বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

নিবন্ধ

‘লকডাউন নয়, চাই ব্যক্তি সচেতনতা’

মাশুক বিজেতা | প্রকাশের সময় : ২ এপ্রিল, ২০২১, ৩:৩৬ পিএম | আপডেট : ৩:৩৭ পিএম, ২ এপ্রিল, ২০২১

করোনায় গতকাল মৃত্যু ৫৯। রেকর্ড শনাক্ত ৬৪৬৯। এটিই এখন পর্যন্ত দেশে একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত। প্রতিদিন সংখ্যার রেকর্ড অতিক্রম করছে। আমরা বোধহয় ধরেই নিয়েছিলাম খুব খারাপ কিছু হবে না।

দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত আমরা শুধু ধাক্কা খেয়ে যাচ্ছি, আমাদের তো শিক্ষা হচ্ছে না । আমরা আর কবে শিখবো? কার কাছে শিখবো?

করোনা যাওয়ার আগেই করোনা চলে গেলো, এই বিজয় উদযাপন করতে গিয়ে আমরা নতুন শেকলে বন্দী হতে যাচ্ছি। আমরা ভুলে যাই, একদা জয়ের আগে মুশফিকুর রহিম নামক একজন ক্রিকেটার জয়ের আনন্দ করে আমাদের পরাজয়ের বিষাদে ডুবিয়েছিলো।

ইদানিং আমাদের সর্বনাশ করেছে ভ্যাকসিন নেওয়ার ছবি। ভ্যাকসিন যেই দেশে এলো, আমরা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ছুঁড়ে ফেলে দিলাম। যখন দেখলাম, ভ্যাকসিন নিচ্ছে আমার পরিচিতজন, তখন মাস্কও খুলে ফেললাম।

ফলে ভ্যাকসিনের বিজ্ঞাপনে আমাদের মুগ্ধ করে করোনা ফিরে এলো নতুন আয়োজনে। এখন আমরা আবার পিছিয়ে যাওয়ার দৌড়ে শামিল। আবার লকডাউনের তালা খোঁজা হচ্ছে।

রোজ তাই নতুন নতুন ভুল করেছি। নানা গোষ্ঠীর স্বার্থ দেখতে গিয়ে বইমেলা, কখনো পর্যটনকেন্দ্র, সিনেমা হল সব খোলা রেখেছি। আজ হয়েছে এক লাখেরও বেশি ছেলেমেয়ে নিয়ে মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষা। এভাবে নানাজনের নানা স্বার্থ দেখতে গেলে রোজ রোজ রেকর্ড তো হবেই।

একবার অন্তত ভাবুন ! ১৮ দফা নির্দেশনার সাথে এই পরীক্ষা পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। ১ লাখ ২৩ হাজার ছেলেমেয়ে ১৯ টা মাত্র কেন্দ্রে আসার কথা। ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হবে এটাই স্বাভাবিক। শুধু এক লাখ পরীক্ষার্থী নয়, বিভিন্ন হাসপাতাল বা কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে দায়িত্ব পালন করা ডাক্তারদের আসতে হবে কেন্দ্রে। শত শত ছেলেমেয়ের সঙ্গে থেকে তারা আবার যাবেন হাসপাতালে। জেনেশুনে এভাবে ঝুঁকি নেওয়ার মানে কি?

আচ্ছা, এই একটা বছরেও কী আমরা সমন্বিতভাবে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছি? নাকি ইচ্ছমতো সব সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে? অফিস-আদালত সব খোলা। গাড়িতে অর্ধেক সিট। ভাড়া তো বাড়াতে হবে। খুশি রাখতে হবে বাস কিংবা লঞ্চ মালিকদের। এভাবেই নানা গোষ্ঠীকে খুশি রাখতে নানা সিদ্ধান্ত। শুধু জনস্বাস্থ্যবিদদের কথা শোনার দরকার নেই। এক কথায় নির্দেশনা দিয়ে দিলেই হলো, কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব করতে হবে।

আর অন্যদের কী দোষ দেব? জাতি হিসেবে আমরা নিজেরাই তো অসচেতন। এই যে রোজ রোজ রেকর্ড হচ্ছে আপনি রাস্তায় নামেন দেখবেন মাস্ক নেই বেশিরভাগ মানুষের। নেই কোন সতর্কতা, দূরত্ব। জানি বলে লাভ নেই, তাও বলি, চলুন সতর্ক হই। সচেতন হই। এই যে দ্বিতীয় ওয়েভ চলছে তার থেকে তরুণ-বৃদ্ধ কেউই রেহাই পাচ্ছে না।

তাই প্রত্যেকে প্রত্যেকের কাছে হাতজোড়ে অনুরোধ-জরুরী প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হবার দরকার নেই। বের হলেই চলুন মাস্ক পরি। যেখানেই যাই দূরত্ব বজায় রাখি। পারলে কোভিডের টিকা নিয়ে নেই। তবে টিকা নেওয়ার পরেও মাস্ক পরতে হবে। হাত ধোয়ার প্রয়োজনীয়তা একবিন্দুও কমেনি।

তাই আবারও বলছি চলুন নিজেরা সতর্ক হই। মাস্ক পরি-দূরত্ব বজায় রাখি। আত্মীয় স্বজন সবাইকে সতর্ক করি। সবার সম্মিলিত সচেতনতা ও সতর্কতা ছাড়া এই মহামারি থেকে রক্ষা পাওয়া কঠিন। আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন। ভালো থাকুক আমাদের বাংলাদেশ। ভালো থাকুক গোটা পৃথিবী। ভালো থাকুক প্রতিটি মানুষ।

‘‌লকডাউন নয়, চাই ব্যক্তি সচেতনতা’-এটাই হোক স্লোগান।

লেখক-দ্বিতীয় সহকারী প্রকৌশলী, এক্স ক্যাডেট, ৪৭তম ব্যাচ, বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন