করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউনের মধ্যেও সচল থাকছে দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি চট্টগ্রাম বন্দর। স্বাভাবিক সময়ের মত তিন শিফটে পুরোদমে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। বন্দর সংশ্লিষ্ট কাস্টমস, শিপিং, বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোসহ সব প্রতিষ্ঠানের কাজও চলবে যথারীতি। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কন্টেইনার ও পণ্য পরিবহন অব্যাহত থাকবে। দেশের সর্ববৃহৎ ইপিজেড চট্টগ্রাম ইপিজেড, কর্ণফুলী ইপিজেড, বেসরকারি কোরিয়ান ইপিজেড ছাড়াও বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের শিল্পাঞ্চলে কল-কারখানার চাকা সচল থাকছে লকডাউনে। আমদানি-রফতানি পণ্য পরিবহনের পাশাপাশি কল-কারখানার কাঁচামাল এবং উৎপাদিত পণ্য পরিবহন ও সরবরাহ ব্যবস্থা পুরোদমেই সচল থাকছে।
এদিকে লকডাউন নিশ্চিত করে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে মাঠে নেমেছে প্রশাসন। সরকারের বেঁধে দেয়া নির্দেশনা তথা স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে নগরীতে ২০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত থাকবে। জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশন ও পুলিশ প্রশাসনও মাঠে সক্রিয় রয়েছে। শনিবার লকডাউনের ঘোষণার আসার পর থেকেই দেশের প্রধান বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে কর্মব্যস্ততা বেড়ে যায়। গতকাল রোববার লকডাউন শুরুর আগমুহূর্তে যানবাহনের চাপে প্রায় অচল ছিল পুরোনগরী। প্রধান প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে নগরীর অলিগলিতে বিস্তৃত হয় যানজট। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত যানজটে স্থবির ছিল নগরী।
সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকে ছুটে গেছেন গ্রামে। এতে করে নগরীর বাস টার্মিনালগুলোতে ছিল উপচেপড়া ভিড়। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে বাজারে হুমড়ি খেয়ে পড়ে নগরবাসী। হাটবাজার, বাস টার্মিনাল, রেল স্টেশন- সর্বত্রই মানুষের হুড়োহুড়িতে ভেঙ্গে পড়ে স্বাস্থ্যবিধি। অনেকে চাহিদার অতিরিক্ত পণ্য কিনে মজুদ গড়ে তোলেন। আর তাতে হঠাৎ বাজারে কিছু কিছু পণ্যের দাম বেড়ে যায়। সামনে মাহে রমজান। অনেকে রমজানের বাজারও সেরে নিয়েছেন। যদিও প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কাঁচাবাজার খোলা থাকবে।
গত বছরের লকডাউনের মত এবারও পুরোদমে সচল চট্টগ্রাম বন্দর। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক ইনকিলাবকে বলেন, লকডাউনের আওতামুক্ত চট্টগ্রাম বন্দর। স্বাভাবিক সময়ের মত তিন শিফটে পুরোদমে বন্দরে পণ্য হ্যান্ডলিং থেকে শুরু করে যাবতীয় কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। যখন সেখানে যত সংখ্যক জনবলের প্রয়োজন সেখানে জনবল নিয়োগ করা হবে। বন্দরের সাথে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে তাদের কার্যক্রম সচল রাখার আহŸান জানান তিনি। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কন্টেইনার এবং আমদানি-রফতানি পণ্য পরিবহন যথারীতি চলবে। পুলিশ প্রশাসনকে এ ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিতে বন্দরের পক্ষ থেকে আহŸান জানানো হয়েছে।
যথারীতি সচল থাকবে কাস্টম হাউসের কার্যক্রম। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা জানান, স্বাভাবিক সময়ের মত কাস্টম হাউসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিস করবেন। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে। শিপিং সংশ্লিষ্টরা জানান, আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় তাদের অফিসে স্বাভাবিক কার্যক্রম চলবে। কেউ আবার হোম অফিস করবেন। আমদানি-রফতানি, পণ্য পরিবহন সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোও লকডাউনের আওতামুক্ত থাকবে। চট্টগ্রাম ইপিজেড ও কর্ণফুলী ইপিজেডের কর্মকর্তারা জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে কল-কারখানা খোলা থাকবে। কারখানা কর্তৃপক্ষকে নিজস্ব পরিবহনে শ্রমিক আনা-নেয়ার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। কারখানা এলাকার গণপরিবহন সীমিত আকারে চালু থাকবে। উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বিজিএমই’র কর্মকর্তারা জানান, তৈরি পোশাক কারখানায় উৎপাদন অব্যাহত থাকবে। নগরীর বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে কল-কারখানার পাশাপাশি চলমান উন্নয়ন কার্যক্রমও অব্যাহত থাকবে।
অপরদিকে লকডাউনে সরকারের বিভিন্ন নির্দেশনা বাস্তবায়নে কঠোর অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন। গতকাল থেকে ২০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের ২০টি টিম এবং একইসাথে বিআরটিএর তিনটি টিম মাঠে নেমেছে। নগরীর ১৬টি থানা পুলিশ সংশ্লিষ্ট থানা এলাকায় লকডাউন বাস্তবায়নে কাজ করবে। চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার এবিএম আজাদ গতকাল সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে মাস্ক ব্যবহারে উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এ সময় চট্টগ্রামের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান ও পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক উপস্থিত ছিলেন। পরে জেলা প্রশাসক নিজে নগরীর কাজির দেউড়ি বাজারে মাস্ক বিতরণ করেন।
এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) ড. বদিউল আলম, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশরাফুল আলমসহ জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান ইনকিলাবকে জানান, সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রশাসন সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে রয়েছে। চট্টগ্রামে গত চার-পাঁচদিনে সংক্রমণের হার অনেক বেড়ে গেছে। আক্রান্তদের নব্বই শতাংশই মহানগরীর বাসিন্দা। সেজন্য ২০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে মহানগরীকে ২০টি জোনে ভাগ করে দেয়া হয়েছে। তারা সকাল থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত এবং বিকেল চারটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের যেকোনও জেলার চেয়ে এমনকি ঢাকা শহরের চেয়েও চট্টগ্রাম নগরীতে অধিক সংখ্যক মানুষ মাস্ক ব্যবহার করছেন। জনগণ সচেতন হলে করোনা সংক্রমণ কমে আসবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন