শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

যানজটে নাকাল নগরবাসী

প্রকাশের সময় : ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সায়ীদ আবদুল মালিক : যানজটে অচল ঢাকা। এক থেকে দেড় কিলোমিটার রাস্তা পার হতেই সময় লাগছে দুই থেকে তিন ঘণ্টারও বেশি। এতে জনজীবনে নেমে আসে চরম দুর্ভোগ। ঈদুল আজহার ছয় দিনের লম্বা ছুটি শুরু হওয়ার আগের কর্মদিবস এবং গ্রামমুখী যাত্রীর চাপ ও কোরবানির অস্থায়ী হাটে ¯্রােতধারায় পশু আসার কারণে সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়, যা দুপুরের পরে চরম আকার ধারণ করে। দিনভর রাজধানীর প্রায় সব রাস্তায় যানবাহনের লম্বা লাইন দেখা গেছে। সকালে বিভিন্ন অফিস-আদালতগামী এবং বিকালে অফিস ফেরত মানুষসহ নানা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হয়েই নগরবাসীকে পড়তে হয়েছে চরম দুর্ভোগে। সময়মতো যানবাহন পাওয়া যায়নি। মাঝেমধ্যে দু-একটি পাওয়া গেলেও দিতে হয়েছে অতিরিক্ত ভাড়া। বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটেই অনেককে যেতে হয়েছে নিজ নিজ গন্তব্যে।
বিশেষ করে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের কাজ ধীর গতিতে চলায় ওই পথে চলাচল করা যানবাহনকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়। নগরবাসীর এ ভোগন্তির শেষ কোথায় কেউ জানে না। গাবতলী, এয়ারপোর্ট রোড দিয়ে ঢাকায় প্রবেশের সময় তীব্র যানজটে পড়ে হাজার হাজার যানবাহন। মহাখালী, মগবাজার, মালিবাগ এলাকায়ও একই অবস্থা। রামপুরা, কাকরাইল, বাড্ডা লিংক রোড, বনানীসহ বিভিন্ন সড়কের প্রতিটি পয়েন্টে ছিলো তীব্র যানজট। গাড়ির সারিও ছিল দীর্ঘ।
ভুক্তভোগী পথচারীরা বলছেন, বুধবার সকাল থেকেই যানজট ছিল। তবে সকাল সোয়া ১০টার পর থেকে এ জট আরও দীর্ঘ হতে থাকে, যা বিকেলর দিকে আরও তীব্র আকার ধারণ করে।
বাড্ডা-নতুন বাজার সড়কে কথা হয় মামুন নামের এক পথচারীর সাথে। তিনি বলেন, সকালে হাতিরঝিল এলাকা থেকে বের হয়ে প্রতিটি রাস্তাই তীব্র যানজট দেখতে পাই। কুড়িল বিশ্ব রোড থেকে নতুন বাজার, নর্দা হয়ে বাড্ডা পর্যন্ত রাস্তায় গাড়ি চলাচল প্রায় স্থবির হয়ে আছে।
একই অবস্থা রামপুরা রোডেরও। দীর্ঘক্ষণ গাড়ি থেমে থাকতে দেখা যায়। শাহবাগ মোড়ে তো যেন গাড়ি চলছেই না। পোস্তগালা থেকে উত্তরার দিয়াবাড়িগামী রাইদা পরিবহনের যাত্রী আবদুল আলী বলেন, রামপুরা ব্রিজ থেকে নতুন বাজার পর্যন্ত আসতেই লেগেছে এক ঘণ্টা ১০ মিনিট সময়।
কাকরাইল থেকে ধানমন্ডি এলাকায় যেতে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা লেগে যায়। কাকরাইল থেকে ধানমন্ডি এলাকায় যেতে অন্যান্য দিন ২০ থেকে ২৫ মিনিট লাগলেও জটের কারণে গতকাল চারগুণ সময় লাগছে। শুধু এ সড়কেই নয়, যানজট ছিল মিরপুর ১, ২, ১০ নম্বর কালশী এলাকাতেও গাড়ি চলছে ধীরগতিতে। মিরপুর-১ নম্বর থেকে কুড়িল বিশ্বরোডে আসতেও প্রতিটি গাড়িকে জটে পড়তে হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে বাংলামোটর, ইস্কাটনের সরু রাস্তায় মগবাজার, মালিবাগ অভিমুখী অসংখ্য গাড়ির জটলা। যানবাহনের সারি চলে যাচ্ছে নিউ ইস্কাটন পার হয়ে বাংলামোটরের কাছাকাছি। অন্যদিকে সাতরাস্তার মোড় হয়ে যে সমস্ত যানবাহন চলাচল করছে সেগুলো তো রাস্তায় ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। তাদের যেন কোনো তাড়া নেই। এভাবেই কেটে গেল আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা। গাড়ির চালক ও যাত্রীদের বিরক্তি তখন চরম সীমায়। অনেকেই নেমে এলেন রাস্তায়। সিগন্যাল না ছাড়ায় কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশকে গালাগাল করছেন ইচ্ছেমতো। দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যের অবস্থা তখন গলদঘর্ম।
মগবাজার-মৌচাক এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফ্লাইওভারের কাজ চলছে বহুদিন হলো। কিন্তু বিশাল এই প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই মগবাজার-মৌচাক-মালিবাগ সড়ক এখন যানজটের অপর নাম। নিউ ইস্কাটন সড়ক থেকে ফ্লাইওভারের একাংশের শুরু। মগবাজার চৌরাস্তা ও শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক হয়ে ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ চলছে মৌচাক-মালিবাগ পর্যন্ত। কিন্তু রাস্তা এতটাই সরু হয়ে গেছে যে, একটির বেশি গণপরিবহন এই সড়ক ধরে যেতে পারে না। যেগুলো যায় সেগুলোর চালককে অনেক কায়দা করে সড়ক পার হতে হয়। আর একটু বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। কাদাপানি মাখিয়ে ইস্কাটন-মগবাজার সড়ক পার হওয়াই কঠিন। চিড়িয়াখানা-কমলাপুর রুটের স্বকল্প পরিবহনের চালক আমিন মিয়া বলেন, এই রাস্তা এতটাই সরু হয়ে গেছে যে, গাড়ি আস্তে চালিয়ে অনেক কষ্টে এই সড়কে আসা-যাওয়া করতে হয়। আর যানজট তো আছেই। এমনও হয়েছে মালিবাগ থেকে মগবাজার ওয়ারলেস গেট আসতেই এক থেকে দেড় ঘণ্টা চলে যায়। যানজটের এ যন্ত্রণা বলে বোঝানো যাবে না।
নগরীর ব্যস্ত সড়কগুলোর মতোই যানজটে স্থবির হয়ে পড়েছিল জনজীবনও। যাত্রাবাড়ি-টঙ্গী রুটে চলাচলকারী ছালছাবিল পরিবহনের যাত্রী একটি বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন অলি জানান, আধা ঘণ্টার পথ যদি ৩ ঘণ্টা ব্যয় হয়, তাহলে মানুষ সারাদিন কাজকর্ম করবে কীভাবে? সাতরাস্তার মোড় দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আবুল হোসেন সরদার। তিনি বলেন, এদেশ চলাচলের অযোগ্য হয়ে গেছে। যাওয়ার পথে ১৬০ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে মতিঝিল গিয়েছি। এখন ফেরার সময় যানজটের কারণে গাড়িতে উঠে রাস্তায় বসে থাকতে আর ইচ্ছা হলো না। তাই বাধ্য হয়ে দিলকুশা থেকে পায়ে হেঁটে বনানী যাচ্ছি। এই ভোগান্তি শুধু আবুল হোসেন সরদারের নয়।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতকারী অধিকাংশ লোকজনকেই এই ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দিয়ে হেঁটে ধানমন্ডি যাচ্ছিলেন মতিঝিলের একটি বেসরকারি অফিসের কর্মকর্তা মোহাম্মদ এয়াছিন হাওলাদার। তিনি বলেন, দিলকুশা থেকে বাসে উঠে গুলিস্তান আসতে সময় লেগেছে এক ঘণ্টা। অথচ এই পথ হেঁটে আসতে সময় লাগে ১০ মিনিট। তাই সময় বাঁচাতে হেঁটেই যাচ্ছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন