বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

তরমুজের উৎপাদন বাড়লেও দাম পাচ্ছেন না কৃষক

দেশে মোট উৎপাদনের ৬৫ ভাগই দক্ষিণাঞ্চলে

নাছিম উল আলম : | প্রকাশের সময় : ৪ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০১ এএম

সারাদেশের সাথে দক্ষিণাঞ্চলেও তরমুজের আবাদ ও উৎপাদন আশাব্যঞ্জক হারে বাড়লেও কৃষকরা ভালো দাম পাচ্ছেন না। এবার দেশে মোট উৎপাদিত প্রায় ৬৫ ভাগ তরমুজই দক্ষিণাঞ্চলে হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে এক কেজি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১০ টাকায়। অথচ কয়েক হাত ঘুরে সে তরমুজ ভোক্তাদের হাতে পৌঁছায় ৪০-৪৫ টাকা কেজি দরে। বাজারে ইতোমধ্যে তরমুজ বিক্রি হতে শুরু করেছে। আবহাওয়া অনুক‚লে থাকায় এখন পর্যন্ত উৎপাদনও ভালো। তরমুজ খুব দ্রুত আমাদের দেশে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। নদ-নদীবহুল দক্ষিণাঞ্চলের নোনা পানিমুক্ত চরাঞ্চলের পলি মাটিতেও তরমুজের ভালো ফলন হচ্ছে। ফলে ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর ও বরিশালের বিভিন্ন নদ-নদীর চরাঞ্চলে তরমুজের ভালো আবাদ ও উৎপাদন হচ্ছে। মূলত ৫.৫ থেকে ৭.০ পিএইচ মাত্রার জমি তরমুজের জন্য উপযোগী। তবে কোন অবস্থাতেই অতিরিক্ত লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে না। খরা প্রতিরোধক ফসল তরমুজ অপেক্ষাকৃত শুষ্ক পরিবেশে বড় হয়ে ওঠে।

চলতি মৌসুমে দেশে প্রায় ৪২ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে বরিশাল কৃষি অঞ্চলেই প্রায় ২৫ হাজার হেক্টরে এ ফলের আবাদ হয়েছে বলে ডিএই জানিয়েছে। অধিদফতরের মতে, গত বছর দেশে ৩৮ হজার ৮২৪ হেক্টর জমিতে প্রায় হাজার প্রায় ১৬ লাখ টন তরমুজ উৎপাদন হয়েছিল। বরিশাল কৃষি অঞ্চলে চলতি মৌসুমে প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে এবার প্রায় ১১ লাখ টন তরমুজ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। আবাদ গত বছরের প্রায় সমান হলেও এবার দক্ষিণাঞ্চলে উৎপাদন কিছুটা বেশি হবে বলে আশাবাদী কৃষকরা। দেশে সুদূর অতীত থেকে পতেঙ্গা ও গোয়ালন্দ জাতের কালচে এবং নীলাভ গোলাকৃতির তরমুজের আবাদ হত। এসব ফল ওজনে ৮-১০ কেজি হলেও মিষ্টি কিছুটা কম ছিল। বর্তমানে আমাদের দেশে ইউরোপীয়, প্রাচ্য ও গ্রীষ্মমন্ডলীয় ‘টপইল্ড, গ্লোরী, কঙ্গো, চার্লসটন-গ্রে, ইমিরিয়েল, জুবলী, সুপার ডেলিকেট, সুপার বেবী, সুইট ফেস্টিবল ও ফ্লোরিডা জয়েন্ট’ নামের একাধিক উন্নত জাতের তরমুজের আবাদ হচ্ছে।
কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি উন্নত ও উচ্চ ফলনশীল তরমুজের জাত উদ্ভাবন করেছেন। দক্ষিণাঞ্চলে বর্তমানে তরমুজের হেক্টর প্রতি ফলন ৪২ টনের মত। কিন্তু বারি নির্দেশিত সুষম সার প্রয়োগ ও আবাদ কৌশল অনুসরণ করলে এর উৎপাদন সহজেই ৫০ টনে উন্নীত করা সম্ভব। কৃষি ও পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, তরমুজের খাদ্যগুন খুব একটা উন্নত না হলেও এতে যথেষ্ট পরিমাণ ভিটামিন-এ, রিবোফ্লাভিন, থায়ামিন ও পেপটিন রয়েছে। তরমুজের রস রক্তচাপ স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখতে সহায়তা করে। উন্নত বিশ্বে তরমুজ দিয়ে নানা ধরনের সরবত, জ্যাম, সিরাপ, গুড় ছাড়াও অ্যালকোহল পর্যন্ত তৈরি হচ্ছে।
তবে আমাদের দেশে তরমুজ প্রক্রিয়াজাত করে কোন খাদ্যসামগ্রী প্রস্তুতের উদ্যোগ নেই। বরিশালে দীর্ঘদিন যাবৎ একটি কৃষি ও মৎস্যভিত্তিক রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা প্রতিষ্ঠার দাবি করে আসছে সাধারণ মানুষ। ইলিশ মাছ, পেয়ারা, তরমুজসহ অন্যান্য ফল ও ফসলের জন্য একটি রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা প্রতিষ্ঠিত হলে তা এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন