বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

নাগরিকের চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আরোপ অসাংবিধানিক

দুদকের নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত রিটের আদেশে হাইকোর্ট

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৪ এপ্রিল, ২০২১, ৪:৫৫ পিএম

ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান বিশেষের খেয়াল-খুশি মতো নাগরিকের চলাফেরার অধিকার নিয়ন্ত্রণ অসাংবিধানিক। এ মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। আজ (রোববার) এ সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ আদেশ প্রকাশ হয়। বিদেশ যাত্রায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)র নিষেধাজ্ঞা চ্যালেঞ্জ করে দায়েরকৃত রিটের শুনানি শেষে বিচারপতি এম.ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ দেন। ১২ পৃষ্ঠার এ আদেশ প্রকাশের বিষয়টি জানিয়েছেন রিটকারী আতাউর রহমান ওরফে সুইডেন আতাউর রহমানের আইনজীবী মুন্সি মনিরুজ্জামান।
হাইকোর্টের আদেশে বলা হয়েছে, আমাদের বলতে দ্বিধা নেই যে, নাগরিকের চলাফেরার সাংবিধানিক অধিকার কোনো ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষের খেয়াল-খুশি অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণ বা বারিত করা (বিরত রাখা) অসাংবিধানিক। এটা বাস্তবতা যে, দুর্নীতি কিংবা মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত মামলাগুলো অনুসন্ধান বা তদন্ত কিছুটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। যদিও বা সংশ্লিষ্ট বিধিতে অনুসন্ধান বা তদন্তের সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয়া আছে। আমাদের বিচারিক অভিজ্ঞতা বলে যে, কমিশন কিংবা অন্যান্য তদন্তকারী সংস্থা/কর্তৃপক্ষ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অনুসন্ধান বা তদন্ত কার্যক্রম আইন বা বিধিতে উল্লেখিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে পারে না। এটাও বাস্তবতা যে, অনুসন্ধান বা তদন্ত পর্যায়ে সন্দেহভাজন বা অভিযুক্ত অনেকে বিভিন্ন অজুহাতে দেশ ত্যাগ করছে। পরে তাদের আর আইন-আদালতের সম্মুখিন করা সম্ভব হচ্ছে না। এসব বাস্তবতাকে আমলে নিয়ে দুর্নীতি বা মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত মামলায় কিংবা অন্যান্য মামলার ক্ষেত্রেও অনুসন্ধান বা তদন্ত পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তিকে দেশ ত্যাগে বারিত বা তার চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রয়োজনীয় আইন বা বিধি প্রণয়ন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে, যা সময়ের চাহিদাও বটে। সুনির্দিষ্ট আইন বা বিধির অনুপস্থিতিতে কোনো তদন্ত সংস্থার দাপ্তরিক আদেশে এ ধরণের পদক্ষেপ বা কার্যধারা গ্রহণ সংবিধান পরিপন্থি।’
আদেশে আদালত আরও বলেন, ‘আমাদের সুস্পষ্ট অভিমত এই যে, অনুসন্ধান বা তদন্ত পর্যায়ে সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে দেশ ত্যাগে বারিত করার প্রয়োজন হলে এ সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট আইন বা বিধি প্রণয়ন এখন সময়ের বাস্তবতা। এবং ঐ আইন বা বিধিতে সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পাশাপাশি দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশ ত্যাগে বারিত করার কারণ জানানো,গৃহিত পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির বক্তব্য/আপত্তি প্রদানের সুযোগ রাখতে হবে। অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য কারও ওপর এ ধরণের বিধি নিষেধ আরোপ সংবিধান ও মানবতাবিরোধী পদক্ষেপ। তাই এর সময়সীমা নির্দিষ্ট করাও ন্যায়সঙ্গত হবে।’
আদালত বলেন, ‘অনুসন্ধান বা তদন্ত পর্যায়ে যেকোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজন কোনো ব্যক্তিকে দেশ ত্যাগে বারিত করার জন্য অবিলম্বে প্রয়োজনীয় আইন বা বিধি প্রণয়ন করা। যতক্ষণ পর্যন্ত এই ধরণের আইন বা বিধি প্রণয়ন করা না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত অন্তবর্তী ব্যবস্থা হিসেবে এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতের কাছে এ ধরণের নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রার্থনা করা এবং আদালতের অনুমতি গ্রহণ করা।’
এর আগে গত ১৬ মার্চ দুর্নীতি মামলার আসামি বা সন্দেহভাজন কোনো ব্যক্তির বিদেশ যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার বিষয়ে দুদক নয়, সিদ্ধান্ত দেবেন বিশেষ জজ আদালত-এমন আদেশ দেন হাইকোর্ট।
প্রসঙ্গত: ২০২০ সালের ২৪ আগস্ট আতাউর রহমানের সম্পদের তথ্য চেয়ে নোটিশ দেয় দুদক। নোটিশের পর ২২ অক্টোবর তিনি তার সম্পদের তথ্য দুদকে দাখিল করেন। দুদক সম্পদের তথ্য পেয়ে অনুসন্ধানে নামে। এই অনুসন্ধানের সময় গতবছর ২০ ডিসেম্বর আতাউর রহমানের বিদেশ যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে পুলিশের বিশেষ শাখায় (এসবি) চিঠি দেয় দুদক। এ প্রেক্ষাপটে ওই চিঠির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন নরসিংদীর মো. আতাউর রহমান ওরফে সুইডেন আতাউর। আবেদনের ওপর শুনানি শেষে হাইকোর্ট গত ৪ ফেব্রুয়ারি রুল জারি করেন। রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ১৬ মার্চ উপরোক্ত আদেশ দেন আদালত।
আতাউর রহমানের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মুন্সি মনিরুজ্জামান। সরকারপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পি। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট একেএম ফজলুল হক।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন