষিত হতে বাধ্য করেন। তখন ঐ বিষয়ে তার অনাগ্রহের কারণে পড়ালেখায় তার মনোযোগ থাকে না। এ কারণে সে ঐ বিষয়ে অভিজ্ঞ এবং যোগ্য হয়ে উঠতে পারে না। অবশেষে ভবিষ্যতে সে একজন ব্যর্থ ও দুর্বল ব্যক্তি হিসেবে বা অশিক্ষিত হিসেবেই গড়ে ওঠে। সন্তানকে কোনো বিষয়ে বাবা বড়ো করতে চান বা শিক্ষিত করতে চান, এ পরিকল্পনা থাকাটাই স্বাভাবিক, বরং থাকাটা জরুরিও বটে। যদি কারো সন্তানের ব্যাপারে তার পূর্ণ প্লান না থাকে, তাহলে তিনি নিজ দায়িত্বে অবহেলা করলেন। তবে এ জন্য সন্তানের ব্যাপারে বাবার একটি নির্ভুল ও স্বচ্ছ প্লান থাকা চাই। এ ক্ষেত্রে সন্তানের জন্য তিনি ধর্মীয় শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেবেন। কারণ মানুষের একমাত্র স্থায়ী শিক্ষা হলো, দীনি শিক্ষা, যা তার পরকালে কাজে আসবে। দুনিয়াবি শিক্ষা তার পরকালে কোনোই কাজে আসবে না। এজন্য সন্তানকে দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি সৃষ্টি করা এবং দীনের ব্যাপারে তার অসক্তি জাগানো উচিত। তাকে দিন ও দুনিয়ার পার্থক্য বোঝানোর জন্য আলোচনা করা এবং দীনি শিক্ষার প্রতি তার আগ্রহ সৃষ্টি করা উচিত। দুনিয়ার প্রতি অনাগ্রহ সৃষ্টি করবে, যেনো সেই শিক্ষা গ্রহণটা আনন্দ এবং মজার সঙ্গে হয়। তাহলে সে ঐ বিষয়ে একজন অভিজ্ঞ ও শিক্ষিত ব্যক্তি হয়ে উঠবে। আর যদি বাধ্য হয়ে কোনো মা-বাবা সন্তানকে দুনিয়াবি শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চান, তাহলে সন্তানকে বোঝানো উচিত। দীনি শিক্ষা একজন মানুষের আসল বিষয়, সে যেনো এই বিষয়টি খেয়ালে রাখে এবং সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়। তারপর তার দুনিয়াবি বিষয়কে। দুনিয়াবি শিক্ষায় শিক্ষিত হতে গিয়ে যেনো ভুলে না যায় এসব। তাহলে সন্তান যে শিক্ষাটাই শিখবে, সেটি সে বুঝে এবং নিজ আগ্রহ ও উৎসাহে শিখবে। আর সে ঐ বিষয়ে অত্যন্ত অভিজ্ঞ ও যোগ্য ব্যক্তি হয়ে ভবিষ্যতে উজ্জ্বল নক্ষত্র হবে।
৭. সন্তানদের মাঝে ইনসাফ করা। অনেক ঘরে এমন দেখা যায়, সন্তানদের মাঝে একজন হয়তো দেখতে বেশ সুন্দর অথবা বেশি ভালো অথবা বেশি শিক্ষিত অথবা পিতামাতার কথা মান্য করে বেশি; এ ধরনের বিভিন্ন কারণে তাকে একটু বেশি ভালোবাসা হয়। ভিন্ন নজরে দেখা হয়। অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। কেউ নাফরমান হলে তাকে ওয়ারিশ সম্পত্তি থেকে মাহরুম করা হ। এ সমস্ত কারণে সন্তানদের মাঝে বিভক্তি দেখা দেয়। তারা মা-বাবার অবাধ্য হয়ে যায়। সন্তানদের তরবিয়ত সঠিকভাবে পূর্ণ করার জন্য ইনসাফ করা অপরিহার্য। অন্যথায় তার হক আদায় হবে না। আল্লাহর কাছে হোক না আদায় করা সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন