শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ভারতের সুপ্রিম কোর্টের রায় সরকারের সমালোচনা রাষ্ট্রদ্রোহ নয়

প্রকাশের সময় : ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : দেশদ্রোহের মামলা ঠোকার ক্ষেত্রে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট দেশটির পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটদের সতর্ক করে দিলেন। গত সোমবার দেশের সর্বোচ্চ আদালত জানিয়ে দিয়েছেন, সরকারের কড়া সমালোচনা করার অর্থ সরকার অবমাননা নয়, দেশদ্রোহ তো নয়ই।
দেশদ্রোহ কী, সেই সংজ্ঞাও সুপ্রিম কোর্ট ঠিক করে দিয়েছেন। বিচারপতি দীপক মিশ্র ও বিচারপতি উদয় ইউ ললিত জানিয়েছেন, যে আচরণ মানুষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়ায়, আইনশৃঙ্খলার ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করে, একমাত্র সেসব ক্ষেত্রেই দেশদ্রোহের অভিযোগ আনা যেতে পারে। সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন, কেউ সরকারের কড়া সমালোচনা করতেই পারেন। এজন্য তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্র মানহানির মামলাও করতে পারে না, দেশদ্রোহ তো দূরাস্ত। দুই বিচারপতি এ বিষয়ে ১৯৬২ সালের কেদারনাথ সিং বনাম বিহার রাজ্যের মামলার রায়ের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ওই রায়ে সুপ্রিম কোর্ট যে ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, সেটাই দেশদ্রোহের সংজ্ঞা। সব রাজ্যের পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটদের সেই রায় অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতে হবে। তারা বলেন, ইদানীং দেশের সর্বত্র মুড়ি-মুড়কির মতো দেশদ্রোহের মামলা ঠোকা হচ্ছে। সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ। এনজিও কমন কজ এবং এস পি উদয়কুমারের (পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরোধিতা করায় তার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের মামলা হয়) হয়ে তিনি আবেদনে জানান, সারা দেশেই ইদানীং দেশদ্রোহের অভিযোগে মামলা ঠোকার বহর ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। সরকারের সমালোচনা করলেই দেশদ্রোহের অভিযোগ করা হচ্ছে। আইনের অপব্যবহার হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কেদারনাথ সিং মামলার রায় মানা হচ্ছে না। ১৯৬২ সালে ওই মামলার রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছিলেন, দেশদ্রোহ-সংক্রান্ত ১২৪ক ধারার ব্যবহার একমাত্র তখনই করা যাবে যদি কেউ কাউকে সহিংস হতে প্ররোচিত করে অথবা সহিংস হওয়ার জন্য উত্তেজনা ছড়ায়। তারা বলেন, ’৬২ সালে ওই মামলায় সুপ্রিম কোর্টের সংবিধান বেঞ্চ যে রায় দিয়েছিলেন, সেটাই একমাত্র বিবেচ্য।
কয়েক বছর ধরে দেশদ্রোহের মামলা হওয়ার সংখ্যা বেড়ে গেছে। দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসমাবেশে ‘আজাদি’ স্লোগানের পর বাম ছাত্রনেতা কানহাইয়াসহ তিনজনের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের অভিযোগে মামলা হয়। সরকারের বিরুদ্ধে কার্টুন আঁকার ‘অপরাধেও’ এই মামলা হয়েছে। পরমাণু বিদ্যুতের বিরোধিতা, মানবাধিকার লঙ্ঘন, সরকারের সমালোচনা করে লেখা অথবা নিছক বিক্ষোভ সমাবেশ করার ঘটনায় বহু রাজ্যে এই ধারার অপপ্রয়োগ করা হচ্ছে। সম্প্রতি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধেও এই অভিযোগে মামলা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, কাশ্মীর নিয়ে তারা এক বিতর্ক সভার আয়োজন করেছিল। কর্ণাটকের রাজনীতিবিদ রামিয়ার বিরুদ্ধেও এই অভিযোগ করা হয়েছে।
ভারতীয় জাতীয় ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৪ সালে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে ৪৭ জনের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের মামলা হয়। এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী মোট ৫৮টি মামলার মধ্যে সরকার এ পর্যন্ত মাত্র একজনকে অভিযুক্ত করতে পেরেছে।
যার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের মামলা হয়, তাকে পাসপোর্ট জমা দিতে হয়। তিনি কোনো সরকারি কাজ করতে পারেন না। যতবার আদালত ডাকবে, ততবারই হাজিরা দিতে হবে। তাকে মামলা চালানোর খরচও দিতে হবে। বছরের পর বছর মামলা চলে। অতএব, দুর্দশা অন্তহীন। সূত্র : ওয়েবসাইট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন